#পরিচিতিঃ হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) এঁর পিতার নাম খুয়াইলদ; যিনি আরবের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ছিলেন, কুরাইশ বংশে তিনি সম্মানিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন। মাতার নাম ফাতেমা বিনতে যাহেদা। পিতা ও মাতার মাধ্যমে তাঁর বংশ পরম্পরা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হয়। হযরত খাদিজা (রাঃ) এর প্রথম বিবাহ আতিক বিন আয়েদ মাখযুমী এর সাথে, দ্বিতীয় বিবাহ আবু হালাহ এর সাথে এবং সর্বশেষ বিবাহ হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাথে হয়েছিল। জাহেলী যুগে তাঁর উপাধি ছিল তাহেরা।

#রাসূলে_পাক_সাল্লাল্লাহু_আলাইহে_ওয়াসাল্লামের_সাথে_বিবাহঃ
সাইয়্যেদা হযরত খাদিজা (রাঃ) একজন মহিলার মারফত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কাছে বিবাহের পয়গাম পাঠান। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অভিভাবকের সম্মতিক্রমে হযরত খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের মোহর হিসেবে উট নির্ধারণ করা হল। একটি উট যবেহ করে ওয়ালিমা করা হয়। হযরত খাদিজা (রাঃ) তাঁর সমস্ত সম্পদ রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের খেদমতে পেশ করলেন।

#ইসলাম_গ্রহণঃ রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বিবাহের পর আল্লাহর স্মরণে অত্যধিক নিমগ্ন হয়ে গেলেন। পানির মশক ও খাবারের থলে সাথে নিয়ে হেরা গুহায় ইবাদতে নিয়োজিত থাকতেন। হযরত খাদিজা (রাঃ) নিজ হাতে খাবার তৈরি করে হেরা গুহায় নিয়ে যেতেন। হেরা গুহায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) প্রথম ওহী নিয়ে আগমণ করেন; যার বর্ণনা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হযরত খাদিজা (রাঃ) এর কাছে করেন। তিনি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে সংগে নিয়ে তাঁর চাচাত ভাই ওয়ারাকা বিন নওফলের কাছে গেলেন; যিনি খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং ইঞ্জিল কিতাবের জ্ঞান রাখতেন। তখন ওয়ারাকা বিন নওফেল বলেন, ‘হায়! আমি যদি যুবক হতাম, তাহলে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর খেদমত করতাম। হায়! আমি যদি জীবিত থাকতাম, তাহলে তাঁর ফয়জ পেতাম।’ কিছুদিন পর ওয়ারাকা বিন নওফল ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) স্বপ্নে তাকে ভাল অবস্থায় দেখতে পান। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এঁর উপর সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণ করেন হযরত খাদিজা (রাঃ)। তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ ইসলামের সেবায় নিয়োজিত করেন।

#তাঁর_সন্তান_সন্ততিঃ প্রথম স্বামী আবু হালার ঘরে তিন পুত্র সন্তান জম্ম লাভ করে। তাঁরা হলেন- হযরত হালা (রাঃ), দ্বিতীয় সন্তান হযরত তাহের (রাঃ) এবং ৩য় সন্তান হযরত হিন্দ (রাঃ)।
হযরত তাহের (রাঃ) কে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম রুবু ইয়ামেনের বিচারক নিযুক্ত করেছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর নির্দেশে তিনি ইয়ামেনের মুরতাদদের (ধর্মত্যাগী) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেছিলেন। এবং হযরত হিন্দ (রাঃ) রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর পোষ্য ছিলেন। তিনি উষ্ট্রির যুদ্ধে শাহাদত লাভ করেন।

#তাঁর_আত্মীয়_স্বজনঃ হযরত খাদিজা (রাঃ) এর এক বোনের নাম হালা বিনতে খুয়াইলাদ (রাঃ) । তিনি সাহাবী ছিলেন। তাঁর সন্তানের নাম হযরত আবুল আস বিন রবি (রাঃ); যিনি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর শাহজাদী সাইয়্যেদা জয়নব (রাঃ) এর স্বামী ছিলেন। হযরত খাদিজা (রাঃ) এর অপর বোনের নাম রুকাইয়া; যার এক কন্যা হযরত উমাইমা বিনতে আব্দুল্লাহ (রাঃ) সাহাবী ছিলেন। হযরত খাদিজা (রাঃ) এর এক ভাইয়ের নাম আওয়াম; যার সন্তানের নাম হযরত যুবাইর বিন আওয়াম (রাঃ); যিনি আশা’আরা মুবাশ্‌শারা ( বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন সাহাবী) এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

#হুজুর_পাক_সাল্লাল্লাহু_আলাইহে_ওয়াসাল্লামের_সন্তান_সন্ততিঃ
হযরত খাদিজা (রাঃ) সর্বমোট ২৪ বছর ৬ মাস অথবা ২৫ বছর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাথে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেন। তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ঘরে ছয় সন্তান-সন্ততি জম্ম গ্রহণ করেন। তাঁরা হলেনঃ
১। প্রথম সন্তান হযরত কাসিম (রাঃ)। তিনি অল্প বয়সে ইন্তেকাল করেন।
২। হযরত জয়নব (রাঃ)।
৩। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ); তাঁর উপাধি ছিল তাইয়্যেব ও তাহির। তিনিও অল্প বয়সে ইন্তেকাল করেন।
৪। হযরত রুকাইয়া (রাঃ)।
৫। হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ)।
৬। হযরত ফাতেমা আয-যাহরা (রাঃ)।

#তাঁর_মর্যাদাঃ
• তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি; যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর সাথে সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করেছিলেন।
• তিনি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর প্রথমা স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেন।
• আল্লাহ তা’আলা জিবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে আরশ থেকে তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ করেন।
• তিনি সর্বপ্রথম পবিত্র তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এঁর পবিত্র স্ত্রীগণের মধ্যে জান্নাতের সসংবাদ প্রাপ্ত হন।
• তাঁর ক্ববর শরীফে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) নিজেই অবতরণ করেন।

#ওফাতঃ তিনি নবুওয়তের ১০ম বর্ষে ১০/১১ই রমজান ইন্তেকাল করেন। মক্কা শরীফের প্রসিদ্ধ কবরস্থান জান্নাতুল মুয়াল্লায় সমাহিত করা হয়। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাঁর ক্ববর শরীফে অবতরণ করেন। নামাজে জানাজা পড়ানো হয়নি। কেননা তখন জানাজার নামাজ ফরজ হয়নি। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর চাচা আবু তালেবের ইন্তেকালের এক মাস পাঁচ দিন পর ইন্তেকাল করেন। তাঁদের ইন্তেকালের সেই বছর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আমুল হুজন বা দুঃখের বছর হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

(সূত্রঃ ডঃ জহুর আহমদ আজহার, সীরাতে তাইয়্যাবে আওর আজওয়াজে মুতাহহিরাত, জিয়াউল কুর আন পাবলিকেশন্স, লাহোর, করাচি, পাকিস্তান, প্রকাশকালঃ জুলাই ২০০৬

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here