রাজীব সেন প্রিন্স :
মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও পার্লামেন্টারিয়ান মঈনউদ্দিন খান বাদল আর নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরো একজন বিরল প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ কে হারালো, এ এক অপূরনীয় ক্ষতি। জাতীয় সংসদ আর জাতীয় রাজনীতি, হয়তোবা এই সিংহের গর্জন আর শুনবেনা, কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ, আদর্শিক রাজনীতির এই সিংহ পুরুষকে আজীবন স্মরণ করবেন। বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রিয় মাঈনুদ্দিন খান বাদল, আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায়।

প্রয়াত পিতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাংসদ মাঈনুদ্দিন খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ঠিক এভাবেই নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও মহিউদ্দিনপুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

তিনি আজ বৃহস্পতিবার ১০টা ৫৭ মিনিটে তার ভেরিফাইড ফেসবুক ফেইজে আবেগঘন এক স্ট্যাটাসে এসব কথা উল্লেখ করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের স্টাটাসটি ২৪ ঘন্টা ডট নিউজের পাঠকের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো।

মাঈনুদ্দিন খান বাদল। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় নেতা, অনলবর্ষী বক্তা, সংসদ সদস্য, বীর চট্টলার গৌরব, আরো অনেক কিছুতেই তাকে সম্বোধন করা যায়। না ফেরার দেশে তিনি আজ থেকে থাকবেন। ইন্না-লিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহে রাজিউন। মনে হচ্ছে যেনো আবারো পিতৃহারা হলাম।

দুবছর আগে হঠাৎ স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়েছিলেন যখন, তখন তার বন্ধু মহিউদ্দিন চৌধুরীও গুরুতর ভাবে অসুস্থ, হাসপাতালে। খুব আফসোস করতেন বন্ধুকে দেখে যেতে পারেননাই। অশ্রু সজল নয়নে স্মরণ করতেন। আজ থেকে আমরা তাকে স্মরণ করবো।

চট্টগ্রামের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থে, দেশের সাধারন মানুষের স্বার্থে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে কোথায় ছিলোনা তার গর্জন? প্রথম তার সাথে আমার পরিচয় শৈশবে। এরশাদের দোর্দণ্ড শাসনের সময়। তৎকালীন পিজি হাসপাতাল, আজকের বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের রাজবন্দীদের কক্ষে। আমার বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রিজন সেলের সহবন্দী ছিলেন। এরশাদের সাথে আপস করে মন্ত্রী হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিয়েছিলেন বন্দী জীবন।

আমাকে সমাজতন্ত্র শেখাতেন, দেখতেও ছিলেন স্টালিনের মত, ইম্পোজিং ব্যক্তিত্ব। আমার বাবার সাথে হাস্যরস আর গভীর রাজনৈতিক আলোচনায় মগ্ন থাকতেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কাছ থেকে শুনতাম। পরবর্তীতে যখনই দেখা হতো, প্রতিবার তার কাছ থেকে শিখেছি।

রাজনৈতিক আলোচনা যে শুধুই পদবির আর ক্ষমতার রাজনীতি নয় এবং রাষ্ট্রনীতি, আদর্শ, উন্নয়ন, এসবই হচ্ছে রাজনীতির মূল আলোচনা, বারবার তার সান্নিধ্যে এসে তা অনুভব করেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে, তার সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে, সেই শৈশব থেকে দেখেছি অবিচল দৃঢ়তার সাথে তাকে বলতে।

তিনি আর আমাদের মাঝে নাই। বাংলাদেশের রাজনীতি আরো একজন বিরল প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ কে হারালো, এক অপূরনীয় ক্ষতি। জাতীয় সংসদ আর জাতীয় রাজনীতি, হয়তোবা এই সিংহের গর্জন আর শুনবেনা, কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ, আদর্শিক রাজনীতির এই সিংহ পুরুষকে আজীবন স্মরণ করবেন। বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রিয় মাঈনুদ্দিন খান বাদল, আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায়।

নওফেল তার স্ট্যাটাসে প্রয়াত পিতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে মাইনুদ্দিন খান বাদলের অপর একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, খালেদা সরকার যখন তার বাল্যবন্ধুকে দেয়া চট্টগ্রামের মানুষের ঐতিহাসিক জনরায় ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে তখন সারারাত জনতাকে জাগিয়ে রাখার গুরুদায়িত্ব নেয় বাদল। বিজয়ের হাসিতে মেয়র কামরান। এদের শ্রমে ঘামে আজকের অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সরকারের ভীত রচিত হয়েছিলো।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া মঈন উদ্দীন খান বাদল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম ৮ আসনের তিন তিন বারের সংসদ সদস্য। সংসদে অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে খ্যাতি ছিল তার।

বাদলের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গত ১৮ অক্টোবর থেকে ভারতে প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠির তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হার্টফেল করায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাংসদ বাদলের ছোট ভাই মনির খান। দ্রুত সময়ের মধ্যে মরহুমের মরদেহ বাংলাদেশে আনা হবে বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্থান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন বাদল।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও বাদলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here