শেখ আবু মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ফারুকী

বেলায়েত হল নবুয়তের প্রতিবিম্ব বা স্থলাভিষিক্ত কার্যপদ্ধতি। সেই হিসেবে বেলায়েতপ্রাপ্ত ওলামায়ে কেরাম (জাহেরী-বাতেনীজ্ঞানে সমৃদ্ধ অলিগণ) নবীদের ‘ওরাছাত’ বা উত্তরাধিকারী প্রতিনিধি। সমস্ত ফজিলত, রহমত ও ফয়ুজাতের কেন্দ্রস্থল মদীনা মনােয়ারা থেকে বেলায়েতের করুণাধারা বিভিন্ন তরিকা, উপ-তরিকার মাধ্যমে সারাবিশ্বে প্রবহমান, যার কল্যাণকর প্রভাবে প্রতি যুগ বা শতাব্দীতে আউলিয়ায়ে কেরামগণ গাউস, কুতুব, আবদাল, আওতাদ ইত্যাদি আধ্যাত্মিক পদবী ধারণ করে মানবমণ্ডলীর ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ তথা সার্বিক মুক্তির দিক নির্দেশনাকারীর দায়িত্বে নিয়ােজিত। আবার সময় সময় এ সমস্ত অলি-আল্লাহর চাইতে আরাে শ্রেষ্ঠত্বসম্পন্ন কিছু অলি আল্লাহর শুভাগমন হয়, যারা নির্দিষ্ট স্থান ও সময়সীমার আওতাভুক্ত না থেকে সর্বকালের সমগ্র সৃষ্টির জন্যে স্মরণীয়, বরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে থাকেন। হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক) ঐ সমস্ত শ্রেষ্ঠ মর্যাদা সম্পন্ন অলিদের অন্যতম। তিনি হযরত রাসূলে করিম (দ) কর্তৃক ‘বেলায়েতে মােতলাকায়ে আহমদী’ কারুকার্যখচিত গাউসিয়তের মুকুটপ্রাপ্তির মাধ্যমে অলিকুল সম্রাটের সিংহাসনে সমাসীন। হযরত গাউসে পাক মাইজভাণ্ডারী (ক) বিশ্ব মানবতার কল্যাণে দিগ-দিগন্তরে তাঁর প্রবর্তিত মাইজভাণ্ডারী তরিকতের প্রসার ও গাউসিয়তের কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে অনেক কামেলে মােকাম্মেল প্রতিনিধি সৃজন করেছেন। তন্মধ্যে হযরত মাওলানা শাহসূফী শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকী হযরত আকদসের প্রথম অনুগ্রহভাজন খলিফা যিনি হযরত কেবলা কাবার বেলায়েতে ওজমার বিশেষ করুণাধারায় সিক্ত হয়ে হুবহু তাঁর (হযরতের) দৈহিক অবয়বতা প্রাপ্তির মাধ্যমে স্থলাভিষিক্ত গদীনশীন হওয়ার বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। নিম্নে তার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি প্রদত্ত হল :

জন্ম ও বংশ পরিচয় : হযরত মাওলানা শাহসূফী শেখ অছিয়র রহমান আল-ফারুকী বােয়ালখালী থানার অন্তর্গত চরণদ্বীপ নামক গ্রামে ১২৭০ হিজরী মােতাবেক ১২৫৯ বাংলার ৭ মাঘ ১৮৫২ ইংরেজীর ২১ জানুয়ারী বুধবার শুভ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শ্রদ্ধাস্পদ পিতার নাম শেখ মােহাম্মদ মাজম ফারুকী এবং স্নেহময়ী মাতার নাম মােছাম্মৎ জয়নাব বিবি। বংশগত সজরা মােতাবেক তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা)-এর বংশধারার উত্তরসূরি।

শিক্ষা ও কর্মজীবন : মাওলানা শাহ্ অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (ক) শৈশবকালীন শিক্ষা সমাপন করে ১২৮০ হিজরী সনে দ্বীনি শিক্ষা অর্জনার্থে বােয়ালখালী থানার হাওলা নিবাসী মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আতাহার আলী ছাহেবের নিকট গমন করেন এবং তাঁর সান্নিধ্যে থেকে দ্বীনি এলমের মৌলিক শিক্ষা অর্জন করেন। মাওলানা সৈয়দ আতহার আলী ছাহেব একজন কশধারী আলেম ছিলেন। তিনি অতি ছােট বয়সে মাওলানা শাহ্ চরণদ্বীপির (ক) খােদাভীতি, পরহেজগারী, আদব-আখলাক দর্শনে বিমুগ্ধ হয়ে অন্যান্য ছাত্রদেরকে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তােমরা আমার ছাত্রদের মধ্য হতে ‘অছিয়র রহমান ভবিষ্যতে একজন কামেল অলি উল্লাহ্ হবেন এবং তাঁর ফয়ুজাত ও হেদায়েতের আলােকে এ দেশবাসী উপকৃত হবে। দ্বীনি শিক্ষার প্রাথমিক পর্ব শেষ করে তিনি ১২৮৫ হিজরী সনে চট্টগ্রাম সরকারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং তথায় জামাতে দুয়াম পর্যন্ত লেখা-পড়া করেন। অতপর তিনি তঙ্কালীন প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১২৯০ হিজরী সনে উক্ত মাদ্রাসা হতে জামাতে উলা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। তিনি উক্ত মাদ্রাসার সুযােগ্য মােহাদ্দেস মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ ছফিউল্লাহ্ (র) ছাহেবের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আরাে পাঁচ বৎসরকাল অধ্যয়ন করেন এবং ১২৯৫ হিজরী সনে মাদ্রাসা স্তরের চূড়ান্ত ও সর্বশেষ পরীক্ষায় অত্যন্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন। মাওলানা শাহ চরণদ্বীপি (ক) ১২৯৬ হিজরী সনে আলীগড় জামেউল উলুম মাদ্রাসায় প্রভাষক হিসেবে যােগ দেন এবং তথায় দুই বৎসরকাল প্রশংসার সাথে শিক্ষাদান করে তথাকার ছাত্র-শিক্ষকের যথেষ্ট ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেন।

হযরত রাসূলে করিম (দ) ও গাউসে মাইজভাণ্ডারীর (ক) স্বপ্নে দর্শন লাভ : মাওলানা শাহ চরণদ্বীপি (ক) আলীগড় মাদ্রাসায় শিক্ষক থাকাকালীন একদা এক শুভ রাত্রিতে ছরােয়ারে কায়েনাত হযরত রাসূলে পাক (দ) তাঁকে দর্শন দান ও এরশাদ করেন, “প্রিয় বৎস! আমি তােমার জন্যে মনােরম ছুরত পাঠিয়েছি। আমার হাবীব গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর বেলায়েতের প্রথম দ্বার’ স্বরূপ কর্মপদ্ধতি গ্রহণ ও তা নির্বাহ কর। মাদ্রাসার শিক্ষকতা হতে তােমাকে অব্যাহতি দিলাম।” এরূপ শুভ প্রত্যাদেশ পাওয়ার পর পর কর্মস্থল থেকে বিদায় গ্রহণপূর্বক তিনি ১২৯৮ হিজরী সনে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে অবস্থানরত অবস্থায় আর এক শুভ রাত্রিতে হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী (ক) তাকে স্বপ্নযােগে দর্শন দান করে বলেন, “বৎস! আমি তােমার অপেক্ষায় রয়েছি। আমার প্রজ্বলিত জ্যোতির্ময় প্রদীপের সাথে মিশে একাত্ম হয়ে যাও। আর প্রেম ভাণ্ডারের অমূল্য রত্নরাজি আহরণ করে নিজে ধন্য হও এবং তা বিতরণ করে পাপ তিমিরাচ্ছন্ন মানবাত্মাকে হেদায়েতের আলােকে উদ্ভাসিত করে তোলে।” স্বপ্নে দৃষ্ট হযরত রাসূলে করিম (দ) এবং গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর (ক) মােহন জ্যোতির্ময় আকৃতি তিনি আপন মানসপটে ধারণ করে রাখলেন।

বায়াত গ্রহণ ও প্রথম খলিফার পদ লাভ : মােবারক স্বপ্নদ্বয় দর্শনের পর থেকে তার হৃদয়মনে প্রচণ্ড আনচানভাব ও অস্থিরতার উদ্ভব হল। তিনি পর দিন প্রাতে মাইজভাণ্ডার শরীফ গমনপূর্বক গাউসে পাকের খেদমতে শ্রদ্ধাবনত হয়ে নিজকে পরিপূর্ণভাবে সমর্পন করে দেন। প্রথমে উভয়ের মধ্যে কিছু রহস্যময় বাক্য বিনিময় হল। অতপর হযরত আকদছ (ক) তাঁকে নিজ মােবারক হস্তে বায়াত করায়ে কিছু মিষ্টি হালুয়া ও শরবত পান করিয়ে দেন। এতে মাওলানা শাহ চরণদ্বীপির প্রচণ্ড আধ্যাত্মিক প্রেরণার (হাল-জজবা) উদ্ভব হল। হৃদয়-মানস আলােড়িত হয়ে তিনি যেন এক নবজীবন লাভ করলেন। মুর্শিদ কেবলায়ে আলমের নির্দেশে তিনি দু’বৎসরকাল সীমাহীন প্রেমপূর্ণ এবাদত ও রেয়াজতের মাধ্যমে পবিত্রতা ও যােগ্যতা হাসিল করে ১৩০০ হিজরী সনে স্বীয় মুর্শিদ সমীপে উপস্থিত হলে তিনি একখানা চাদর মােবারক তার আপাদমস্তকে পরায়ে দিয়ে তাঁকে প্রথম খলিফা হিসেবে দায়িত্ব ভার অর্পণ করেন।

কঠোর রেয়াজত ও স্থলাভিষিক্ত গদীনশীন : খেলাফত লাভ করার পর আরাে যােগ্যতা ও পূর্ণতা হাসিলের জন্যে তিনি পাহাড়, পর্বত ও দুর্গম অরণ্যাঞ্চলে এবং সমতল ভূমির বিভিন্ন মসজিদ, মাজার ও খানকায় কষ্টকর এবাদত-বন্দেগী ও কঠোর রেয়াজত সাধনায় আত্মনিয়ােগ করেন। বার্মার আকিয়াবের পর্বতমালা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেয়াং এর পাহাড়ে সফরের সময়ে সংঘটিত তাঁর অনেকে বিস্ময়কর ঘটনাবলী ঐ সমস্ত এলাকার অধিবাসীদের কাছে এখনাে কিংবদন্তি হয়ে আছে। এভাবে তিনি একাদিক্রমে প্রায় ১০ বৎসর অবিশ্রান্ত রেয়াজত সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে কামালিয়াতের উচ্চতম মােকামসমূহ হাসিল পূর্বক ১৩১১ সনে স্বীয় মুর্শিদে পাক হতে যােল আনা ফয়েজ ও পূর্ণাঙ্গ আধ্যাত্মিক নেয়ামতের নমুনা স্বরূপ একটি এক টাকা মূল্যমানের রৌপ্য মুদ্রা লাভ করেন এবং নিজ বাড়িতে স্থলাভিষিক্ত গদীনশীন হওয়ার নির্দেশপ্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য, হযরত কেবলায়ে আলমের জাহেরী জিন্দেগীতে তিনিই একমাত্র গদীর হুকুমপ্রাপ্ত খলিফা। বাড়িতে এসে গদীতে উপবেশন করার পর ১৩/১৪ বৎসর যাবৎ জাহেরীভাবে দরবার শরীফে যাননি। হযরত কেবলা কাবার সাথে আত্মিক যােগাযােগের মাধ্যমে তরিকত বিষয়ক দায়িত্ব ও কর্মকাণ্ড নির্বাহ করতেন। একমাত্র হযরত কেবলা কাবার ওফাতের ১৬/১৭ দিন পূর্বে অন্তিম ও জরুরী সাক্ষাতের জন্য দরবারে পাকে গমন করেন। [সূত্র : মাইজভাণ্ডার শরীফ থেকে প্রকাশিত হযরতের জীবনী ও কারামত’ এর পরিশিষ্টাংশ ও “আয়নায়ে বারী” ৩২৭-২৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

মাওলানা শাহ চরণদ্বীপির (ক) সম্পর্কে গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর বাণী : মাওলানা শাহ চরণদ্বীপির (ক) কামালিয়াত সম্পর্কে হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী বিভিন্ন মূল্যবান বাণী বা মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। তিনি একদা মাওলানা শাহ্ চরণদ্বীপিকে বলেন, “তুমি হলে আমার ছিদ্দিকে আকবর। তুমি আমার তরিকার ও গাউসিয়াত ক্ষমতায় সর্ব প্রথম বিশ্বাস স্থাপন করে হযরত আবু বকর ছিদ্দিকের (রা) আসন লাভ করেছ।” আবার গাউসে পাকে মাইজভাণ্ডারী তাঁর অধিকাংশ খলিফা ও ভক্ত-অনুরক্তদেরকে প্রায়শঃ বলতেন, “আমি মাইজভাণ্ডারে ডুব দিয়ে কর্ণফুলী (কাইছা) নদীর দক্ষিণ তীরে চরণদ্বীপ গ্রামে উঠেছি এবং তথায় একখানা মসজিদ নির্মাণ করেছি। আমার মসজিদে নামাজ পড়লে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।” হযরত কেবলা মাইজভাণ্ডারীর উক্ত রূপক কালাম মাওলানা শাহ চরণদ্বীপির (ক) প্রতি স্থলাভিষিক্ত ক্ষমতা ও খেলাফত প্রদানই বােধগম্য হয়। তাই হযরতের উপরােক্ত কালামের মর্ম উপলব্ধি করে তাঁর অনেক খলিফা চরণদ্বীপ দরবার শরীফে আগমনপূর্বক মাওলানা শাহ চরণদ্বীপির (ক) দোয়া ও ফয়েজ লাভ করে আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হন।

গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর (ক) অবয়বতা লাভ : হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর বেলায়েতে ওজমার সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলাে ফয়েজে এত্তেহাদী। হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী তার শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত পরিপূর্ণ এত্তেহাদী ফয়েজ’ মাওলানা শাহ চরণদ্বীপিকে প্রদানের মাধ্যমে তাঁর দেহ মােবারকের পরিপূর্ণ অবয়বতা ও আকৃতি দান করেন, যার দরুন হযরত কেবলার নৈকট্যপ্রাপ্ত মাশায়েখগণও মাওলানা শাহ চরণদ্বীপিকে (ক) পরখ করতে পারতেন না। এই রূপ একটি ঘটনা অছিয়ে গাউসুল আজম হযরত শাহ্সূফী সৈয়দ দেলাওর হােসাইন মাইজভাণ্ডারী (ক) “হযরত কেবলার জীবনী ও কেরামত”-এর পরিশিষ্টাংশে উল্লেখ করেছেন। হযরত কেবলা কাবার জাহেরী জীবিত থাকাকালীন অধিকাংশ খলিফা তাঁর আদেশ ও কালামমতে চরণদ্বীপের রূপক মসজিদ বা মৌলানা শাহ চরণদ্বীপির সাক্ষাত ও দোয়ার জন্য চরণদ্বীপ দরবার শরীফে আসতেন। এমনকি হযরতের ওফাতের পরও তার বড় বড় খলিফা ও মাশায়েখগণও চরণদ্বীপ এসে হযরতের দেহ মােবারকের অবয়ব সৌন্দর্য অবলােকন করে তাদের রুহানি পিপাসা নিবৃত্ত করতেন। জনাব কুতুবুল আকতাব সােলতানুল মাহবুবীন হযরত সৈয়দ গােলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারী (ক) ছায়ের অবস্থায় এবং ছােট মাওলানা কুতুবুল এরশাদ হযরত সৈয়দ আমিনুল হক। ওয়াছেল মাইজভাণ্ডারী (ক)ও রূহানী সাক্ষাতের জন্য চরণদ্বীপ দরবার শরীফে এসেছেন। হযরত শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী হুজুর (ক) আমার চাক্ষুষ দেখা মতে মাওলানা শাহ্ চরণদ্বীপির মেজ শাহজাদার ওফাত পূর্ববর্তী সময়ে দুইবার চরণদ্বীপ দরবার শরীফে তশরিফ এনেছিলেন।

বেলায়তী ক্ষমতায় মানব সেবা : মাওলানা শাহ চরণদ্বীপি (ক) কামালিয়াতের উচ্চতম সােপানে উপনীত হলে তাঁর বুজুগীয়তের সুখ্যাতি দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং অসংখ্য হাজতী ও মুক্তিকামী জনতা তাঁর দিকে আকর্ষিত হতে থাকে। তার অসংখ্য কারামতের কথা এখনাে এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভক্তিভরে আলােচিত হয়। তাঁর সান্নিধ্যে আসা দুনিয়াবী লােভ-লালসার বশবর্তী লােকদের জাগতিক উদ্দেশ্য পূরণের চাইতে তিনি তাদের পরকালীন মুক্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভে উদ্বুদ্ধ করাকে অধিকতর গুরুত্ব দিতেন। অনেক আলেম-ফাজেল, জ্ঞানী-গুণী তার নৈকট্যে এসে সাধারণ মানবীয় স্তর থেকে উচ্চ মানবীয় গুণাবলীসম্পন্ন কামেল অলিতে পরিণত হন ও প্রতিনিধিত্ব লাভে ধন্য হন। তাদের মধ্যে মাওলানা শাহ তাজুল ইসলাম হাশিমপুরী (র) চন্দনাইশ, মাওলানা শাহ হামিদুল্লাহ (র) রাউজান, মাওলানা সৈয়দ সিরাজুল হক (র) রাঙ্গুনীয়া, মাওলানা শাহ আশরাফ আলী (র) রাঙ্গুনীয়া, মৌলভী শাহ আবদুল জলিল (র) গােমদন্ডী অন্যতম।

ওফাত : পবিত্র ইসলাম ও ত্বরিকতের গুরুদায়িত্ব পালন ও মানবতার অশেষ কল্যাণ সাধনে সফলকাম হয়ে ১৩২৭ বাংলার ১২ ভাদ্র, ১৯২০ ইংরেজীর ২৯ আগস্ট, ১৩৩৮ হিজরীর ১২ জিলহজ্ব কুতুবুল আকতাব, বিল বেরাছতে গাউসুল আজম মাওলানা শাহসূফী শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকী (ক) ইহ জাগতিক লীলা সংবরণ করে মহান স্রষ্টা আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন। মহান রাব্বল আলামীনের অশেষ করুণাবারি তাঁর পবিত্র আত্মায় বর্ষিত হােক। আমিন!

১. হযরত মাওলানা শাহসূফী শেখ অছিয়র রহমান আল ফারুকী (ক) হলেন হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর (ক) প্রথম খলিফা। মাইজভাণ্ডারী তরিকা প্রচারের গােড়ার দিকে তৎকালীন আলেম সমাজের বিরূপ ও কঠোর সমালােচনার সময়ে তিনি গাউসে মাইজভাণ্ডারীর তরিকা সর্বপ্রথম কবুল করে তাহা প্রচারে কার্যকর অবদান রাখেন। তাই মাইজভাণ্ডারীর তরিকায় তাঁর মর্যাদা ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু ছিদ্দিক (রা)এর ন্যায়।

২. তিনি ফারুকে আজম হযরত সৈয়েদেনা ওমর ফারুক (রা)-এর পবিত্র বংশধারার সুযােগ্য উত্তরসূরি।

৩. তিনি গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী (ক) হতে খেলাফতের নমুনাস্বরূপ একখানি চাদর মােবারক ও একটি এক টাকা (যােল আনা) মূল্যমানের রৌপ্য মুদ্রা তবরুকাত হিসাবে প্রাপ্ত খলিফা।

৪. তিনি হযরত কেবলা কাবার (ক) জাহেরী জিন্দিগীতে খলিফাদের মধ্যে একমাত্র গদীর হুকুমপ্রাপ্ত খলিফা। হযরত বাবা ভাণ্ডারী (ক) হযরত কেবলা কাবার ওফাত পরবর্তীতে গদীনশীন হন। ৫. তিনি হযরত কেবলা কাবার (ক) বেলায়তে ওজমার সর্বোচ্চ নেয়ামত “এত্তেহাদী ফয়েজ” প্রাপ্তিতে হ্যরত কেবলা কাবার দেহ মােবারক ও সুরত আকৃতির পূর্ণাঙ্গ অবয়বতার অধিকারী।

শেখ আবু মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ফারুকী : আওলাদে খলিফায়ে গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী (ক), চরণদ্বীপ দরবার শরীফ, বােয়ালখালী, চট্টগ্রাম।

তথ্য সূত্র- তাজকেরাতুল মাইজভাণ্ডারিয়া

হযরত চরণদ্বীপি (ক.) নামের বিশেষত্ব

শাহ চরণদ্বীপির স্মরণে মাইজভান্ডারী গানের কালজয়ী রচয়িতা কবিয়াল রমেশ শীলের চারটি গান

আলীগড় জামেউল উলুম মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা শাহসুফি শেখ অছিয়র রহমান চরণদ্বীপী (ক.)

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here