বরুণ কুমার আচার্য বলাই

উপমহাদেশের সুফি সাধনার একটি বিশেষ ধারা মাইজভান্ডারী দর্শন। মানুষের দৈনন্দিন জীবনাচরণে নিস্প্রোয়োজনীয় চিন্তা, কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত রেখে অল্পে সন্তুষ্টির যে সুফি দর্শণ মানুষকে ঝামেলা ও মানসিক চাপমুক্ত অবস্থায় মানসিক প্রশান্তিতে নির্বিলাস জীবন যাপনে অভ্যস্ত করতে সমর্থ হয় এবং মানুষের ব্যাক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় ও বৈশ্বিক পারস্পরিক সম্পর্কের ম‚লমন্ত্র হিসেবে অবদান রাখতে সাহায্য করে, সেটিই হচ্ছে মাইজভান্ডারী দর্শনের মহান শিক্ষা।
এ দর্শনের প্রতি অনুরাগ হয়ে অসংখ্য মানুষ নিজেকে নির্লোভ আর অহংকার থেকে বিশুদ্ধতার পরিচয়ে উপস্থাপন করে মহান স্রষ্টার আনুগত্য লাভ করেছে তার প্রমান বহুমাত্রিক। ধর্ম গোত্র নির্বিশেষে সকল মানব সন্তান এ দর্শনের প্রতি আগ্রহী হলেই নিজের কাযক্রমকে আয়নার সামনে উপস্থাপনের অপার সুযোগ থাকে।
মাইজভান্ডারী দর্শন বা ত্বরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সেমা মাহফিল। আর সেমা মাহফিলের অন্যতম সহায়ক উপাদান হচ্ছে মরমী গান বা মাইজভান্ডারী সংগীত। মাইজভান্ডারী সংগীত বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন প্রায় দশহাজারেরও অধিক মাইজভান্ডারী গান উপমহাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
মূলতঃ মাইজভান্ডারী গান হচ্ছে একটি আধ্যাত্মিক সংগীত যা’ স্রষ্টার প্রেমে ভক্তকুলের হৃদয়কে উদ্বেলিত করে ভাব-বিহব্বলতায় বিভোর করে দেয়, স্রষ্টার নৈকট্য হাসিলে সহায়তা করে এবং স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির যোগসূত্র স্থাপন করে। এ সংগীতের নুর ও কথা ভক্তকুলের হৃদয় মনকে অনাবিল স্বর্গীয় পবিত্রতায় ভরে দেয়।
এই মাইজভান্ডারী মরমী গান রচনায় গুরুজী রমেশ শীল এক বিশেষ অবস্থান অধিকার করে আছেন। রমেশ শীল তাঁর প্রতিটি গান রচনার শীর্ষে এর তাল সম্পর্কে নির্দেশ দিতেন। শিল্পী-প্রতিভার বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী উপমহাদেশ খ্যাত লোককবি, কবিয়াল সম্রাট, ও মাইজভান্ডারী গানের অন্যতম গীতিকার গুরুজী রমেশ শীলের আবির্ভাব (জন্ম) বাংলা ১২৮৪ সালের ২৬ বৈশাখ, ৯মে ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে বোয়ালখালী উপজেলার পূর্বগোমদন্ডী গ্রামে। মাত্র তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেন।
কবিয়াল হিসেবে রমেশ শীলের যশ-খ্যাতি আঞ্চলিক সীমা ছাড়িয়ে বাংলার উপমহাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ১৯২৩ সালের (৯মাঘ ১৩৩০বঙ্গাব্দ) সাধক জমিদার সারদা বাবুর সাথে মাইজভান্ডার শরীফ গমন করে কুতুবুল আকতাব হযরত গাউছুল আজম শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারীর (ক.) সান্নিধ্যে গিয়ে কৃপাপ্রাপ্ত হন।
ঐতিহ্যগতভাবে কবিগানের প্রধান বিষয় পৌরাণিক হলেও রমেশ শীল সমকালের নানা ঘটনা এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে গানের বিষয়বস্তু করতেন। তাঁর জীবৎকালে সংঘটিত অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, যুব বিদ্রোহ, দুর্ভিক্ষ, দেশবিভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, ভাষা আন্দোলন, সামাজিক অবিচার, দুর্নীতি, মহাজানি শোষণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি গান বেঁধেছেন এবং সে সব গান গেয়ে জনগণের মনে প্রতিবাদী ও সংগ্রামী চেতনা জাগ্রত করেছেন।
পূর্বে বা অতীতে কবিগান ছিল কেবল চিত্তবিনোদনের মাধ্যম, কিন্তু গুরুজী রমেশ শীল এটিকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ারে পরিণত করেন। এরূপ সংগ্রামী ভূমিকার কারণে তিনি ১৯৫৪ সালে কারাবরণ করেন এবং ১৯৫৯ সালে সরকার কর্তৃক মঞ্জুরিকৃত মাসোহারা হারান। তিনি লঘু বিষয় ও কুরুচির পরিবর্তে গুরু বিষয় ও সুরুচির প্রবর্ত্তন করে কবিগানের গুণগত পরিবর্তন সাধন করেন। এটিও তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।
গুরুজী রমেশ শীলের আরেক মহান কৃতিত্ব মাইজভান্ডারী গান রচনা করা ও তা গেয়ে জনপ্রিয় করে তোলা। হযরত গাউছুল আজম মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) মাইজভান্ডারী (১৮২৬-১৯০৬) ও হযরত গাউছুল আজম মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারী (ক.) (১৮৬৫-১৯৩৭) এর গুণকীর্তন এবং এ ধারার আধ্যাত্মিক মহিমা তুলে ধরে তিনি বহু গান রচনা করেন। তাঁর এ জাতীয় গানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন’শ। গানগুলি বিভিন্ন সময়ে দশটি পুস্তকে প্রকাশিত হয়েছে। পুস্তকগুলি হলো ১) আশেক মাওলা, ২)ভান্ডারে মাওলা, ৩) শান্তি ভান্ডার, ৪)আত্ম তত্ত¡, ৫) নুরে দুনিয়া, ৬) সত্য দর্পন, ৭) জীবন সাথী, ৮) মুক্তির দরবার, ৯) মানব বন্ধু, ১০) বিচ্ছেদ তরঙ্গ।
রমেশ শীল মাইজভান্ডারী তরিকায় আন্তঃপ্রেরণাবশে এ ধারার সাধনসঙ্গীত রচনা করেন। উল্লেখ্য মাইজভান্ডারী তরিকার সম্মোহনী শক্তির নেপথ্যে রয়েছে অসাম্প্রদায়িক মানব ধর্মের চেতনা। আর এই চেতনার মূল উপজীব্য হলো সেমা মাহফিল বা গানবাজনা। মাইজভান্ডারী গানের সাদৃশ্য লক্ষণীয় বড় শক্তি তার অসাস্প্রদায়িক চেতনা। আর এ কারণেই এ গান সাধনমার্গের স্বীয় সীমাবদ্ধ গন্ডি অতিক্রম করে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক চাহিদা পূরণে সমর্থ হয়েছে এবং এখানে অবশ্যই রমেশ শীলের কৃতিত্ব অনন্য। কারণ গুরুজী রমেশই মাইজভান্ডারী গানকে দরবারি মজলিশ থেকে বের করে এনে সাধারণ শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেন। তাই গুরুজী রমেশ রচিত মাইজভান্ডারী গানগুলো উচ্চমার্গীয় সাধনসংগীত হিসেবে রচিত হলেও তা সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায়।
গুরুজী রমেশ শীল প্রকৃত দেশপ্রেমিক, অসা¤প্রদায়িক ও মুক্ত মনের অধিকারী ছিলেন; তিনি লিখেন-
‘হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকল ধর্মের এক কথা,’
এবং ‘মাটির মূর্তির পূজা ছেড়ে মানুষ পূজা কর’
এসব তাঁরই সাহসী উক্তি। ১৯৬২ সালে সমবায় বিভাগ তাদের আদর্শ প্রচারে রচিত গান অবলম্বনে প্রামান্য চিত্র নির্মাণ ও রমেশ রচিত গানের গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৬২ সালে বুলবুল ললিত কলা একাডেমী রমেশ শীলকে শ্রেষ্ঠ লোককবি’র সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করা হয়েছে ‘রমেশ রচনাবলী’।
গুরুজীর রমেশের গানের উপকরণ ছিল- হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র, ইসলাম ধর্ম, লোক সংস্কৃতি, শ্রমজীবী মানুষ, অসা¤প্রদায়িকতা, সমাজ বিপ্লব, সর্বধর্মসমন্বয়বাদ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪), হাস্যরস, গণ আন্দোলন (১৯২০-২২), খিলাফত আন্দোলন, সুফিবাদ, মাইজভান্ডারী দর্শন, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ (১৯৩০), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯), দুভিক্ষ, মন্বত্তর, বোম্বাই নৌবিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, নির্বাচন (১৯৫৪), সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা (১৯৪৬), দেশভাগ (১৯৪৭), জমিদারী উচ্ছেদের ডাক (১৯৪৮), রাজশাহী জেল হত্যা (১৯৫০), মহাত্মা গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলন, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড, দ্বিজাতিতত্ত্ব, গণ আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ভোটরঙ্গ (১৯৫৩), ঘুর্ণিঝড়, নির্বাচন (১৯৫৪), ঘুর্ণিঝড় (১৯৬০), সামরিক শাসন ইত্যাদি।
এই মহান কবিয়ালকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০০২ সালে ‘গণসংগীতে’ মরণোত্তর ‘একুশে পদক’ পুরস্কার প্রদান করেন।
গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের মুখে, রাখালের মুখে, নৌকার মাঝির মুখে শব্দে বা গুনগুন করে যার গানটি গেয়ে সৃষ্টির প্রতি অনুরাগ হতে সাহায্য করে সে অমর গীতিকার গুরুজী রমেশ শীল। রমেশ শীলের গানে এমন সুরের ঝংকার রয়েছে যা’ মানুষকে নৃত্যপ্রবণ করে তোলে। তাল, লয়, ভাব, কথা ও সুরের এক অপূর্ব সমাবেশ রয়েছে রমেশের গানে। ফলে প্রতিটি গানেই এক অপূর্ব সাবলিল গতি পরিদৃষ্ট হয়। তাঁর কালজয়ী জনপ্রিয় অন্যতম গানগুলো হলো-
‘ইস্কুল খুইলাছে রে মাওলা ইস্কুল খুইলাছে
গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী ইস্কুল খুইলাছে’
এবং ‘গাউছেল আজম বাবা নুরে আলম, তুমি ইছমে আজম
জগত তরানেওয়ালা।
নাম ধরেছ বাবা হক ভান্ডারী, বাবা তোহিদের কান্ডারী
নুরী মাওলা।’
রমেশ শীলের পূর্বে মাইজভান্ডারে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছিল, রমেশ শীল সে সুরে ভাষা যোগ করেন। তাঁ রচনার মধ্য দিয়েই ঘটে ভান্ডারী গানের উদ্ভব ও বিকাশ। এভাবে রমেশ শীল মাইজভান্ডারী গানে প্রকৃতই নবযুগের স্রষ্টা এবং বাঙলা মরমী গানের ধারায় ভান্ডারী গানের জনক। অন্যান্য সুফি সাধকদের উদেশ্যে রচিত তাঁর গান বস্তুতপক্ষে ভান্ডারী গানেরই অনুবৃত্তি।
রমেশ শীলের আন্তরিক বিশ্বাস ছিল এমনই-
‘মিমের পর্দা উঠাইলে দেখবি ওরে মন
রাম রহিম কৃষ্ণ করিম মুলেতে একজন।’
তিনি ধর্মে সংকীর্ণ বন্ধনকে অতিক্রম করে মানব ধর্মের জয়গানে লিখেছেন-
‘জেলে ধোপা মুচি জাতি, এ সকল ব্যবসার খ্যাতি
মুলে সকল মানুষ জাতি আর জাতি নাই এ সংসারে।’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন, নিপীড়ন-নির্যাতনের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রমেশ শীলের সার্বজনীন মানবতাকামী মাইজভান্ডারী দর্শনের আলোকে রচিত গানগুলির আবেদন অপরিসীম ও তাৎপর্যমত।
রমেশ শীলকে সুধী সমাজ ‘লোক কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বঙ্কিম চন্দ্র সেন বলেছেন ‘রমেশ জনতার কবি। রমেশ আমার প্রতিচ্ছবি। রমেশ আমাদের সবার।’ মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেছেন ‘রমেশ শীলের গানের ভাষা জনগণের প্রাণে আশার সঞ্চার করে।’ সাহিত্যিক আবুল ফজল বলেছেন ‘রমেশ শীল পল্লী কবিদের মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ। তার গানের মধ্যে জনগণের মুক্তি নিহিত রয়েছে।’ সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছেন ‘রমেশ জনতার সুখ-দুঃখের সাথে মিশে আছেন। তার গান প্রমাণ করে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ জনদরদী’। এ অমর কালজয়ী গীতিকার ১৯৬৭ সালের ৬ এপ্রিল (২৩ চৈত্র, ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ) বৃহস্পতিবার তাঁর পবিত্র আত্মা দেহত্যাগ করেন। নিজের ইচ্ছানুসারে তিরোধানের পর তাঁকে দাহ না করে পৈত্রিক বাস্তুভিটাতেই সমাধিস্থ করা হয়। প্রতি বছর ৬ এপ্রিল সমাধী প্রাঙ্গণে বসে রমেশ মেলা। এতে বিখ্যাত কবিয়ালদের কবি গানের আসর, রমেশ সংগীতানুষ্ঠান, রমেশ রচিত মরমী গানের আসর সহ গ্রামীণ লোকজ মেলা বসে। আর ৯ মে খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ গবেষক শিল্পিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সেমিনার।
রমেশ রচিত ক’টি গান-
এক.
সাধনের কায়দা জানা চাই,
বে কায়দায় করিলে সাধন মাওলা রাজী নাই।
হালকা করা জিকির করা, তরিকতের নমাজ পড়া,
না জেইনে ভজনের ধারা নাচের মুরাদ নাই।
প্রথমে অজু বানাবে, তারপর নিয়ত বাঁধিবে,
আদবেতে দো জানু পাতিয়া বস ভাই।
তারপর দরুদ শরীফ পড়, পীরের বর্জ্জক ধর,
আল্লাহু জিকির কর, তালেতে মিশাই।
ডানে লই বামে ছাড়িলে, এস্কে কলব ঝংকারিলে,
নাচনা কর মজ্নু হালে শখ শোভা তার নাই।
হালকা করা শেষ হইলে, মুনাজাত মাগিয়া নিলে,
রমেশ কয় মনকেরের দলের থাকবে মুখ খিলাই।
দুই.
মাইজভান্ডারী মাইজভান্ডারে উঠেছে তৌহিদের নিশানা,
ঘুমাইওনা মায়া ঘুমে আখেরী জমানা।
খেদমতে হইলে দাখিল
এলমে লদুনি হবে হাছিল,
দোস্ত দুশমন সমান হবে কিসের ভাবনা।
কলব জিন্দা হয়ে যাবে,
মাবুদের দিদার পাবে,
নিজের রূপ দেখিয়া হবে নিজে দিওয়ানা।
আছে মাইজভান্ডারীর দোয়া,
কি সাধ্য আজরাইলের ছোঁয়া,
রমেশ বলে লা পরোয়া, আছে মাওলানা।
তিন.
আমি কি মরণকে ডরি, আমি কি মরণকে ডরি,
আমার বুকের পাটা শক্ত আছে, মালিক মাওলা মাইজভান্ডারী।।
আজরাইল যার আমিও তাঁর,
দুইজন করি দুই চাকুরী,
আজরাইল জান কবছ করে, আমি করি তাবেদারি।।
মোরাকাবা মোশায়েদা,
পীরের বরজক থাকলে ধরি,
রমেশ বলে আজরাইল এলে খোঁজে পায় না তার কোন বাড়ী।।
চার.
আমি বন্ধুর প্রেমাগুণে পোড়া প্রাণ সই গো
আমি মরলে পোড়াইস না তোরা।।
প্রাণ সই গো সই
আমি মরলে না পুড়িও, যমুনাতে না ভাসাইও
তমাল ডালে বেঁধে রাখিস তোর।
আমার বন্ধু যেদিন আসে দেশে, বলিস তোরা বন্ধুর কাছে
তমাল ডালে তোমার প্রেমের পোড়া প্রাণ সই গো..
প্রাণ সই গো সই
বন পোড়া যায় সবাই দেখে, মনের আগুন কেউ না দেখে
দিকে দিকে জ্বলছে এ-কি ধারা।
জ্বলে পুড়ে হইলাম ছাই আর জ্বলিবার বাকি নাই
পোড়া দেহ কি পুড়াবি তোরা প্রাণ সই গো..
প্রাণ সই গো সই
আমার বন্ধু যেদিন ছেড়ে গেছে, আমায় পোড়া দিয়া গেছে
সে পোড়াতে হয়েছি আঙ্গারা।
শোনরে বলি প্রাণের সখি, পুড়িবার কি আছে বাকি
পোড়া ছালি কখন যায় পোড়া প্রাণ সই গো..
লোককবি রমেশ শীলের জীবদ্দশায় পশ্চিমবঙ্গের ও বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। এর মূল কারণ তার মাইজভান্ডারী গানের কথা ও দর্শনের ও ভক্তদের হৃদয়ে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করে। তাঁর সুরের মুন্সিয়ানায় সাধারণ মানুষের অন্তরকে ছোঁয়ে যায়। দেশের প্রেক্ষাপটে মাইজভান্ডারী ভক্তদের কাছে লোককবি রমেশ শীলের গান বেদবাক্যের আবেদন সৃষ্টি করে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here