রমজানে একসঙ্গে বেশি পণ্য না কেনা ও দান হিসেবে ইফতার সামগ্রীর পরিবর্তে নগদ অর্থ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, বাজারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের বলে থাকেন একসঙ্গে মাসের বাজার করে ফেলেন, দাম বেড়ে যাবে। কিছু স্টক করে রাখেন ইত্যাদি। ফলে সরবরাহ লাইনে সংকট তৈরি হলেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।

তাই ব্যবসায়ীদের এই অপতৎপরতায় পা না দিয়ে মাসের বাজার একসঙ্গে না করে সপ্তাহের বাজার করা হলে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ লাইনে সংকট তৈরি হবে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা জনগণের পকেট কাটার সুযোগ পাবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, দান হিসেবে ইফতারসামগ্রী দেওয়ার কারণেও বাজারে জোগান ও সরবরাহে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আর ইফতার সামগ্রীর পরিবর্তে নগদ অর্থ দিলে দরিদ্র মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারবেন। এ ছাড়াও ইফতার ও জাকাতের কাপড় বিতরণের সময় প্রতিবছর বিপুল প্রাণহানি ঘটে। ইফতার সামগ্রী বিতরণকালে অনেক সময়ও অপচয় হয়ে থাকে।

বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতারা বলেন, রমজানে আমাদের দেশের কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন। কিন্তু পুরো রমজান মাস জুড়ে সাধারণ দরিদ্র মানুষ যেন ইফতার ও সেহেরি সাশ্রয়ী মূল্যে খেতে পারেন তার জন্য কিছু করছেন না।

যদিও এ সব আয়োজনে সাধারণ মানুষের একবেলা ইফতার জুটলেও পুরো মাসে রমজানে নিত্য ব্যবহার্য ইফতার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়।

পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম মহানগরী ও বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাটে বাজারে বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন নকল খাদ্য-পণ্যে সয়লাব, বিশেষ করে ঘি, মসলা, সেমাই, হোটেল রেস্তোরাঁয় নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল, পচা-বাসি খাবার পরিবেশন, ফরমালিন ও সার মিশ্রিত মাছ, ফলমূল-শাকসবজিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো, ওজনে কম দেওয়া, গরুর মাংস বলে মহিষের মাংস প্রদান, রাস্তার ওপর খোলা ইফতারি বিক্রি, বিএসটিআইর সিল ছাড়া সিল বাটখারা ব্যবহার করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের জনজীবন মারত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।

ফলে, মাছে ফরমালিন, সার মিশ্রণ, ফল-শাকসবজিতে ফরমালিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানোর কারণে বাজারের কোনো কিছুই এখন মানুষের আস্থা হারাচ্ছে। সে কারণে ভেজালকারী ও ক্যামিকেল মিশ্রণকারীরা ভয়ংকর সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছে। তাদের মানববিধ্বংসী তৎপরতার কারণে লাখো মানুষ অকালে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে নতুবা সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করতে বাধ্য হচ্ছে।

এসব ভেজাল ও অনিয়ম দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি তদারকি সংস্থা বিএসটিআই, সিটি করপোরেশনের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, কারখানা ও দোকান পরিদর্শন পরিদফতর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের নীরবতার কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের জঘন্য ধরনের অপরাধে জড়িত হচ্ছে।

একদিকে মানুষ মুনাফা শিকারি কিছু ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে-কমিয়ে এবং সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের পকেট কাটছে। অন্যদিকে ভেজাল, ওজনে কারচুপিতে জনজীবন বিপন্ন। তাই এখন সময় এসেছে এসব অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের বাজারজাতকৃত পণ্য বয়কট করা ও তাদেরকে স্থানীয়ভাবে প্রতিহত করা।

বিবৃতিতে সই করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here