আবো ডেক্স :
করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য দেশের সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কোচিং সেন্টার ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সকল পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধ। যেকোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

২৬ মার্চ থেকে  দপে দপে ঘোষনা দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সকল অফিস বন্ধ থাকছে। অর্থাৎ টানা ছুটি। এই সময়টা ঘরে নিজ নিজ স্থানে থাকার জন্য বলা হচ্ছে।

তাই সবাই নিজ নিজ ঘরে থাকুন। এ সময় ঘরে থাকাটাও অনেক বড় নেক আমল। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, একবার হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা মহামারি সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর নবী জবাবে বললেন, এটা আল্লাহর শাস্তি। তিনি যাদের ওপর ইচ্ছা এটা প্রেরণ করেন। তবে তিনি মুমিনদের জন্য একে রহমত বানিয়ে দেন। কেননা, আল্লাহতায়ালা ভাগ্যে যা লেখেছেন তার বাইরে কোনো কিছু আক্রান্ত করবে না- এ বিশ্বাস মনে ধারণ করে ধৈর্যের সঙ্গে সওয়াবের আশায় মহামারি আক্রান্ত এলাকার যে মুমিন নিজের ঘরে অবস্থান করবে সে শহীদের সমান সওয়াব পাবে। -সহিহ বোখারি: ৩৪৭৪

বর্ণিত হাদিস থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, মহামারি দেখা দিলে সওয়াবের আশায় বিশ্বাস ও ধৈর্যের সঙ্গে ঘরে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ ও সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ মোতাবেক চলতে হবে।

তবে কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য কর্মহীনভাবে একটানা কয়েক দিন, সপ্তাহ ঘরে বসে থাকা বড্ড ক্লান্তিকর ও বিরক্তিকর একটা ব্যপার। এ ক্লান্তি ও বিরক্তি দূর করতে অনেকেই অনেক কিছু করবেন। আপনি একজন মুমিন হিসেবে এমন কিছু করার পরিকল্পনা করুন যা আপনার সময়কে করে দিবে আরও মূল্যবান, পূণ্যবান ও বরকতময়।

সুন্দর একটি অবসর কাটানোর জন্য আপনাকে প্রথম যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা হলো, এ কয়দিন আপনি ঘরে থেকে কোনো গোনাহর কাজ করবেন না। যা দেখলে, যা শোনলে গোনাহ হয় এমন কোনো কিছু আপনি দেখবেনও না, শোনবেনও না। অযথা সময় নষ্ট না করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটান। তাদের সঙ্গে গল্প করুন। ঘরের কাজে স্ত্রীকে সহায়তা করুন। সন্তানদের পড়াশোনা তদারকি করুন। এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি কাজ করতে পারেন। যেমন-

পবিত্র কোরআন খতম

বন্ধের দিনগুলো সঙ্গে পারা বা পৃষ্ঠা ভাগ করে বন্ধের এ কয়দিনে কমপক্ষে এক খতম কোরআন তেলাওয়াত করুন। সেই সঙ্গে নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমের কৃত অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির দেখে কোরআনের কিছু কিছু অংশের অনুবাদ পড়ুন।

নফল রোজা

চলছে বরকতময় শাবান মাস। এমনিতে শাবান মাসের নফল রোজ অনেক ফজিলতের। আর যেহেতু বাইরের ঝামেলা ও দায়িত্ব নেই, সারাদিন ঘরে শুয়ে-বসেই থাকবেন তাই প্রতিদিনই বাসার সবাইকে নিয়ে অনায়েসে নফল রোজা রাখতে পারেন। যা বালা-মসিবত দূর করতে যথেষ্ট সহায়ক হবে। উপরন্তু ইফতারের সময়টি যেহেতু হাদিসের ভাষ্যমতে দোয়া কবুলের সময় তাই ইফতারের সময় মুসলিম জাতির এ দুর্দিন দূর হওয়ার জন্য, বিপদ কেটে যাওয়ার জন্য তওবা ও ইস্তেগফার করবেন।

নবী জীবনীর সামষ্ঠিক পাঠ

দিনের কোনো এক সময়ে বাসার সবাইকে নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমের লেখা বা অনুবাদ করা নবী জীবনী পাঠ করতে পারেন। এটাও আল্লাহর রহমত, বরকত নাজিলের অনেক বড়ো একটি উপায়।

বাসায় আজান, ইকামত ও জামাতের সঙ্গে ফরজ নামায আদায়

মহামারির বিস্তৃতি রোধে যদি মসজিদে যেতে অনিচ্ছুক থাকেন, তাহলে বাসায় একা একা নামাজ না পড়ে বাসার সবাইকে নিয়ে আজান, ইকামত ও জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ুন। নামাজের সময় হয়ে গেলে বাসার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে আজান দিন। কিছুক্ষণ পরে জামাতের কাতার করে স্বাভাবিক স্বরে ইকামত দিন। আজান, ইকামত ও ইমামতি এ তিনটি কাজ অবশ্যই বাসার পুরুষকে করতে হবে। যদি একাধিক পুরুষ না থাকে তাহলে উক্ত তিনটি কাজ একই ব্যক্তি করবেন।

বাসার প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা জামাতের প্রথম কাতারে দাঁড়াবে। পরের কাতারে দাঁড়াবে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা। তার পরের কাতারে দাঁড়াবে প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা। তার পরের কাতারে দাঁড়াবে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা। কোনো অবস্থাতেই প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী নামাজের জামাতে পাশাপাশি দাঁড়াতে পারবে না। অথবা এতটুকু সামনে-পেছনেও দাঁড়াতে পারবে না যে, রুকু বা সেজদাতে নারীর মাথা নরের পায়ের পাশে অবস্থান করে।

সবার ওপর গুরুত্ব দিন আল্লাহর দরবারের কান্নামাখা ক্ষমাপ্রার্থনাকে। নিজের অতীতের সব গোনাহর জন্য কেঁদে কেঁদে মাফ চান। প্রতিজ্ঞা করুন, হে আল্লাহ! জীবিত থাকলে বাকি জীবন তোমার শরিয়ত মতো কাটাবো। আমরা সবাই নত হলে, ক্ষমা চাইলে আশা করা যায়, আল্লাহতায়ালা অবস্থা বদলে দেবেন। খুব দ্রুত সুদিন ফিরে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here