আবু আলম চৌধুরী

গত কয়েক দিনে ধরে ঈদযাত্রায় মহাসড়কে তীব্র ও দীর্ঘ যানজটে ঘরমুখী মানুষের অসহনীয় কষ্ট, যন্ত্রণা আর অবর্ণনীয় দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার তিনি বলেছেন, ‘একজন মন্ত্রী হিসেবে জনগণের দুর্ভোগের জন্য আমার দায় এড়াতে পারি না।’ তবে ভয়াবহ যানজটের পুরো চিত্রকে স্বীকার করতে চাননি মন্ত্রী। বরং সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে বলেছেন, দীর্ঘ যানজট বা ভোগান্তি কেবল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে, দেশের সব মহাসড়কে নয়।’

তার মতে, কিছু কিছু যানবাহন চালকের রং সাইড দিয়ে গা‌ড়ি নি‌য়ে‌ প্র‌বে‌শ এবং পশুবাহী গাড়ির কারণে কোথাও কোথাও যানজটের সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি নদীর তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে। আর এতেই ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া, একসঙ্গে অনেক মানুষ যাত্রা করায় সেই চাপ সামলানো সম্ভব নয়।

আমরা খেয়াল করলাম, সড়কের দুর্ভোগ নিয়ে গতকালকের তুলনায় আজকে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কিছুটা হলেও নমনীয় হয়েছেন। শনিবার তিনি দাবি করেন, ‘জনগণের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। আর যেটুকু দুর্ভোগ, মানুষ সেটাকে দুর্ভোগ হিসেবে মনে করেন না। তারা একে ঈদের আনন্দের অংশই মনে করেন।’

আসল কথা হলো তিনি আজকে সকাল পর্যন্ত স্বীকারই করতে চাননি যে সড়কে ভোগান্তিতে আছে মানুষ। নানা অজুহাতে মূল সমস্যার কথা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যখন এসব দুর্ভোগের চিত্র দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়েছে, তখন মন্ত্রীর পক্ষে তা অস্বীকার করার কোনো উপায় ছিল না। ছিল না বলেই ইনিয়ে-বিনিয়ে তা মেনে নিয়েছেন।

এটা ঠিক, ঈদের সময় মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে অসংখ্য মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যায়। সড়কে নানান সীমাবদ্ধতার কথা আমরাও অস্বীকার করি না। কিন্তু আমরা দেখছি সড়কে বেশি যানবাহন এই ভোগান্তি, দুর্ভোগের কারণ নয়। মূল কারণ অব্যবস্থাপনা। যার কথা মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন।

একজন চালক কেন রং সাইডে গাড়ি নিয়ে যেতে পারে? কেন তাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় না? কেন ফিটনেস ছাড়া গাড়ি সড়কে চলে? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর মন্ত্রী দিতে পারবেন? না, পারবেন না। কারণ এর জন্য সবচেয়ে বড় দায় মন্ত্রী হিসেবে তারই। কিন্তু এ জন্য শুধু দুঃখ প্রকাশ করেই কি তিনি দায় এড়াতে পারবেন?

একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়ে তিনি যখন সড়কের প্রকৃত অবস্থা অস্বীকার করতেই থাকেন, তখন অন্যরাও দায়িত্ব এড়াতে চেষ্টা করবেন; সেটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে প্রকৃত সত্য স্বীকার করে সবাইকে নিয়ে কাজ করলে সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই সংস্কৃতি আমাদের দেশে গড়ে উঠেনি।

আমরা জানি, বাড়িতে ফেরার পথে মানুষকে যেমন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হলো, ফেরার পথেও ঠিক একই অবস্থার মুখে পড়তে হবে তাদেরকে। কেননা কোনোভাবেই আমরা শিক্ষা নেই না। প্রতি বছর একই চিত্র। তাই শুধু দুঃখ প্রকাশ করে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া যাবে না। আমরা মনে করি, সঠিকভাবে যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর তা না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here