বারো আউলিয়ার পুণ্য ও ধন্যভূমি চট্টগ্রাম। এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয় পীর-আউলিয়া ও ফকির-দরবেশের মাধ্যমে। সুদূর আরব এবং ভারত থেকে কিছু পীর-আউলিয়া ও ফকির-দরবেশ চট্টগ্রাম এসেছিলেন মানব কল্যাণ এবং ইসলাম প্রচারের জন্য। চট্টগ্রামে আগত পীর-আউলিয়া, ফকির-দরবেশদের মধ্যে হযরত বদর শাহ (রহ), হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ), হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ), হযরত মোল্লা মিছকিন শাহ (রহ), হযরত শেখ ফরিদ (রহ), হযরত শাহ গরীব উল্লাহ শাহ (রহ), হযরত বদনা শাহ (রহ) প্রকাশ শফি শাহ (রহ), হযরত আনার উল্লাহ শাহজী (রহ), হযরত শাহ চাঁন্দ আউলিয়া (রহ), হযরত শাহ আমানত (রহ) অন্যতম। তাঁদের আগমনে চট্টগ্রাম ধন্য হয়েছে। চট্টগ্রামের সুফীদের আসন কখনো খালি ছিল না; এখনো নেই। রাজা-বাদশাহরা যেমন পার্থিব ব্যাপারে রাজত্ব করেন তেমনি সুফীদের মতে, সুফীরা ধর্মরাজ্যের রাজা।
হযরত শাহ আমানত (রহ) এর চট্টগ্রামে আগমনের সঠিক সময় জানা না গেলেও ধারণা করা হয় ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দের পরে তিনি চট্টগ্রাম এসেছিলেন। ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন। হযরত শাহ আমানত (রহ) সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাজার শরীফের মুতওয়াল্লী শাহাজাদা শরফুদ্দিন মোহাম্মদ শওকত আলী খান বলেন, হযরত শাহ আমানত (রহ) এর পূর্বপুরুষের নিবাস ছিল ইরাকে। তিনি বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানীর (রহ) বংশধর ছিলেন। তাঁর বাবার নাম হযরত নিয়ামত শাহ (রহ)। ভারতের বিহারের প্রখ্যাত সাধক সুফী হযরত মোনামেয় পাকবাচ তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন। তার পূর্বপুরুষগণ বংশ পরম্পরায় বুজুর্গ ছিলেন। মহান সাধক সুফী হযরত শাহ আমানত (রহ) ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং আল্লাহর সাধনায় নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। সংসারের সমস্ত মায়া-মমতা ত্যাগ করে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বিহার থেকে কাশ্মীর চলে যান। কাশ্মীরে গিয়ে তিনি প্রখ্যাত সাধক পীর হযরত শহীদ (রহ) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১২ বছর তিনি তার পীরের কাছে অবস্থান করে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন এবং সাধনা করে আধ্যাত্মিক জগতের শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন। সেখান থেকে তিনি চট্টগ্রামে এসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ে পাখা টানার চাকরি নেন। দিনের বেলায় তিনি চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ে চাকরি করতেন আর রাতের বেলায় লালদীঘির পূর্বপাড়স্থ নিজস্ব ছোট্ট কুটিরে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকতেন। তিনি সব সময় দুঃস্থ-অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যেতেন। তিনি সাদাসিধে জীবন-যাপন করতেন। তার আচার ব্যবহার, চলাফেরা, কথাবার্তায় অমায়িকভাব থাকার কারণে লোকজন তাকে মিয়া সাহেব বলে সম্বোধন করতেন। অল্প আহার, অধিক ইবাদত করা ছিল তাঁর করণীয় কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম। ভক্তদের তিনি হালাল উপার্জন, সত্ জীবন-যাপন, সংযমী এবং ইবাদতে মশগুল থাকার পরামর্শ দিতেন।
মানব কল্যাণ করতে গিয়ে তাঁর প্রচণ্ড আধ্যাত্মিক শক্তি প্রকাশ পায়। তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় পাওয়ার পর তিনি আর চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ে চাকরি করতে পারেননি। তিনি চাকরি ছেড়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং মানব কল্যাণে নিজেকে পুরোপুরিভাবে নিয়োজিত করেন। তিনি সব সময় ইহরামের কাপড়ের মত সাদা কাপড় পড়তেন। চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন অবস্থান করে ইসলাম এবং মানবতার কল্যাণ করে ১১৮৭ হিজরীর ৩১ জিলক্বদ তারিখে ১২৫ বছর বয়সে ইন্তেকালের পর তাকে লালদীঘির পূর্বপাড়স্থ বর্তমান খানকাহ শরীফে দাফন করা হয়। তার মাজার শরীফ হচ্ছে চট্টগ্রামের তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
লেখক: ইসলামি গবেষক
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here