নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলসহ সড়ক সেতু নির্মাণের দাবিতে রেলভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এসময় অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সিপিবি নেতারা সেতু নিয়ে রাজনীতি না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর বিষয়ে সরকার সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না জানালে সেতু এলাকায় গণ-অবস্থান ও গণ-অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম নগরীর কদমতলী মোড়ে সিআরবির প্রবেশ পথে জমায়েত হন সিপিবি ও গণ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখানে প্রথমে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাল পতাকা মিছিল নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মূল ভবনের দিকে অগ্রসর হন তারা। রেলভবনের পাশে মূল প্রবেশপথের অদূরে সাত রাস্তার মোড়ে পুলিশ তাদের আটকে দিলে নেতাকর্মীরা সেখানেই বসে পড়েন। সেখানে রিকশায় মাইক টানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ চলাকালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা যানবাহন আসা-যাওয়া বন্ধ ছিল।

মিছিল আটকে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মিছিল নিয়ে উনারা সাত রাস্তার মোড় পর্যন্ত এসেছেন। আমরা কোনও বাধা দেইনি। উনাদের অনুরোধ করেছি যেন মিছিল নিয়ে সিআরবি ভবনের ভেতরে প্রবেশ না করেন। উনারাই ভেতরে না গিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।’

বিক্ষোভ সমাবেশে সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বলেন, একটি ছোট্ট কালুরঘাট সেতুর জন্য সরকার বলছে নাকি টাকা নেই। অথচ এই বাংলায় হাজার হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রজেক্ট হচ্ছে আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। আমরা সরকারকে জিজ্ঞেস করতে চাই, হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ নেই বলে কি কালুরঘাটে সেতু করছেন না ?’

তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন এমপি আছেন মঈনউদ্দিন খান বাদল। তিনি একবার বলেন, সেতু না হলে ডিসেম্বরে পদত্যাগ করবেন। আরেকবার বলেন, সেতুর জন্য প্রয়োজনে দীর্ঘদিনের নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন। আমরা এমপি সাহেবকে বলতে চাই, আপনার যা ইচ্ছা আপনি করুন। প্রয়োজনে পদত্যাগ করুন কিংবা আওয়ামী লীগে যোগ দিন, আমাদের মাথাব্যথা নেই। শুধু সেতু নিয়ে রাজনীতি করবেন না। সরকারকে বলতে চাই, লাখ লাখ মানুষের কষ্টের কথা ভাবুন। মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে রাজনীতি করবেন না। কে এমপি, কে সরকারী দল, কে নেতা- আমরা জানতে চাই না। আমরা শুধু কালুরঘাটে সেতু চাই।’

সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী বলেন, ‘কালুরঘাটে রেলসহ সড়ক সেতুর জন্য চট্টগ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছে। আমরা কালুরঘাট সেতুতে লাল পতাকা পদযাত্রা করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাখো মানুষের আকুল আবেদন সরকারের কাছে পৌঁছচ্ছে না। মানুষ চায় সেতু, সরকার বানাতে চায় মেট্রোরেল। কারণ মেট্রোরেল মেগাপ্রজেক্ট, সেখানে মেগাকমিশন খাওয়ার সুযোগ আছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, কালুরঘাটে রেলসহ সড়ক সেতু নির্মাণের বিষয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে আমরা আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেব। সেতু এলাকায় গণ-অবস্থান ও গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।’

সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মছিউদ্দৌলা, কানাই দাশ, অমৃত বড়ুয়া, নুরুচ্ছাফা ভূইঞা, উত্তম চৌধুরী, বোয়ালখালী শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক শেহাবুদ্দিন সাইফু, যুব ইউনিয়নের নেতা অনুপম বড়ুয়া পারু।

বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে মৃণাল চৌধুরীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন আহমেদের কাছে গিয়ে রেলমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে অবিলম্বে দ্বিমুখী সড়ক সুবিধাসহ নতুন রেলসেতু নির্মাণ, পুরনো সেতু সংস্কার, ইজারাদারের জুলুম ও সেতুতে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা নিরসন এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে দুই জোড়া ট্রেন চালুর দাবি জানানো হয়েছে।

সিপিবি নেতা শেহাবউদ্দিন সাইফু বলেন, ‘স্মারকলিপি দেওয়ার সময় রেলওয়ের জিএম আমাদের বলেন, কালুরঘাটে শুধু রেলসেতু হবে, সড়ক সেতু হবে না। রেলসেতুর জন্য সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা বলেছি, সড়ক ছাড়া রেলসেতু দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনগণ করতে দেবে না। সিপিবি আরও জোরদার আন্দোলনে যাবে।’

চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে বোয়ালখালী-পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের একাংশের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই কালুরঘাট রেলসেতু। একমুখী সেতুটি দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি যানবাহনও চলাচল করে।

ব্রিটিশ আমলে ১৯৩০ সালে নির্মিত সেতুটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বলে বক্তব্য খোদ রেলওয়ের। সেতুটি ভেঙ্গে নতুন রেলসহ সড়ক সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরও সেতু বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ আছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here