– ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী
এক.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। যিনি মানব জাতির হেদায়ত প্রদানের জন্য নবুয়ত ও রেসালতের ধারা প্রদানের পাশাপাশি বেলায়তের বিভিন্ন ধারা বা মসরব (পন্থা) নাজিল করেছেন। মাইজভান্ডারীয়া ত্বরিকার বেলায়ত ধারার নাম ‘‘বেলায়তে মোতলাকায়ে আহমদী”। এই বেলায়ত ধারার বীজ রোপন করা হয়েছে সর্ব প্রথম উপমহাদেশের পাক জমি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে।
ক. এই বেলায়ত ধারার নাম সর্ব প্রথম উচ্চারিত হয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর পাক জবানে ১২৯৮ হিজরী সনে যখন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এই ত্বরিকার বেশারত (সুসংবাদ) হযরত শাহ্সুফি মাওলানা শেখ অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (কঃ) কে স্বপ্নের মাধ্যমে প্রদান করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) তাঁকে [হযরত শাহ্ চরণদ্বীপিকে] ইরশাদ করেন, ‘‘প্রিয় বৎস! তোমার জন্য আমি মনোরম ছুরত পাঠিয়েছি। শীঘ্রই গিয়ে শিকার কর। তোমার তীরে (প্রেমে) বিদ্ধ হবে, মাশুকের (ছুরত ওয়ালার) মিলন হবে। আমার হাবীব মোজাদ্দেদে জমান গাউছে আযম বেলায়তে মোতলাকায়ে আহমদী (যুগ প্রবর্তক) এর প্রথম দ্বার স্বরূপ (খলিফায়ে আযম রূপে) কর্মসূচী (বেলায়তের দায়িত্ব) গ্রহণ কর। (জনাব কুতুবুল আলম হযরত মাওলানা শাহ্সুফি শেখ অছিয়র রহমান (কঃ) চরণদ্বীপির জীবনী ও কারামত” প্রকাশকাল ১৯৭৪ইং, পৃষ্ঠা-৪৯)
এ উদ্ধৃতি হতে জানা গেল যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর একজন হাবীব (বন্ধু) পৃথিবীতে তশরীফ আনবেন, যিনি জমানার মোজাদ্দেদ হবেন (তরিকত ধারায়), গাউসুল আযম হবেন। তাঁর খলিফায়ে আযম রূপে (প্রথম দ্বারস্বরূপ) হযরত শাহ্সুফি মাওলানা শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (কঃ) চরণদ্বীপিকে পৃথিবীর বুকে মনোনীত করা হয়েছে। যার প্রমাণ স্বরূপ তাঁর জন্য হযরত মহানবী (দঃ) কর্তৃক একটি মনোরম ছুরত পাঠানো হয়েছে। সুবহানাল্লাহ্! খ. স্বপ্নের ব্যাখ্যাকার কুতুবে জমান হযরত শাহ্সুফি সফিউল্লাহ্ (কঃ)। তিনি বলেন, ‘‘আপনার স্বপ্ন সত্য! সত্যই মোবারক। হযরত রাসুলে করিম (দঃ) এর মনোরম ছুরত আকৃতি অবয়বতার সাদৃশ্য প্রতীক চট্টগ্রাম জিলার মাইজভান্ডার গ্রামের হযরত মাওলানা শাহ্সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (কঃ) ব্যতীত অন্য কেহ নয়। মাহ্বুবে ছোবহানী পীরানে পীর দস্তগীর হযরত গাউসুল আযম মহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী (কঃ) এর সমশ্রেণীর অলিউল্লাহ্ ‘আহমদ উল্লাহ’ নামধারী বাদশাহ, ছয়শত বছর পূর্বেও তিনি বিদ্যমান ছিলেন। সেই সময়ের অলি আল্লাহগণের নিকট তিনি সম্মানিত ছিলেন (ছুরত ধারণকৃত অবস্থায়)। সকলেই তাঁকে চিনে। তিনি মিলনদ্বার উদ্ঘাটনে এখন আত্ম প্রকাশ করবেন। তিনি আপনার অপেক্ষায় আছেন; আপনি শীঘ্রই তাঁর খেদমতে হাজির হউন। তিনি বেলায়তে মোতলকায়ে আহমদীর যুগ প্রবর্তক হাদী (গাউসুল আযম), আপনি তাঁর প্রথম দ্বার স্বরূপ বা খলিফায়ে আজমের পদমর্যাদা লাভ করবেন। (জীবনী ও কারামত, প্রকাশ ১৯৭৪ইং, পৃষ্ঠা-৫০-৫১)।
এ উদ্ধৃতি হতে বুঝা গেল, হযরত গাউসুল আযম মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) হলেন পীরানে পীর দস্তগীর গাউসুল আযম মহিউদ্দীন জিলানীর (কঃ) সমশ্রেণী গোত্রীয় অলি উল্লাহ্। তিনি পীরানে পীরের যুগেও সকল অলি আল্লাহ গণের নিকট সম্মানিত ছিলেন। এখন তাঁর (ছয়শত বছর পর) আত্ম প্রকাশের সময় হয়েছে। আপনার ইশ্ক ও মোহাব্বতের সংঘর্ষে তিনি আত্ম প্রকাশ করবেন। তিনি আপনার অপেক্ষায় আছেন। তাঁর বেলায়ত মশরবের নাম বেলায়তে মোতলাকায়ে আহমদী। আপনি তাঁর প্রথম দ্বার বা খলিফায়ে আযম।
গ. হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ) সান্নিধ্যে গমন:
কলিকাতাস্থ কুতুবে জমান হযরত শাহ্সুফি মাওলানা ছফী উল্লাহ ছাহেব (রাঃ) হতে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি তাঁর পীর সাহেব হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) নির্দেশনা স্বপ্নে প্রাপ্ত হন। তিনি বলেন, ‘‘বৎস! আমি তোমার অপেক্ষায় আছি। আমার প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের সঙ্গে মিশে একাত্ম হয়ে যাও। নিদ্রা ত্যাগ কর। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করাই সকল ইবাদতের মূল। বাংলাদেশে তৌহিদের পতাকা নিয়ে খাড়া হয়ে যাও। আমার প্রেম ভান্ডারের অমূল্য রতœ বেলায়তে মোহিত (সর্ববেষ্টনকারী বেলায়ত) তথা বেলায়তে মোতলাকা (উন্মুক্ত বা শর্তহীন বেলায়ত) এর মর্যাদা রক্ষা কর এবং বিতরণ করে ধন্য হও।” (জীবনী ও কারামত, ১৯৭৪ইং প্রকাশকাল- পৃষ্ঠা-৫৩-৫৪) ।
এ উদ্ধৃতি হতে বুঝা গেল, পীর মুর্শিদ কিবলা (কঃ) তাঁর প্রথম ও প্রধান খলিফার আগমনের প্রতীক্ষায় রয়েছেন। তাঁকে ‘বেলায়তে মোহিত’ তথা বেলায়তে মোতলাকা (উন্মুক্ত বেলায়ত) বিতরণ করে ধন্য হতে নির্দেশ করা হচ্ছে। তখন যদিও এ দেশকে পূর্ব বঙ্গ বা পূর্ব বাংলা বলা হতো, তবুও তা গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ)’র ভাষায় ‘বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, যাকে বেলায়ত হাসেল করে তা বিতরণ করতে বলা হয়েছে সেই মহাপুরুষকে অন্য কারো কাছে গিয়ে নেয়ামত হাসেল করতে বলা, তা হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) নির্দেশ মোটেও নয়।
ঘ. হযরত খাজা খোয়াজ খিজির (আঃ) এর সাক্ষাত ও বেশারত প্রাপ্তি:
বার বছর ব্যাপী পাহাড় পর্বতে ধ্যান সাধনার শেষের দিকে সীতাকুন্ড পর্বত ভ্রমণ শেষে হযরত শাহ্সুফি মাওলানা আকদছ খাজা শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (ক:) বঙ্গোপসাগরের তীরে এসে উপনীত হন। হঠাৎ সাগরের গইর বা তরঙ্গের সাথে এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষ আত্মপ্রকাশ করতঃ মাওলানা আকদছ (কঃ) কে সস্নেহে আলিঙ্গন করে বলেন, ‘‘হযরত গাউসুল আযম মাওলানা শাহ্সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী ছাহেব (কঃ) আমার বন্ধু। আপনি আমার বন্ধুর বন্ধু (মোহিব্বে গাউসুল আযম) আমারও বন্ধু হয়েছেন। আপনি খলিফায়ে উলুল আযম, বিল বেরাছত গাউসুল আযম, কুতুবুল আলমের পদ মর্যাদা লাভ করেছেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের আসন লাভ করেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। সহস্র ধন্যবাদ প্রদান করছি। আমার বন্ধু গাউসুল আযমকে আমার ছালাম বলবেন।” (জীবনী ও কারামত, প্রকাশ কাল- ১৯৭৪ ইং, পৃষ্ঠা-১০৪)
এ উদ্ধৃতি হতে বুঝা গেল হযরত শাহ্সুফি মাওলানা আকদছ খাজা শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (ক:) নিজ কানে যে সকল বেশারত (সুসংবাদ) স্বয়ং খাজা খোয়াজ খিজির (আঃ) পাক জবান হতে সরাসরি শ্রবণ করেছেন তা হচ্ছে:
১. মাওলানা শাহে চরণদ্বীপি হচ্ছেন, গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর খলিফা ও বন্ধু।
২. তিনি সে হিসাবে খাজা খিজির (আঃ) এরও বন্ধু। বন্ধুর সাথে বন্ধুর সম্পর্ক থাকে। সুতরাং খাজা খোয়াজ খিজির (আঃ) এর সাথে তাঁর বন্ধুর সম্পর্ক রয়েছে।
৩. হযরত খাজা খোয়াজ খিজির (আঃ) হাকিকত জেনে শুনে নিজ পাক জবানে স্বীকৃতি দিচ্ছেন, আপনি ‘‘খলিফায়ে উলুল আযম (প্রধান খলিফা) এবং বিল বেরাছতে গাউসুল আযম (স্থলাভিষিক্ত গাউসুল আযম) তথা গাউসুল আযম ছানী বেলায়তে মোতলাকা মশরবে দ্বিতীয় গাউসুল আযম এবং কুতবুল আলম (বিশ্বের কুতুব)। ‘শহর কুতুব’ বা কোন দেশ ভিত্তিক কুতুব নয়।
৪. তিনি দু’জন খোলাফায়ে রাশেদীনের আসন লাভ করেছেন। এ আসন সমূহ ইসলামী খেলাফতের নয়। বরং ত্বরিকত বা বেলায়ত মশরবে হযরত মাওলানা শাহে চরণদ্বীপি (কঃ) হলেন ‘সিদ্দিকে আকবর (রাঃ)’ তথা প্রথম ও প্রধান খলিফা। এ আসন হযরত কেবলা থেকে নেয়ামতপ্রাপ্ত অন্য কোন মহাত্মা ব্যক্তি অর্জন করতে পারেন নাই।
৫. খোলাফায়ে রাশেদীনের অন্য আসনটি হলো মওলা আলী শেরে খোদার (কঃ) আসন। তাঁকে মাইজভান্ডারী ত্বরিকায় পাক পাঞ্জাতনের সদস্যপদ ও প্রধান করা হয়েছে। তাই বলা হয়েছে, আমি যাঁর মওলা শাহে চরণদ্বীপিও তাঁর মাওলা।
বুঝা গেল, গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ) হতে গদীনশীন হুকুম ও খেলাফতের চুড়ান্ত বেশারত সমূহ শ্রবণের পুর্বেই তিনি তাঁর পদবীর মহা মর্যাদার প্রাপ্তি সমূহ, উভয় মহাপুরুষদ্বয়ের বন্ধু সাব্যস্ত হওয়া, খলিফায়ে উলুল আযম (প্রথম ও প্রধান খলিফা) হওয়া, কুতুবুল আলম (পৃথিবীর কুতুব) হওয়া, বেলায়তে মোতলাকা মশরবে দ্বিতীয় গাউসুল আযম (বিল বেরাছতে গাউসুল আযম হওয়া), হযরত আলীর (রাঃ) আসনে মর্যাদা পাওয়া এ পাঁচটি বেলায়তি (প্রশাসনিক) মহা মর্যাদা মাইজভান্ডারীয়া ত্বরিকায় অন্য কারো নিকট বিরল।
ঙ. বেশারতে হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ):
১. জনাব মাওলানা আকদছ শাহ্ চরণদ্বীপি (কঃ) ত্রিশ বছর বয়সে ১৩০০ হিজরীতে খেলাফত লাভ করত: দশ বছর ফানাফিল্লাহ ও বাকাবিল্লাহ হালতে ভ্রমণ করে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ উপস্থিত হলেন। হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ) তাঁকে বলেন-
‘‘আমি তোমাকে হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রাঃ) এর আসন দিয়েছি। হযরত রাসুল করিম (দঃ) এর পবিত্র চাদর তোমাকে দিয়েছি। তুমি শাহে আলী (কঃ) ও জহুর শানে নুরানী, মাহ্বুবে ছোবাহানী, তোমাকে আমার একটি চক্ষু দিয়েছি। তুমি আমার সূক্ষ্মতত্ত্ব জ্ঞানখনি। তুমি বাদশাহের পুত্র বাদশা, গাউসুল আজমের পুত্র গাউসুল আযম, তুমি যাও আপন গৃহে আমার গদীতে বসে থাক। (জীবনী ও কারামত, প্রকাশ কাল ১৯৭৪ইং, পৃষ্ঠা-১১১) জনাবে গাউছে আযম হযরত বাবা ভান্ডারীকে গাউসুল আযম বলেছেন ইমাম শেরে বাংলা। কিন্তু তারও বহু আগে শেখ অছিয়র রহমান (কঃ) কে গাউসুল আযম বলেছেন স্বয়ং তাঁর পীর গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী। এ উদ্ধৃতি হতে আরও বুঝা গেল, হযরত খাজা খোয়াজ খিজির (আঃ) এর ঘোষণা হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) মুখে বাস্তবায়িত হয়েছে। (১) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আসন দেওয়া মানে তাঁকে প্রথম ও প্রধান খলিফা বলে ঘোষণা করেছেন এবং সকলে মেনে নিয়েছেন। এখানে হযরত খাজা শাহ চরণদ্বীপির (কঃ) বৈশিষ্ট এবং স্বীকৃতি ছয় জনের মাধ্যমে বিঘোষিত হয়েছে।
(ক) হযরত রাসুল করিম (দঃ) ও (খ) হযরত শাহসুফী ছফী উল্লাহ ছাহেব (কঃ) বলেছেন, ‘‘আপনি তাঁর প্রথম দ্বারস্বরূপ” অর্থাৎ প্রথম ও প্রধান খলিফা। (গ) হযরত খাজা খিজির (আঃ) ও (ঘ) হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ) বলেছেন, ‘‘তোমাকে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আসন দেওয়া হয়েছে।’’
(ঙ) অছিয়ে গাউসুল আযম হযরত শাহ্সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) এর দাদী আম্মা হযরত সৈয়দা লুৎফুননেসা মাইজভান্ডারী (রাঃ) বলেছেন, ‘‘নানুপুরের খুইল্যা মিয়া ফকির, রাউজানের ওয়ালি মাস্তান, সাতকানিয়ার জাফর আলী শাহ্ এবং চরণদ্বীপের মাওলানা অছিয়র রহমান শাহ্ হযরত কেবলার প্রথম অবস্থার মুরিদ ও ফয়েজপ্রাপ্ত। এই মাওলানা অছিয়র রহমান সাহেবই গদীর হুকুর প্রাপ্ত, হজরতের প্রথম খলিফা।’’ (হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) জীবনী ও কারামত গ্রন্থ, অষ্টম প্রকাশকাল, ১৯৮৯ইং, পৃষ্ঠা-২৪৬-২৪৭)। (চ) উক্ত কিাতবে ৯৪ পৃষ্ঠায় হযরত গাউছুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) ৫৩ জন খলিফার নাম রয়েছে। উল্লেখিত খলিফাদের মধ্যে চরণদ্বীপের মাওলানা শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (কঃ) এর নাম মোবারক প্রথম স্থানে রেখে প্রধান খলিফার স্বীকৃতি দিয়েছেন স্বয়ং অছিয়ে গাউসুল আযম সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ)।
২. হযরত শাহ্সুফি মাওলানা আকদছ শেখ অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (কঃ) কে হযরত আলীর (কঃ) আসন প্রদান করে মাহ্বুবে ছোবহানী পদে পদবান করা হয়েছে। তাই তিন পাক পাঞ্জাতনের সদস্যরূপে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) সূক্ষ্মতত্ত্ব জ্ঞানখনি’ সাব্যস্ত হয়েছেন।
৩. তাঁকে বলা হয়েছে বাদশাহের পুত্র বাদশাহ তথা প্রথম ও প্রধান খলিফা।
৪. তাঁকে বলা হয়েছে গাউসুল আজমের পুত্র গাউসুল আযম। তথা গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) জীবদ্দশায় ‘বিল বেরাছতে গাউসুল আযম’ সাব্যস্থ হয়ে গাউসুল আযম ছানী পদে পদবান ও মর্যাদাবান হয়েছেন। কেননা সে সময় তাঁকেই কুতুবুল আলম বলে খাজা খিজির (আঃ) স্বীকৃতি দিয়েছেন। গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ)ও নিজের অলদ; (পুত্র) বলেও স্বীকৃতি দিয়েছেন।
৫. তাঁকে বলা হয়েছে, তুমি যাও আপন গৃহে আমার গদীতে বসে থাক। ১৮৯২ইং সালে (১৩১১হিজরী) এই হুকুম কেবলমাত্র সেই সময়কালে একজন মহাপুরুষের প্রাপ্তি ছিল, যাঁর নাম গাউসুল আযম ছানী কুতুবুল আলম খাজা শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ)।
চ. বেশারতে গাউছূল আযম মাইজভান্ডারী (ক:): একদা চট্টগ্রাম চান্দগাঁও নিবাসী জনাব মৌলভী ওবায়দুল হক শাহ্ (রহ.) হযরত আকদছ কেবলার খেদমতে উপস্থিত হয়ে হযরত মাওলানা আকদছ শাহ চরণদ্বীপির (কঃ) শান সম্বন্ধে বাক্যালাপ করলে হযরত কেবলা কাবা (কঃ) তাঁকে বলেন-আল্লাহ তায়ালা মাওলানা শাহ্ চরণদ্বীপি (কঃ) কে হযরত আবু বকর সিদ্দিকের (রাঃ) আসন দান করেছেন, আমি তাঁকে সিদ্দিকের (রাঃ) আসনে পেয়েছি। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে হযরত আলী (রাঃ) এর গুপ্ত জ্ঞান দান করেছেন। আমি তাঁকে আমার চিন্তাধারার সূক্ষ্ম তত্ত্বজ্ঞান খনির দ্বারস্বরূপ পেয়েছি। তিনি আমার অলদ, আমি তাঁর ওয়ালেদ (পিতা), তোমাদের (মৌলভী ওবায়দুল হক বয়সী অনুজদের) আরম্ভ হতে পরিসমাপ্তি তাঁর হাতে ন্যাস্ত। আমার ফয়জুল হক মিঞা, গোলাম রহমান, অছিয়র রহমান আমা হতে ভিন্ন নয়। তাঁরা আমার পঞ্জতন।” জীবনী ও কারামত গ্রন্থ প্রকাশকাল ১৯৭৪ইং, পৃষ্ঠা-১১৩-১১৪।
উল্লেখ্য যে, হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) পাক পাঞ্জাতন সদস্য করা তাঁদের নাম সমূহ হযরত কেবলা (কঃ) নিজেই তাঁর পাক জবানে ইরশাদ করেছেন। এ ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় হযরত শাহ্সুফি মাওলানা শেখ অছিয়র রহমান চরণদ্বীপির (কঃ) জীবনী ও কারামত গ্রন্থে। হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) ওফাত শরীফের পরে কার হাতে কামালিয়তের আরম্ভ হতে পারে সমাপ্তি ন্যস্ত থাকবে তারও নির্দেশনা প্রদান করে দিয়েছেন হযরত কেবলা নিজেই। সুতরাং যাঁর হাতে কামালিয়তের চরম পরিপূর্ণতা ক্ষমতা, তাঁর নেয়ামত অন্যজনের হাতে, এ কথাতো মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা উদ্ভট বাণী।
ছ. বেশারতে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ): বোয়ালখালী থানার কধুরখীল নিবাসী হযরত মাওলানা ইসমাইল ছাহেব (রহঃ) একদা বায়াত হওয়ার জন্য মাইজভান্ডার শরীফ উপস্থিত হন। হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ) তাঁকে বলেন, ‘মিঞা তুমি হযরত আলী (রাঃ) এর নিকট যাও। তোমাদের নেয়ামত খলিফায়ে উলুল আযম (প্রধান খলিফা) এর হাতে রয়েছে।’ তিনি বললেন, হুজুর! হযরত আলী (রাঃ) কে আমি কোথায় পাব? হযরত কেবলা (কঃ) বলেন, ‘মিঞা চরণদ্বীপ আমি একখানা মসজিদ দিয়েছি, সেই মসজিদে নামাজ পড়লে হযরত আলী (রাঃ) কে পাবে। (জীবনী ও কারামত গ্রন্থ, প্রকাশকাল ১৯৭৪ইং, পৃষ্ঠা-১২২)।
প্রশ্ন উঠেছে, গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ) তাঁর খলিফায়ে উলুল আযম (প্রধান খলিফা) এর স্থান চরণদ্বীপ বলেছেন। যেখানে মসজিদ তৈরী করা হয়েছে বলে ইরশাদ করেছেন।
জ. বেশারতে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ)ঃ রাউজান গর্শ্চি নিবাসী মাওলানা ছৈয়দ মোহাম্মদ হাছান ছাহেব (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) নিকট বায়াত হওয়ার প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ‘মিঞা তুমি খাজা মইনুদ্দিন চিশতি আজমেরী (কঃ) এর হাতে বায়াত গ্রহন কর। আমি বললাম, হুজুর! তিনি যে ওফাত হয়েছেন। প্রতি উত্তরে হযরত আকদছ (কঃ) বলেন, ‘‘মিঞা তোমাকে কে বলেছে খাজায়ে আজমিরী ওফাত হয়েছেন কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে চরণদ্বীপ গ্রামে খাজায়ে আজমিরী ছাহেব তোমার জন্য এক জাম দুধ নিয়ে বসে আছেন। তোমাকে রোখছত করলাম চলে যাও” বিদায় হওয়ার পর একদা তিনি চরণদ্বীপে উপস্থিত হলেন। জনাব মাওলানা আকদছ (কঃ) আমার দিকে দৃষ্টিপাত করত: মৃদ হাস্যে বলেন-মিঞা খাজায়ে আজমিরী (কঃ) ওফাত হন নাই। তোমার জন্য দুধের জাম নিয়ে বসে রয়েছেন’’ এই বলে তিনি আমাকে এক চামচ সরবত পান করালেন। তৎপর আমার যে অবস্থা হল আমি তা বলতে পারিনা। বেখুদী অবস্থায় আমি অজ্দ ও রোখ্ছ করেছিলাম। (মাওলানা শাহ্ চরণদ্বীপির (কঃ) জীবনী ও কারামত গ্রন্থ, প্রকাশ কাল ১৯৭৪ইং, পৃষ্ঠা-১২৪)।
বুঝা গেল, এই বেশারত হযরত আকদছ কেবলা (কঃ) তাঁর প্রধান খলিফাকে খাজায়ে আজমিরী (রাঃ) বলেছেন। খাজায়ে আজমিরীর কোন কামালিয়তের অভাব ছিল? হযরত খাজায়ে আজমিরী বিধর্মীদেরকে মুসলিম বানাতেন। আর মাওলানা শাহ্ চরণদ্বীপি (কঃ) হযরত কেবলার (কঃ) পাঠানো ব্যক্তিদেরকে কামেল বানাতেন। যাঁদের নেয়ামত (আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা) খাজায়ে চরণদ্বীপির (কঃ) হাতে ন্যস্ত ছিল তাঁদেরকে এখানে আসতে হতো।
ঝ. বেশারতে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ): একদা হযরত মাওলানা শাহ্ চরণদ্বীপির (কঃ) সহধর্মিনী জনাবা বেগমা খাতুন (রহঃ) তাঁর কন্যা শাহ্জাদী আছিয়া খাতুন (র:) সহ মাইজভান্ডার শরীফ গমন করেন। তখন হযরত কেবলা (কঃ) রসগোল্লা মিষ্টান্ন বিতরণ করছেন। এক পর্যায়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন কেহ বাকি আছ কি? শাহ্জাদী হাত বাড়িয়ে বলেন হুজুর! আমি বাকি আছি। হযরত আকদছ মৃদু হাস্যে বলেন, ‘‘তোর বাপকে সুলতানুল আউলিয়া (গাউসুল আযম ছানী) বানিয়েছি, তুই আর কি চাস?’’ এই বলে তাঁকে একটি রসগোল্লা দেন। আবার রসগোল্লা হাতে নিয়ে বলেন, আর কে বাকি আছ?” শাহজাদী আবার হাত বাড়িয়ে দেন। হযরত আকদছ (কঃ) বলেন’’ কেন আবার চাও? এই মাত্র যে তোমাকে দিয়েছি। উত্তরে শাহ্জাদী বলেন, আমার ক্ষুধা পেয়েছে আমাকে আরও দিন। তখন হযরত আকদছ (কঃ) জ্বালালী অবস্থায় বলেন-‘‘তোর বাপকে আমার এক চক্ষু দিয়েছি। আমার বড় মাওলানা ছাহেবের জন্য এক চক্ষু রেখেছি। তিনি আলমে আরোয়ায় ছায়ের করছেন। আমি যাওয়ার সময় তার প্রাপ্য তাঁকে দেব। তুই আবার কি চাস?’’ (জীবনী ও কারামত গ্রন্থ পৃষ্ঠা-১১৯-১২০ প্রকাশকাল ১৯৭৪ইং)। এ ছাড়া ও হযরত কেবলা কাবার (কঃ) বেশারতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, আমি যাঁর মাওলা, মাওলানা শাহে চরণদ্বীপিও তার মাওলা। (জীবনী শরীফ গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)।
ঞ. বেশারতে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (কঃ): হযরত ছোট মাওলানা শাহ্সুফি সৈয়দ আমিনুল হক ওয়াছেল বলেন ‘‘আমি একদা চরণদ্বীপ এসে দেখলাম, আমার জেঠা হযরত গাউসুল আযম (কঃ) ও মাওলানা আকদছ শাহ্ চরণদ্বীপির (কঃ) মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য পরিলক্ষিত হল না। অঙ্গের অবয়ব, আকৃতি-প্রকৃতি ও চাল-চলন, হাব-ভাব, বাক্যালাপ ইত্যাদি আমার জেঠা হযরত কেবলার সম্পূর্ণ অবয়বতা দর্শনে আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম। (জীবনী ও কারামত গ্রন্থ, পৃষ্ঠা-১১৭)।
বুঝা গেল, ছোট মাওলানা হযরত সৈয়দ আমিনুল হক ওয়াসেল (কঃ) ও অছিয়ে গাউসুল আযম হযরত শাহসুফি সৈয়দ দেলওয়ার হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) উভয়ে পরম সত্যবাদী। তাঁরা হযরত শাহে চরণদ্বীপি (কঃ) কে হযরত কেবলার কামালিয়তের চেহেরায় দেখেছেন বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। হযরত আকদছ ‘আহমদ উল্লাহ’ নামে খাতেমুল আউলিয়ার ছুরতে শায়খুল আকবর মহিউদ্দিন ইবনুল আরবী (কঃ)’র জামানায় বিদ্যমান ছিলেন। একথা যেমন ‘ফুছুছুল হেকম’ কিতাব হতে শাহ্সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) প্রমান করেছেন। তার পূর্বে খাতেমুল আউলিয়ার বর্ণনা কুতুবে জামান শাহ্সুফি মাওলানা ছফী উল্লাহ্ ছাহেবের (কঃ) পবিত্র জবানে হযরত মাওলানা শাহে চরণদ্বীপি (কঃ) কলিকাতা হয়ে ১২৯৮ হিজরীতে ফেরত কালেও শুনে এসেছেন। তিনি প্রথম অবস্থার মুরিদ ও একমাত্র প্রথম খলিফা হিসাবে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) মহিমা সর্বত্র প্রকাশ করেছেন। হযরত কেবলার ওফাতের প্রায় বার বছর পূর্ব হতে নিজ বাড়িতে গদীনশীন হয়ে ৭ইমাঘ ওরশ শরীফ (ফাতেহা) চালু করেন যা এখনো বহাল আছে। আসুন! আমরা হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (কঃ) প্রকৃত শান আযমত এবং তাঁর সকল খোলাফায়ে কেরাম, বিশেষ করে তাঁর প্রথম ও প্রধান খলিফা হযরত মাওলানা শাহ্ অছিয়র রহমান আল ফারুকীর (কঃ) বেলায়তের তবকা, শান আযমত বুঝার চেষ্টা এবং গবেষণা করে প্রকৃত সত্য অনুধাবন করি।
লেখক:
জন্ম: চরণদ্বীপ, বোয়ালখালী।
পরবর্তীতে স্থায়ী নিবাস: বেতবুনিয়া, কাউখালি, পার্বত্য চট্টগ্রাম।
চরণদ্বীপ দরবার শরীফের নিবেদিত প্রাণ ভক্ত ও গবেষক।
লিংক https://play.google.com/store/apps/developer?id=Senani+International
চরণদ্বীপ দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা শাহ্সুফি অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি
মাওলানা আকদছ শাহ্ চরণদ্বীপি সম্পর্কে হযরত গাউসুল আজম মাইজভান্ডারীর জজবাতি কালাম