হযরত গাউসুল আজম বিলবেরাছতে মাওলানা শাহসুফি শেখ মোহাম্মদ অছিয়র রহমান ছাহেব চরণদ্বীপি (ক.) নামের বিশেষত্ব
হ- হরষিত অন্তরে আমি জানাই ছালাম
জ- জমিল সৌন্দর্য্য তব মধুময় নাম।
র- রহিবে তোমার নাম এই নশ্বর ভবে
ত- তপন বিমান দেশে যতদিন রবে।
গা- গায়ে শারী শুক বিটপী ডালে উল্লাসে
উ- উদিল পূর্ণিমা শশী তিমির বিনাশে।
ছ- ছড়াতে তৌহিদ সুবাস বিশ্ব ভুবনে
ল- লভিয়াছ সে মর্যাদা প্রভু কৃপা গুণে। (১)
আ- আকাশে বাতাসে উড়ে জয় কেতু তব
জ- জয় গান করে নিত্য জ্ঞানী সাধু সব।
ম- মধুকর মধু লোভে করয়ে গুঞ্জন
তোমার প্রশংসা গীতি গাহে সর্বক্ষণ।
মা- মাঘ সাতে তব দ্বারে মহা সম্মিলন (২)
ও- ওলামা প্রধান জ্ঞানী আসে সাধুজন।
লা- লাহুত সাগরে মগ্ন হয় যেই জন
না- না রহিবে মনস্তাপ দুঃখ নিবারণ।
সা- সাধনা কামনা ফলে পুরে মনোরথ
হা- হাম্‌দ প্রশংসা গীতি গায়ে অবিরত।
ছু- ছুরত আকৃতি তব গাউছে ভাণ্ডারী
পী- পীর শিষ্য এক রূপ প্রভেদ নাহেরী।
সে- সেই মত গুণ জ্ঞান নাহি পরিসীমা
খ- খলিফায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ অপার মহিমা।
ম- মহান আদর্শ তব নবী মোস্তফার
হা- হাবিব আল্লাহর তুমি জগতের সার।
ম- মহিমা গৌরব তব অসীম অপার
দ- দয়া করে দাও স্থান চরণে তোমার।
অ- অপূর্ব সুন্দর রূপ নুরানী আকার
ছি- ছিরাত ছুরত জ্বিল (৩) নবী মোস্তফার।
ও- ও রূপ আদিতে ছিল অতি সংগোপনে (৪)
নুরে মোহাম্মদী রূপে প্রকাশ ভ‚বনে।
র- রহস্য পবিত্র তব মহিমা অতুল (৫)
অলি উল্লাহ সর্বজ্ঞানী নায়েবে রসূল। (৬)
র- রহমত পরিপূর্ণ মহিমা অপার (৭)
হ- হয়েছে উজ্জ্বল ধরা কিরণে তোমার।
মা- মানব দানব আদি পথভ্রষ্ট গণ
ন- নবরূপে জাগরিত মোহমুগ্ধ জন।
ছা- ছাকী ও প্রেম সরাবে কর ভরপুর
পিয়াও এস্কের সরাব জামে তহুর।
হে- হেরিয়া রূপ মাধুরী ধন্য মম আঁখি
তুলনা দিবার বস্তু নাহি কিছু বাকী।
ব- বর্ণিতে কি পারি তব গুণের তারিফ
মাওলাজি ‘রহমান’ শাহে চরণদ্বীপ।
চ- চরণ যুগল তোমার পরশমণি
জ্ঞানের সাগর তুমি অলি শিরোমণি।
র- রসিক সুজন মাওলা প্রেম অবতার
কৃপাদানে করদাসে ভব সিন্ধু পার।
ন- নয়ন সাফল্য হয় দর্শনে তোমার
তব দ্বারে করজোড়ে মিনতি অপার।
দ্বী- দ্বীপের আলোকে যথা তিমির বিনাশে
পী- পীরে মোরশিদ হাদী তোমার প্রকাশে।

টীকা:

(১) আল্লাহ তা’আলা যাহাকে ইচ্ছা করেন, বিশেষ নেয়ামত দান করিয়া থাকেন। -(কোরআন)

(২) যখন কোন মহামানব ছাহেবে মোকাম্মেল ‘হু’ এই ধরাধাম হইতে বেছাল ফরমাইয়া মহাজাতের সঙ্গে মিলিত হন, সেই তারিখের ওরশকে ওরশে বেছালী বলে। যে মহা মানব ‘হু’ এয়া ‘হু’ এর কেন্দ্র হইয়া কঠোর সাধনা বলে ও মাওলার অসীম মেহেরবাণীতে পূর্ণ তজকিয়া বা পবিত্রতা লাভ করতঃ পরমাত্মার একাঙ্গিভ‚ত হইয়া তাঁহার সর্বশক্তিতে শক্তিমান ও বেলায়তে ওজমার অধিকারী হন ঐ তারিখের ওরশকে ওরশে হায়াতি এবং যেই তারিখে তওয়াল্লাদ হন ঐ তারিখের ওরশকেও ওরশে হায়াতি বলে। এটা আত্মা ও পরমাত্মার মিলন সম্পর্কিত রহস্যমূলক খুশি বা রুহি এবাদতের দিন।
অতঃপর মাওলানা আকদছ (ক.) কেবলার তাওয়াল্লাদ ও বেলায়ত মর্যাদালাভ ৭ মাঘ ছিল, তাই তিনি জীবিত থাকাকালীন বেলায়ত লাভ ও গদীনশীন সময় থেকে ৭ মাঘ ওরশ শরীফ মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হইয়া আসিতেছে। ইহাতে রহমানিয়া শানের অশেষ ফয়েজ রহমত বরকত এবং প্রত্যেক নবী অলিগণের করুণা দৃষ্টি আকর্ষণ ও দ্বীন দুনিয়ার কামিয়াবী হাছেল হয়। তাঁহার বেছালী ওরশ শরীফ প্রতি বৎসর ১২ ভাদ্র এবং চান্দ্র বার্ষিকী ওরশ শরীফ ১২ জিলহজ্ব তারিখে উদ্‌যাপিত হয়।

(৩) জ্বিল্-প্রতিচ্ছবি-প্রতীক।
(৪) আল্লাহ নিত্য নতুন শানময় (কোরান) হাদিস শরীফে আছে- আমি গুপ্তই ছিলাম, যখন সৃষ্টি করিতে মনস্থ করিলাম, তখন নিজকে পরিচিত করার বাসনা জাগ্রত হইল সৃষ্টি করিলাম। প্রথম সৃষ্টি যাহা আমি প্রশংসা করিতেছি বলিতে নিজের প্রশংসায় ব্যক্ত হইল ‘নুরে মোহাম্মদী’। আরবি ‘আহমদু’ অর্থ আমি প্রশংসা করিতেছি। ইহাতে খোদার গুনজ নুরানী অবয়বতার হাকিকতে ইনছানী মানবসত্ত্বা বিকশিত হইল। ইনছান বা মানব ‘উনছুন’ ধাতু হইতে উৎপন্ন, উনছুন অর্থ ভালবাসা। শায়েরের উক্তি-
من آں نورم کہ اند لا مکان موجود بودستم
باشراق خودم خود شاہد و مشہور بودستم

অর্থাৎ আমি সেই নুর যাহা লামকানে মৌজুদ ছিলাম। আমি স্বয়ংই আপন নুরের দর্শক এবং দৃশ্য ছিলাম।
زبہر رفع شرک و دفع وہم ہشتی غیری
بشکل انبیاء و اولیاء موجود بودستم
অর্থাৎ শির্ক ধ্বংস করিবার জন্য এবং গায়রুল্লার হাস্তির কল্পনা বিনাশ করিবার জন্য আম্বিয়া ও আউলিয়ার রূপে নিজকে প্রকাশ করিয়াছি।
لباس بوالبشر پوشید مسجود ملک
بتصویر محمد حامد محمود بودستم
অর্থাৎ হযরত আদম (আ.) এর পোষাক (আকৃতি) পরিধান করিয়া আমি ফেরেস্তাগণের ছজিদা গ্রহণ করিয়াছিলাম। হযরত মোহাম্মদ (দ.) এর আকারে (রূপে) আমি নিজেই প্রশংসাকারী এবং প্রশংসিত হইয়াছি।

نیاز اندر حقیقت لایزال و لم یزل ہستم
مگر باین تعبس نیست و نابود بودسستم
অর্থাৎ হে নেয়াজ আমি প্রকৃতপক্ষে অমর ও অপরিবর্তনীয় কিন্তু সৃষ্টি লীলায় আমার মৃত্যু ও ধ্বংস হইয়াছিল।

الانسن سرى وانا سره
(৫) ‘মানুষ আমার রহস্য আমি মানুষের রহস্য’

(৬) মৌলানা রুমী মসনবীতে বলেন-
در حقیقت او بود نائب رسل
در دلش احکام حق گردو نزول

প্রকৃত প্রস্তাবে সেই ব্যক্তিই রসূলুল্লার নায়েব বা প্রতিনিধি যেই ব্যক্তির দিলের মধ্যে খোদার হুকুম নাজেল বা অবতীর্ণ হয়।

(৭) রহমান খোদার রহমত পরিপূর্ণ আদি ও গুপ্ত নাম। পবিত্র কোরআনপাকে বর্ণিত আছে- রহমান রহমত পরিপূর্ণ অবস্থায় নিজ আসনে উপবিষ্ট-

(কোরআন)। সৃষ্টির পূর্বে সৃষ্ট জীবের জন্য আবশ্যকীয় বস্তুকে মৌজুদকারী স্রষ্টার গুপ্ত গুণবাচক নাম ‘রহমান’। যথা- সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে মায়ের স্তনে দুগ্ধের উৎপত্তি বা সৃষ্ট হইতে দেখা যায়।

সৃষ্টির পর সৃষ্ট জীবের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ স্রষ্টা হইতে সৃষ্টির নিকট দান স্বরূপ যাহা আসে, তাহার দাতার গুণজ প্রকাশ নাম ‘রহিম’ যথা ছেলে ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের স্নেহে ও ছেলের দুধ পান আগ্রহের ফলে যে দান সৃষ্ট জীবে অর্পিত হয় তাহাই ‘রহিমী’ গুণবাচক প্রকৃতির বিকাশ।

ঘ) এই দুই নামের মাধ্যমে জগতের আবর্তন, বিবর্তন ও ক্রম বিকাশাদি সংগঠিত হয়। তাই কোরআন পাকের প্রত্যেক সুরার প্রারম্ভে ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা দেখা যায়। আল্লাহ তা’আলার ৯৯টি গুণবাচক নামের মধ্যে কোরআনের সর্বপ্রথমে তাঁহার এই ‘রহমান ও রহিম’ বিশেষণ দুইটিকে বাছিয়া লওয়া হইয়াছে। হাদিস শরীফে আছে-
تَخَلَّقُوْا بِاَخْلَاقِ الله

অর্থাৎ ‘নিজের চরিত্রকে আল্লাহর গুণ পুঞ্জের অনুরূপভাবে গঠন করিয়া লইতে চেষ্টা কর।’ তাহা হইলে দেখা যায় সর্বপ্রথমে আল্লাহর প্রেম ও দয়া গুণের অনুবর্তী হওয়ার জন্য সাধনা করিতে হইবে। অলিউল্লাহ গণের সঙ্গ লাভ করতঃ আল্লাহ তা’আলার স্মরণ প্রার্থী হইতে হইবে। এমনভাবে নিজের চরিত্র গঠন করিয়া লইতে হইবে, যাহাতে সে দুনিয়ার সকলকেই আপন পর নির্বিশেষে নির্বিকারে প্রেম দান করিয়া যাইতে পারে।
হাদিস শরীফে আছে-
ইহকালে ও পরকালে যাহার অপরিসীম করুণা ও অনন্ত প্রেম সমানভাবে বিশ্বচরাচরকে ব্যাপ্ত করিয়া বিরাজমান তিনিই ‘রহমান’ ও ‘রহিম’। (ফতহুল বয়ান) মোহাম্মদ অছিয়র রহমান নাম অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ তাঁহার বেলায়তে ওজমার অধিকারী হওয়ার পরিচায়ক।

মৌলানায়ে আকদছ শাহ চরণদ্বীপি (ক.) কেবলার জীবনী শরীফ থেকে সংগৃহিত

লিংক https://play.google.com/store/apps/developer?id=Senani+International

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here