বাচ্চু বড়ুয়া

নগরের অক্সিজেন এলাকার প্রতিবন্ধী রনি বড়ুয়া (৩০)। বেশকিছু দিন ভুগছিলেন জ্বর-সর্দিতে। শুক্রবার (১২ জুন) সকালে হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটলেন সলিমপুরের ফিল্ড হাসপাতাল। তাঁদের আশা ছিল সবাই ফিরিয়ে দিলেও এ হাসপাতালে অন্তত সাধ্যমতো চিকিৎসাটা পাবেন। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হলো তাঁদের। ফিরতি পথে শেষ ভরসা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিয়ে আসেন। ২০ মিনিট পড়ে থাকলেও চিকিৎসার জন্য আসেনি কোনো ডাক্তার-নার্স। এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান রনি।

স্বজনদের অভিযোগ, দুটি হাসপাতালে নেওয়ার পরেও কোনো চিকিৎসা দিতে পারলাম না রনিকে। প্রতিবন্ধী ছেলেটা মৃত্যুর আগে একটু চিকিৎসা পেল না। পেলাম একটা ডেথ সার্টিফিকেট। আমরা কি এটা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে এসেছিলাম?

শুক্রবার সকাল থেকে চমেকে চিকিৎসার জন্য রোগী আর স্বজনদের হাহাকার। শ্বাসকষ্ট-বুকে ব্যথা থাকলে কথাই নেই। চিকিৎসার জন্য যত রাজ্যের ভোগান্তি। অনেকে রোগীর অক্সিজেন সিলিন্ডার নিজেরাই নিয়ে আসছেন। সবকিছুর দুই-তিন গুণ বেশি দাম। তবুও প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে স্বজনদের নিরন্তর প্রচেষ্টা।

শুধু আজকে নয় গত বেশকিছুদিন ধরে নগরে চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। বেসরকারি হাসপাতালগুলো কোনো নির্দেশনার তোয়াক্কাই করছে না। আবার সরকারি হাসপাতালেও মিলছে না সময়মতো চিকিৎসা। যেন কোথাও কেউ নেই দেখার। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বুকে ব্যথা নিয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান দক্ষিণ নালাপাড়ার প্রীতি বিকাশ দত্ত (৬২)। তাঁকে নগরের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ভর্তি করায়নি কোনো হাসপাতাল। শেষ পর্যন্ত চমেকে নেওয়ার পরই মারা যান তিনি।

বুধবার (১০ জুন) রাতে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের চৌধুরী। কিন্তু ফোনে রোগী ভর্তি করা হবে বললেও হাসপাতালটি ভর্তি করায়নি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে রাখার পর ওয়ার্ডবয় ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেই ফিরিয়ে দেন তাদের। পরে চমেক নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান জোবায়ের চৌধুরীর বাবা।

এর আগে মঙ্গলবার (৯ জুন) আইসিইউর অভাবে মারা যান ফাতেমা আক্তার মুক্তা (৩০)। তিনি ছিলেন ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পাঁচদিন ধরে ভুগছিলেন শ্বাসকষ্টে। অনেক ছুটোছুটি করে পাওয়া যায়নি কোনো আইসিইউ বেড। শেষে পেটের বাচ্চাসহ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এ হতভাগ্য মা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here