পবিত্র কোরআন পড়ার মাধ্যমে তারাবিহর নামাজ আদায় করা রমজান মাসের অন্যতম আমল। ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশব্যাপী প্রতিদিনের তারাবিহর নামাজে কোরআনের নির্ধারিত অংশ পড়া নির্ধারণ করেছেন। যাতে যে কেউ দেশের যেকোনো মসজিদে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে চাইলেও পরিপূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত শোনা থেকে বঞ্চিত না হন।

আহমেদ ফাইয়াদ

খতম আরবি শব্দ, অর্থ শেষ। পবিত্র কোরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করাকে খতম বলা হয়। ধর্মপরায়ণ মুসলমানদের বিশ্বাস, পবিত্র কোরআন খতম করায় অত্যধিক সওয়াব হাসিল হয়। রমজান মাসে তারাবিহর নামাজে পবিত্র কোরআন খতম করা হয়। কয়েকজন হাফেজ এক রাতে তারাবিহ নামাজে পবিত্র কোরআন ‘খতম’ করলে তাকে শাবিনা খতম বলা হয়।

পবিত্র কোরআন পড়ার মাধ্যমে তারাবিহর নামাজ আদায় করা রমজান মাসের অন্যতম আমল। ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশব্যাপী প্রতিদিনের তারাবিহর নামাজে কোরআনের নির্ধারিত অংশ পড়া নির্ধারণ করেছেন। যাতে যে কেউ দেশের যেকোনো মসজিদে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে চাইলেও পরিপূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত শোনা থেকে বঞ্চিত না হন।

রমজান মাসে ২৭ দিনে পুরো কোরআন পাঠের মাধ্যমে মুসল্লিরা তারাবিহর নামাজ আদায় করেন। যা ‘খতমে তারাবিহ’ নামে পরিচিত। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সূচিত হয় রমজান মাস। তারাবিহর নামাজও পড়া শুরু হয় সেদিন থেকে।

তারাবিহতে নিয়মানুযায়ী প্রথম ছয় দিন দেড় পারা করে তিলাওয়াত করা হবে। ছয় দিনে পড়া হবে ৯ পারা। আর বাকি ২১ দিনে এক পারা করে পড়ানো হবে।

তারাবিহতে কোন দিন কোন সুরা

প্রথম দিন: সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াত থেকে সুরা বাকারার ২০৩ আয়াত

দ্বিতীয় দিন: সুরা বাকারার ২০৪ আয়াত থেকে আলে ইমরানের ৯১ নম্বর আয়াত

তৃতীয় দিন: সুরা আলে ইমরানের ৯২ থেকে সুরা নিসার ৮৭ আয়াত

চতুর্থ দিন: সুরা নিসার ৮৮ থেকে সুরা মায়িদাহর ৮২ আয়াত

পঞ্চম দিন: সুরা মায়িদাহর ৮৩ থেকে সুরা আরাফের ১১ আয়াত

ষষ্ঠ দিন: সুরা আরাফের ১২ থেকে সুরা আনফালের ৪০ আয়াত

সপ্তম দিন: সুরা আনফালের ৪১ আয়াত থেকে সুরা তওবার ৯৩ আয়াত

অষ্টম দিন: সুরা তওবার ৯৪ আয়াত থেকে সুরা হুদের ৫ আয়াত

নবম দিন: সুরা হুদের ৬ আয়াত থেকে সুরা ইউসুফের ৫২ আয়াত

দশম দিন: সুরা ইউসুফের ৫৩ আয়াত থেকে সুরা হিজরের ১ আয়াত

১১তম দিন: সুরা হিজরের ২ আয়াত থেকে সুরা নহলের ১২৮ আয়াত

১২তম দিন: সুরা বনি ইসরাইলের ১ আয়াত থেকে সুরা কাহাফের ৭৪ আয়াত

১৩তম দিন: সুরা কাহাফের ৭৫ আয়াত থেকে সুরা তোহার ১৩৫ আয়াত

১৪তম দিন: সুরা আম্বিয়ার ১ আয়াত থেকে সুরা হজের ৭৮ আয়াত

১৫তম দিন: সুরা মুমিনের ১ আয়াত থেকে সুরা ফোরকানের ৭৭ আয়াত

১৬তম দিন: সুরা শুআরার ১ আয়াত থেকে সুরা নমলের ৫৯ আয়াত

১৭তম দিন: সুরা নমলের ৬০ আয়াত থেকে সুরা আনকাবুতের ৪৪ আয়াত

১৮তম দিন: সুরা আনকাবুতের ৪৫ আয়াত থেকে সুরা আহজাবের ৩০ আয়াত

১৯তম দিন: সুরা আহজাবের ৩১ আয়াত থেকে সুরা ইয়াসিনের ২১ আয়াত

২০তম দিন: সুরা ইয়াসিনের ২২ আয়াত থেকে সুরা জুমার ৩১ আয়াত

২১তম দিন: সুরা জুমার ৩২ আয়াত থেকে সুরা হা-মিমের সাজদা ৪৬ আয়াত

২২তম দিন: সুরা হা-মিম সাজদার ৪৭ আয়াত থেকে সুরা জাসিয়ার ৩৭ আয়াত

২৩তম দিন: সুরা আহকাফের ১ আয়াত থেকে সুরা জারিয়াতের ৩০ আয়াত

২৪তম দিন: সুরা জারিয়াতের ৩১ আয়াত থেকে সুরা হাদিদের ২৯ আয়াত

২৫তম দিন: সুরা মুজাদালার ১ আয়াত থেকে সুরা তাহরিমের ১২ আয়াত

২৬তম দিন: সুরা মুলকের ১ আয়াত থেকে সুরা মুরসালাতের ৫০ আয়াত

২৭তম দিন: সুরা নাবার ১ আয়াত থেকে সুরা নাসের ৬ আয়াত

ফজিলত

পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘শাহরু রমাদানাল্লাজি উনজিলা ফিহিল কোরআন, হুদাললিন্নাসি ওয়া বায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান।’ অর্থাৎ রমজান মাস এমন যে তাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে ও হেদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

রমজানের পাঁচটি সুন্নত-১. সাহ্‌রি খাওয়া, ২. ইফতার করা, ৩. তারাবিহর নামাজ পড়া, ৪. কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা, ৫. ইতিকাফ করা। এই পাঁচ সুন্নতের দুটিই হলো প্রাকৃতিক প্রয়োজন; যা মানুষ বাধ্য হয়ে করে থাকে। রোজা রাখার শক্তি-সামর্থ্য অর্জনের জন্য সাহ্‌রি খাওয়া এবং রোজার ক্লান্তি ও ক্ষুধা নিবারণের জন্য পানাহার বা ইফতার করা। মূলত শেষোক্ত তিনটিই হলো রমজানের মূল ইবাদত বা মৌলিক উদ্দেশ্য। আর এই তিনটির সঙ্গেই রয়েছে কোরআনের একান্ত সম্পর্ক। যথা রমজানের তৃতীয় সুন্নত তারাবিহর নামাজ, এতে কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, যা নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব রুকন এবং খতমে তারাবিহতে পূর্ণ কোরআন মাজিদ খতম করা হয়, যা সুন্নত। রমজানের চতুর্থ সুন্নত কোরআন তিলাওয়াত। সাহাবায়ে কিরাম প্রায় সারা বছর প্রতি মাসের প্রতি সপ্তাহে পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার তিলাওয়াত করতেন। প্রতি সাত দিনে এক খতম পড়তেন বলেই কোরআন মাজিদ সাত মঞ্জিলে বিভক্ত হয়েছে। তাঁরা রমজান মাসে আরও বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন।

হজরত উসমান (রা.) সূত্রে নবী (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (সহিহ বুখারি)

হজরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমজানে হজরত জিবরাইল (আ.)-কে অবতীর্ণ পূর্ণ কোরআন একবার শোনাতেন এবং হজরত জিবরাইল (আ.) ও নবী করিম (সা.)-কে অবতীর্ণ পূর্ণ কোরআন একবার শোনাতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শেষ রমজানে দশম হিজরির রমজান মাসে মহানবী (সা.) হজরত জিবরাইল (আ.)-কে পূর্ণ কোরআন মাজিদ দুবার শোনান এবং হজরত জিবরাইল (আ.)-ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূর্ণ কোরআন শরিফ দুবার শোনান।

এতে বোঝা গেল, রমজান শুধু কোরআন নাজিলের মাস নয়; বরং রমজান মাস হলো কোরআন শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ, কোরআন পঠনপাঠন ও কোরআনচর্চার মাস এবং সর্বোপরি রমজান মাস হলো জীবনের সর্বক্ষেত্রে কোরআন অনুশীলন ও বাস্তবায়নের মাস।

কোরআন মাজিদে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘আমার স্মরণোদ্দেশ্যে সালাত কায়েম করো।’ (সুরা তোহা, আয়াত: ১৪)। তাই নামাজের উদ্দেশ্যও হলো আল্লাহর জিকির।

কোরআন মাজিদের ৭২টি নামের ৩টিই হলো জিকির বা স্মরণ। যথা: ১. জিকরুল হাকিম বা কৌশলগত স্মরণ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৫৮); ২. আজ জিকর বা মহাস্মরণ (সুরা হা-মিম সাজদা, আয়াত: ৪১); ৩. তাজকিরা বা স্মারক (সুরা আবাসা, আয়াত: ১১)।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কদরের রজনীতে কোরআন নাজিল করেছি। আপনি জানেন কি? কদরের রজনী কি? কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম! সে রাতে ফেরেশতারা অবতীর্ণ হন, জিবরাইল (আ.)-সহ; তাঁদের রবের নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে সব বিষয়ে শান্তির ফয়সালা নিয়ে; তা ঊষার উদয় পর্যন্ত।’ (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)। সুরা কদরের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কদর রাতে কোরআন নাজিল করেছি।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here