Home সুফিবাদ মাইজভাণ্ডারী দর্শন মুক্তির সপ্ত পদ্ধতি বা উসুলে সাব’আ

মাইজভাণ্ডারী দর্শন মুক্তির সপ্ত পদ্ধতি বা উসুলে সাব’আ

624
0

– মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (FB ID – নেদায়ে হক)

সপ্ত পদ্ধতি বা উসুলে সাব’আ ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি, খাতেমুল অলদ, খোদা নিযুক্ত নায়েবে রাসুল, গাউসুল আযম শাহসুফি মাওলানা হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র গাউসিয়তের এক উজ্জ্বল নিদর্শন, খোদায়ী নির্দেশ (‘’তোমরা সদুপদেশ ও কোউশল সহকারে মানব জাতিকে তোমার প্রভুর পথে আহবান কর’’, সুরা নাহলঃ১২৫) অনুযায়ী সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার দিকে আহ্বানের এক অনন্য সাধারণ ‘হেকমত’ বা কৌশহল। বর্তমান অতি কামনা ও কঠোর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের যুগে সহজসাধ্য উপায়ে মানবাত্মার নফস বা কুপ্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ ও রূহে ইনসানীর সুপ্রবৃত্তির জাগরণ তথা কলবকে আলোকিত করে চারিত্রিক শুদ্ধির মাধ্যমে খোদায়ী সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের মানসে সহজে পালনীয় এই কর্মপদ্ধতির নির্দেশনা গাউসুল আযম হযরত সাহেব কেবলা কাবার প্রদত্ত বিভিন্ন কালামের মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।

*** ফানায়ে ছালাছা বা রিপুর ত্রিবিধ বিনাশ ***

১। ফানা আনিল খাল্ক
‘কাহারো নিকট কোনরূপ উপকারের আশা বা কামনা না করা’-এতে মানব মন আত্মনির্ভরশীল হয় এবং স্রষ্টাপ্রদত্ত স্বীয় সামর্থ্য ও শক্তির প্রতি যথাযথ আস্থা জন্মে।
— গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বাণী —
‘‘নিজের পাকানো খাইয়ো, পরের পাকানো খাইয়ো না।’’

২। ফানা আনিল হাওয়া
‘অনর্থ পরিহার করা’ অর্থাৎ যা না হলেও চলে এরূপ কথাবার্তা, কাজকর্ম পরিহার করা। এতে জীবনযাত্রা সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়।
— গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বাণী —
‘’এখানে হাওয়া (অনর্থ) দাফন করা হইয়াছে।’’

৩। ফানা আনিল এরাদা
‘খোদায়ী ইচ্ছাশক্তিকেই প্রাধান্য দেয়া’ অর্থাৎ খোদায়ী ইচ্ছাশক্তির কাছে নিজের নফসানী ইচ্ছা বা বাসনাকে বিলীন করা।
— গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বাণী —
‘’যেখানে যাও আল্লাহকে ভয় করিও।‘’

*** মউতে আরবা বা চতুর্বিধমৃত্যু ***

৪। মউতে আবয়্যাজ (সাদা মৃত্যু)
‘উপবাস এবং সংযমের মাধ্যমে আত্মার উজ্জ্বলতাকে বৃদ্ধি করা।‘
— গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বাণী —
‘’আমার ছেলেরা বার মাস রোজা রাখে।‘’ ‘’কবুতরের মত বাছিয়া খাও।‘’ হালাল খাও, হারাম খাইয়ো না।‘’

৫। মউতে আসওয়াদ (কাল মৃত্যু)
‘বাকবিতণ্ডা পরিহারপূর্বক সমালোচনাকারীর সমালোচনাকে সহজভাবে গ্রহণ করে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টায় রত হওয়া এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।‘
এতে যেরূপ একদিকে সত্য পথ যাত্রী নিজের দোষ ত্রুটি অনুধাবনে সমর্থ হন, অপরদিকে দোষের অনুপস্থিতিতে মানব হৃদয়ে পরমতসহিষ্ণুতা এবং স্রষ্টার প্রতি সন্তুষ্টি সৃষ্টীর মাধ্যমে এক রূহানী শক্তির সমাবেশ ঘটে।
— গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বাণী —
‘তোমরা ফাসাদ বা বাহাস করিও না, আপন হালতে থাকিয়া যাও।‘

৬। মউতে আহমর (লাল মৃত্যু)
‘কামভাব ও লালসা হতে অন্তরকে মুক্ত ও পবিত্র করা’ – এর মাধ্যমে বেলায়ত অর্জিত হয়।
— গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বাণী —
‘’ফেরেশতা কালেব বনে যাও’’ (ফেরেশতাদের ন্যায় খোদার হুকুম মত কাজ কর। অবাধ্য হইওনা।)

৭। মউতে আখজার (সবুজ মৃত্যু)
‘বিলাসিতা পরিহারপূর্বক নির্বিলাস জীবন যাপনের মাধ্যমে স্রষ্টার অনুসন্ধান করা’ – এতে মানব অন্তরে স্রষ্টার প্রেম ভালবাসা ব্যতিরেকে অন্য সকম কামনা-বাসনা দূরীভূত হয়।
— গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বাণী —
‘’দুনিয়া মুসাফিরের জায়গা, এইখানে আড়ম্বরের দরকার কি?’’

‘’এই সপ্ত পদ্ধতি ইসলামী সূফি মতবাদ মতে ‘ফানায়ে নফছী’ বা প্রবৃত্তির বিনাশ এবং ‘বাকাবিল্লাহর’ বিভিন্ন উসুল বা পদ্ধতির মধ্যে তুলনামূলকভাবে সহজসাধ্য ও ঝামিলামুক্ত। অন্যান্য বিশ্বধর্মীয় সাধনা সিদ্ধির নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে বিরোধাত্মক নহে বরং উৎসাহবর্ধক, বাস্তববোধ জাগরণকারী, বিশ্বসমস্যার সমাধানকারী মুক্তির দিশারী। কর্মে ও মর্মে মানবতার উন্নয়নকারী, ইহা পীরি ব্যবসাদারীর সমর্থক নহে বরং নেহায়েত নিষ্কাম খোদা অনুরাগী। এই পীরি ব্যবসাদারী পতন যুগে ইহা নৈতিক ধর্মের জীবনদানকারী ধ্রুবতারা।‘’

[বেলায়তে মোতলাকা]

আরো পড়ুন-

তিন যুগের কিনারায় হকভাণ্ডারী স্মরণ সভা সংসদ: ১৮ ডিসেম্বর ৩২তম অনুষ্ঠান

“লােক সঙ্গীতে মাইজভাণ্ডারের অবদান” নামক প্রবন্ধের কিয়দংশ

মাইজভাণ্ডার সম্পর্কে প্রখ্যাত মনীষীদের মন্তব্য

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here