তারাবীহর নামাজ বিশ রাকাত পড়া সুন্নত। আট রাকাত পড়া সুন্নতের বরখেলাপ।

#১) কুরআন শরীফে সূরা আছে, আয়াত আছে, রুকূও আছে। কুরআন শরীফে রুকূর উৎপত্তি কোথা হতে
এবং তাকে রুকূ কেন বলা হয় তা দেখা প্রয়োজন।
রুকূ মানে নত হওয়া। তাজবীদের কিতাব সমূহ থেকে জানা যায় যে, হযরত ওমর ও ওসমান (রাঃ) তারাবীহের নামাজে যে পরিমাণ কুরআন পাঠ করে রুকূতে যেতেন, সেই অংশের নাম রুকূ রাখা হয়েছে।
তারাবীহের নামাজ বিশ রাকাত এবং রমযানের সাতাশ তারিখে কুরআন খতম এ হিসাব ধরলে কুরআনে পাকে মোট ৫৪০ রুকূ হওয়ার কথা।
যেহেতু কুরআন খতমের দিন কোন কোন রাকাতে ছোট ছোট সূরা একসাথে কয়েকটা পড়ে ফেলা হতো তাই কুরআন শরীফ মোট ৫৫৭ রুকূ সম্বলিত হয়েছে। কুরআনের রুকূর সংখ্যা প্রমাণ করছে যে তারাবীহ এর নামাজ ২০ রাকাত। রুকূর সংখ্যার সাথে আট রাকাত তারাবীহের কোন মিল আছে কি……..????

#২) প্রথমত, আরবি ব্যাকরণে বচন তিন প্রকার।
— ওয়াহেদ বা একবচন।
–তাসনিয়া বা দ্বিবচন।
— জামা-আ্ বা বহুবচন।
দ্বিতীয়ত, তারাবীহ শব্দের অর্থ হল শরীরকে আরাম দেওয়া। তারাবীহের নামাজে প্রতি চার রাকাত পর পর কিছুক্ষন বসে শরীরকে আরাম দেওয়া হয় তাই এ নামাজের নাম তারাবীহ।
তারাবীহ শব্দটি তরবীহা এর বহুবচন। আরবি ব্যাকরণে দুবার হলেও বহুবচন হয়না, বহুবচন হতে হলে কমপক্ষে তিনবার হতে হয়।
যদি তারাবীহের নামাজ আট রাকাত হয় তাহলে এর মধ্যে শুধু একবার বিশ্রাম পাওয়া যায়। কেননা বিতিরের নামাজের পূর্বে বিশ্রাম নেওয়া হয়না। এ নামজে যদি শুধু একবার বিশ্রাম থাকে তাহলে এর নাম
তারাবীহ করে বহুবচন কেন রাখা হয়েছে..??
সুতারাং কমপক্ষে তিনবার বিশ্রাম পেতে হলে তারাবীহের নামাজ নূন্যতম ষোল রাকাত হওয়া প্রয়োজন।
ষোল রাকাত প্রয়োজন কারণ বিতরের নামাজের পূর্বে কোন বিশ্রাম নেওয়া হয়না।

#৩) প্রতিদিন ২০ রাকাত নামাজ অত্যাবশ্যক- ১৭ রাকাত ফরজ ও তিন রাকাত বিতর। যথা —
-ফজরে দু রাকাত ফরজ।
-যোহরে চার রাকাত ফরজ।
– আসরে চার রাকাত ফরজ।
– মাগরিবে তিন রাকাত
– এশায় চার রাকাত ফরজ ও
তিন রাকাত বিতর।
পবিত্র রমজান মাসে মহান রাব্বুল আলামীন এ বিশ রাকাতে পরিপূর্ণতার জন্য ও বরকত দান করে আরও বিশ রাকাত তারাবীহের নামাজ নির্ধারণ করেছেন। যারা তারাবীহের নামাজ আট রাকাত বলে তারা সম্ভবত দৈনিক আট রাকাত ফরজ নামাজ পড়ে নতুবা আট রাকাতের সাথে বিশ রাকাতের কি সামঞ্জস্য থাকতে পারে……..????

#৪)রাসূল (সঃ) এ নামাজ নিয়মিত আদায় করেননি। কেবল দু এক দিন আদায় করেছিলেন।
অবশ্য তিনি বলে দিয়েছেন যে প্রতিদিন আদায় করলে এ নামাজ ফরজ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। তাই তোমরা ঘরে পড়ে নিও। লোকেরা আলাদা আলাদা ভাবে পড়ে নিতেন। হযরত সিদ্দীকে আকবরের আমলেও এ নামাজের জন্য কোন সুষ্ট ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। লোকেরা আলাদা আলাদা ভাবে পড়ে নিতেন। হযরত ফারুকে আজম (রাঃ) এ নামাজ বিশ রাকাত নির্ধারন করে জামাত সহকারে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। নিয়মিতভাবে বিশ রাকাত আদায় করাটা সুন্নতে ফারুক (রাঃ)। আমাদেরকে নির্দেশ
দেয়া হয়েছে “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত পালনীয়।”

#৫)ইবনে আবি শিবা, তিবরানী, কবীর, বাইহাকী,আবদ ইবনে হামিদ ও বগবী বর্ণণা করেছেন যে- “আন ইবনে আব্বাস আন্না নবীয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কানা ইউসাল্লি ফি রামাদান ইশরিনা রাকাতা চাওআল বিতর।” অর্থাৎ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত রাসূল (দঃ) রমযানে বিতরের পূর্বে বিশ রাকাত নামায পড়তেন। এ থেকে বুঝা যায় যে স্বয়ং রাসূল (সঃ) বিশ রাকাত তারাবীহের নামাজ পড়তেন।

#৬)মোল্লা আলী কারী (রহঃ) শরহে নেকায়ায় বর্ণণা করেছেন- সাহাবায়ে কেরাম হযরত ওমর, ওসমান ও আলী (রাঃ) এর শাসন আমলে বিশ রাকাত তারাবীহের নামাজ পড়তেন।সুতারাং এ বিষয়ে ঐক্যমত
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

#৭) তারাবীহ মূলত সুন্নতে রাসূল। এবং পুরো রমজান মাস জুড়ে, জামাত সহকারে, বিশ রাকাত পড়া সুন্নতে ফারুক (রাঃ)। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ রাকাত পড়েননি পড়ার আদেশও
দেননি। যদি আট রাকাত পড়া হয় সুন্নতে ফারুক (রাঃ) বাদ পড়ে যায়। যদি বিশ রাকাত পড়া হয় তাহলে সবার উপর আমল হয়ে যায়।

# বিশ_রাকাত_তারাবীহ_প্রসঙ্গে_লা_মাযহাবীদের_আপত্তি_ও_তার_জবাব
#১) মিশকাত শরীফে বর্ণিত আছে হযরত ওমর (রাঃ) আবি কাব ও দারমী (রাঃ) কে নির্দেশ দিয়েছেন যেন লোকদেরকে এগার রাকাত নামাজ পড়ায়। এতে প্রমাণিত হয় যে তারাবীহ আট রাকাত বাকী তিন
রাকাত বিতর।
# জবাব : প্রথমত এ হাদীসটি মযতরব, অর্থাৎ একই রাবী থেকে বিভিন্ন রেওয়ায়েত পাওয়া। এ রকম হাদীস দলিল হিসাবে উপস্থাপন করা যায়না।
এ হাদীসের রাবী হচ্ছে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ।মুয়াত্তাতে তার থেকে এগার রাকাত বর্ণিত আছে।মুহাম্মদ ইবনে নসর মরুজী তার বরাত দিয়ে তের রাকাত বর্ণণা করেছেন।এবং মুহাদ্দিস আবদুর রাযযাক
তার বরাত দিয়ে একুশ রাকাত বর্ণণা করেছেন। সুতারাং এরুপ মযতরব হাদীস দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়তঃ যদি লা মাযহাবীদের দাবি মত এ হাদীসকে সহীহ বলে ধরে নেওয়া হয় তাহলে তারাবীহ আট রাকাত বিতর তিন রাকাত প্রমাণিত হল।
কিন্তু তারা বিতর এক রাকাত পড়ে কেন….???
#২) বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে যে হযরত আবু সালমা হযরত আয়েশা সিদ্দীকার কাছে প্রশ্ন করেছিলেন হুযুর (দঃ) রমযানের রাতে কত রাকাত পড়তেন?
তিনি উত্তরে বলেছিলেন হুযুর (দঃ) রমযান ও রমযান ছাড়া আট রাকাতের বেশী পড়তেন না ।
এতে প্রমাণিত হয় তারাবীহের নামায আট রাকাত।
# জবাবঃ- উক্ত হাদীসে তারাবীহ নয় তাহাজ্জুদের কথা বলা হয়েছে। কেননা আয়েশা সিদ্দীকা বলেছেন যে হুযুর (দঃ) রমযান ও রমযান ছাড়া আট রাকাতের অতিরিক্ত পড়তেননা। এতে বুঝা গেল এটা
সেই নামাজ যা সবসময় পড়া হয়। এটা তারাবীহ হতে পাড়েনা কারণ তারাবীহ শুধু রমযানেই পড়া হয়।
আরো জানতে চরণদ্বীপ দরবার শরীফের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন
ঐতিহ্যবাহী চরণদ্বীপ দরবার শরীফ বোয়ালখালী-চট্রগ্রাম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here