বিভাগের সম্পাদক

সদকাতুল ফিতর বা জাকাতুল ফিতর একটা আবশ্যিক দান। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রোজাদাররা অভাবীদের এটি দিয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন রোজা রাখার পর যেহেতু দিনের বেলা ইফতার বা আহারপর্ব শুরু করা হয়, সে কারণে এটাকে ফিতরের তথা আহারের জাকাত বলা হয়। (ফাতহুল বারি : ৩/৪৬৩)

‘জাকাতুল ফিতর ও সাদাকাতুল ফিতর’ এর অর্থ হলো জাকাত বা ফিতরের সদকা। রোজাদার যে খাবার খেয়ে রোজা ভঙ্গ করেন, তাকে ফিতর বা ফাতুর বলা হয়। (আল-মুজাম আল-ওয়াসিত, পৃষ্ঠা: ৬৯৪)

জাকাত যেমন আর্থিক ইবাদত। সদকাতুল ফিতর বা ফিতরাও ঠিক তেমিনি একটি আর্থিক ইবাদত। রোজা পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক ভুলত্রুটি হয়। তাই এসব ভুলত্রুটির কাফফারাস্বরূপ মহানবী (সা.) এ বিধান দিয়েছেন।

ফিতরা আদায় করা ইসলামী বিধান মতে ওয়াজিব। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপর এটা ওয়াজিব।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৫১২)

ফিতরার নিসাব জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত হয়ে ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল ক্বাদির : ২/২৮১)

ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে শরিয়তে দুটি মাপকাঠি রয়েছে : তা হচ্ছেএক সা  নিসফে সা

খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে এক ‘সা’=৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়) অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি (ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম)। আর গম দ্বারা আদায় করলে ‘নিসফে সা’=১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়) অর্থাৎ এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে। (আওজানে শরইয়্যাহ পৃ. ১৮)

মহানবী (সা.)-এর যুগে মোট চারটি পণ্যের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো—খেজুর, কিশমিশ, জব ও পনির। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বুখারি)

ওপরে উল্লেখিত খাদ্যবস্তু যেমন দেওয়া যাবে, তেমনি সেগুলোর পরিবর্তে কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে তার মূল্যও আদায় করা যাবে। মূল্যের দিক থেকে খাদ্যবস্তুগুলোর মাঝে তফাৎ থাকায় সবচেয়ে কম দামের বস্তুকে মাপকাঠি ধরে ফিতরা আদায় করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। বর্তমান বাজারদর হিসাবে যেহেতু গমের দামই সবচেয়ে কম, তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর আধা ‘সা’ গমকে মাপকাঠি ধরে ওই সময়ের বাজারদর হিসাবে তার মূল্য ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ (এ বছর তা ৭০ টাকা) ঘোষণা করা হয়। আর পনির দ্বারা আদায় করলে সর্বোচ্চ বাজার মূল্যে এবার ফিতরা ১ হাজার ৯৮০ টাকা।

নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মূল্যের খাদ্যবস্তুকে মাপকাঠি ধরে ফিতরা আদায় করা উত্তম। কারণ সদকার ক্ষেত্রে গরিবদের প্রয়োজন পূরণ ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণই হলো গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য আদায়কারীর সামর্থ্যও বিবেচনায় রাখা হয়।

ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে জাকাতের মতো সে সময়ের আগেও তা আদায় করা যায়।

এবারও জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ৭০ টাকা

ডেস্ক  :     রমজানে এ বছরও বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরও সর্বনিম্ন ৭০ টাকাই ছিল। তবে সর্বোচ্চ ছিল এক হাজার ৯৮০ টাকা।

সোমবার (৪ মে) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এই হার নির্ধারণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। এতে ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট আলেমরা উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় যে, ইসলামী শরীয়াহ মতে সামর্থ্য অনুযায়ী আটা, খেজুর,গম, কিসমিস, পনির ও যবের যেকোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজার মূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা যায়।

আটার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা’)। খেজুর, কিসমিস, পনির ও যবের ক্ষেত্রে ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের (এক সা’) মাধ্যমে সাদকাতুল ফিতর (ফিতরা) আদায় করতে হয়। এসব পণ্যের বাজার মূল্য হিসাব করে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আটার ক্ষেত্রে ফিতরা এক কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা’) আটা বা এর বাজার মূল্য ৭০ টাকা। যবের ক্ষেত্রে (এক সা’) ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২৭০ টাকা ফিতরা দিতে হবে। গমের ক্ষেত্রে (অর্ধ সা’) এক কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৭০ টাকা ফিতরা দিতে হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ফিতরার পণ্যের স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। সে অনুযায়ী স্থানীয় মূল্য পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সকল সামর্থ্যবান মুসলিমের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। একইভাবে ফিতরার খাদ্য ঈদের নামাজের আগেই বণ্টন করাও ওয়াজিব। ঈদের নামাজের পর পর্যন্ত দেরি করা জায়েয নয়। বরং ঈদের এক বা দুই দিন আগে আদায় করে দিলে কোন অসুবিধা নেই।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ বা ২৫ মে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারেণ এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রধান ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ, জাতীয় মুফতি বোর্ডের সদস্য সচিব মো. নূরুল আমীন, লালবাগ মাদরাসার প্রধান মুফতি মো. ইয়াহিয়া, তেজগাঁওয়ের মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা নেসারিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসার প্রধান মুফতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, জামিয়া আশরাফিয়া মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আ. আলীম ফরিদী, জামিয়া শারইয়্যাহ মাদরাসার সহকারি মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার ও মো. আনিছুর রহমান সরকার, উপ-পরিচালক ও মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালিয়ূর রহমান খান, সম্পাদক ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, সম্পাদক ড. মাওলানা আবদুল জলীল, মুফাসসির ড. মাওলানা মুহাম্মদ আবু সালেহ পাটোয়ারী, মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ড. মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, মিজানুর রহমান সাঈদ উপস্থিত ছিলেন।

এবি/টিআর

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here