নকশবন্দিয়া তরিকা ও ঈছা আহমেদ নকশবন্দির গান

শামসুল আরেফীন

ঈছা আহমেদ নকশবন্দিয়া তরিকার শিষ্য ও পীর। আবুল খায়ের নকশবন্দির কাছ থেকে, যার সমাধি রয়েছে বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী গ্রামে, তিনি নকশবন্দিয়া তরিকার শিষ্যত্ব ও খেলাফত অর্জন করেন। আবুল খায়ের নকশবন্দি ফুরফুরা দরবার শরীফের মাওলানা আবুবকর সিদ্দিকের কাছ থেকে শিষ্যত্ব ও খেলাফত অর্জন করেছিলেন।

নকশবন্দিয়া তরিকা সম্পর্কে জানা যায়, এই তরিকাটি হজরত বাহা-উদ-দিন নকশবন্দ বুখারী প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাধকের নামের শেষে নকশবন্দ উপাধি যুক্ত হওয়ার কারণ হলো তিনি বস্ত্রে নকশা অংকন করতেন। একারণে তরিকাটির নাম হয় নকশবন্দিয়া। তিনি এই তরিকার প্রতিষ্ঠাতা হলেও পূর্বে তরিকাটি সিদ্দিকিয়া ও তরিকায়ে খাজেগান নামে পরিচিত ছিল। অন্যান্য তরিকায় হজরত মুহাম্মদ (দ.)-এর পরে হজরত আলীর নাম পাওয়া গেলেও নকশবন্দিয়া তরিকায় পাওয়া যায় হজরত আবুবকর সিদ্দিকের নাম। তরিকাটির শাজারার তালিকা : ১. হজরত মুহাম্মদ (দ.) ২. হজরত আবুবকর সিদ্দিক ৩. সালমান ফার্সী ৪. কাসিম বিন আবুবকর ৫. ইমাম জাফর সাদিক ৬. বায়েজিদ বোস্তামী (মৃত্যু ৮৭৫ খ্রি.) ৭. আবুল হাসান খার্কানী বা আবুল কাসিম গুর্গানী (মৃত্যু ১০৩৩/৩৪ খ্রি.) ৮. শেখ আলী ফার্মাদী (মৃত্যু ১০৭৮ খ্রি.) ৯. খাজা ইউসুফ হামাদানী (মৃত্যু ১১৪০ খ্রি.) ১০. খাজা আবদুল খালেক গুজ্দাওয়ানী (মৃত্যু ১১৭৯-৮০) ১১. খাজা আরিক বেওগারী (মৃত্যু ১৩১৫/১৬ খ্রি.) ১২. খাজা মাহমুদ আঞ্জির ফাগনাভী ১৩. খাজা আজিজান শেখ আলী রামিতানী (মৃত্যু ১৩০৬/ ১৩৫৪ খ্রি.) ১৪. খাজা মোহাম্মদ বাবা সামাসী (মৃত্যু ১৩৪০/১৩৫৪ খ্রি.) ১৫. খাজা আমির সৈয়দ কুলাল্ সুখারী (মৃত্যু ১৩৭১ খ্রি.) ১৬. হজরত বাহা-উদ-দিন নকশবন্দ বোখারী ((১৩১৮-১৩৮৯ খ্রি.)। তালিকাটি চৌধুরী শামসুর রহমানের ‘সুফিদর্শন’ গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।

নকশবন্দিয়া তরিকাকে বলা হয় ‘শান্ত’ তরিকা, যেহেতু অন্যান্য তরিকায় উচ্চস্বরে বা হালকা উচ্চস্বরে জিকির করার নিয়ম থাকলেও এই তরিকায় নীরবে জিকির করা হয়। নকশবন্দিয়া তরিকায় অবশ্য পালনীয় ১১ টি মূলনীতি রয়েছে। চৌধুরী শামসুর রহমানের প্রাগুক্ত গ্রন্থ থেকে মূলনীতিগুলো এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো : “১. হুশ র্দ দম্Ñঅর্থাৎ প্রতি নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সহিত আল্লাহর উপস্থিতি স্মরণ রাখতে হবে ২. নর্জ র্ব কদম্অ-র্থাৎ মনের একাগ্রতা সাধনের জন্য চলার পথেও সাধককে প্রতি পদক্ষেপের প্রতি নজর রেখে এগোতে হবে ৩. সর্ফ র্দ ওয়াতন্অ-র্থাৎ সাধককে সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, মানবিক পর্যায় থেকে ফেরেশতার পর্যায়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছে ৪. খিলাওত্ র্দ আঞ্জুমান-অর্থাৎ জনতার মধ্যে থেকেও সাধক সর্বদা নিজের লক্ষ্য স্মরণে রাখবেন (অনেকে বলেন যে, সর্বদা ‘জিক্র‘ স্মরণ রাখাই এ নীতির উদ্দেশ্য) ৫. বাজ্গশ্ৎ-অর্থাৎ মধ্যে মধ্যে ‘জিক্র’ বিরতি করে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে তাঁর অনুগ্রহ ও নির্দেশ যাচ্না করতে হবে ৭. নিগাহ্ দাশ্ৎ-অর্থাৎ বাইরের কুপ্রভাব থেকে সর্বদা নিজের অন্তরকে রক্ষা করার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে ৮. ইয়াদ্ দাশ্ৎ-অর্থাৎ কোন প্রকার শব্দ উচ্চারণ না করে, কিংবা কোন ধারণা সৃষ্টি ব্যতীতই সর্বদা আল্লাহর উপস্থিতি স্মরণ রাখতে হবে ৯. ওয়াকুফ্-ই-জমানী-অর্থাৎ মধ্যে মধ্যে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে, কিভাবে সাধক তাঁর সময় অতিবাহিত করেছেন ১০. ওয়াকুফ্-ই-তাদাদী-অর্থাৎ ‘জিক্র’ আবৃত্তি করার সময় পীরের নির্দেশিত প্রয়োজনীয় সংখ্যার হিসাব রাখতে হবে ১১. ওয়াকুফ্-ই-কল্বী-অর্থাৎ সাধককে তাঁর মনের মধ্যে হৃদয়ের এমন একটা ছবি ফুটিয়ে তুলতে হবে, যার মধ্যস্থলে আরবী হরফে আল্লাহর নাম অঙ্কিত রয়েছে”।
প্রথমোক্ত ৮ টি মূলনীতি খাজা আবদুল খালেক গুজ্দাওয়ানী ও পরবর্তী ৩ টি মূলনীতি হজরত বাহা-উদ-দিন নকশবন্দ বোখারী প্রবর্তন করেন।

ঈছা আহমেদ তাঁর মুরশিদ আবুল খায়ের নকশবন্দির কাছ থেকে নকশবন্দিয়া তরিকা এবং তরিকাটির মূলনীতিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হন বলে আমরা জেনেছি। আবুল খায়ের নকশবন্দির কাছে তিনি নকশবন্দিয়া তরিকার শিষ্যত্ব অর্জনের পরে মূলনীতিগুলো গভীরভাবে অনুসরণ করতেন। আবুল খায়ের নকশবন্দি আরেকটি মূলনীতি প্রবর্তন করেছিলেন : চিশতিয়া তরিকার মতো নকশবন্দিয়া তরিকায়ও এই তরিকার শিষ্যদের সামা বা আধ্যাত্মিক গান শ্রবণ করতে হবে। একারণে আবুল খায়ের নকশবন্দি নিজেই আধ্যাত্মিক গান রচনা করতেন; তাঁর শিষ্য ও খলিফা ঈছা আহমেদকেও এই গান রচনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঈছা আহমেদ আমৃত্যু এই নির্দেশ পালন করেন। তিনি অজস্র গান রচনা করেন। তাঁর ‘গুরুধন’ শীর্ষক সঙ্গীতগ্রন্থের ‘শুভেচ্ছা বাণী’তে প্রফেসর ড. মো. আবুল কাসেম লিখেছেন : গ্রন্থটির ‘গানসমূহে কবির মরমী ভাবধারা নিখুঁত-নিপুণভাবে ফুটে উঠেছে। সুর (ক্ষেত্রবিশেষে নৃত্যও) ও বাণী তথা সঙ্গীত আধ্যাত্মিক সাধনার অন্যতম প্রধান বাহন হয়ে উঠতে দেখা যায়। আশেক যখন তাঁর সর্বসত্তা দিয়ে মাশুককে পাবার জন্য আকুল হয়, এসমস্তকে আশ্রয় করে তা এক অনির্বচনীয় মাত্রা অর্জন করে। বুকে প্রচুর আবেগ ভরপুর হয়ে উঠলে ভাষা উপমায় রূপকে অভিব্যক্তি বহু বর্ণিল লাস্যময়ী হয়ে ওঠে। কবিতার আঙ্গিক এখানে গৌণ, এখানে স্রষ্টার সান্নিধ্য পাবার আকাক্সক্ষাই মুখ্য। মরমী সাধক আধ্যাত্মিক কবি মৌলানা ঈছা আহমেদের এ গীতি সংকলন ভক্ত পাঠকদের অন্য এক ভাবের জগতে নিয়ে যাবে’।

‘গুরুধন’ ঈছা আহমেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীতসংকলন। ২০০ গানের এই সংকলনের নাম শ্রবণ করলে মনে হয়, সংকলনটি গুরুভাবমূলক। কিন্তু তাতে আল্লাহ, রাসূল ও অন্যান্য বিষয়েও গান রয়েছে। বস্তুত সংকলনটির গানগুলোতে আধ্যাত্মিক ও মরমি ভাবধারার বা নকশবন্দিয়া তরিকাভিত্তিক অনক বিষয় ফুটে উঠেছে। শুরুর গানে তিনি সময় থাকতে মুরশিদের চরণতলে আশ্রয় গ্রহণ করার আহব্বান করে লিখেছেন : ‘হে মন, তুমি ভয়মুক্ত ও ভাবনামুক্ত না হয়ে সংসারের মায়ায়, রঙ-তামাশায় মগ্ন হয়ে রইলে। এভাবে জীবন ও যৌবন হারাবার পরে অর্থাৎ জীবন শেষে তোমাকে হা-হুতাশ করতে হবে। এই যে সংসার নামক মায়া, তা আসলে ছায়াছবি, রাতের স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়’। ‘অভয়চিত্ত ভাবনামুক্ত হলি নারে মন/ ইচ্ছে করে মায়া মোহে রহিলি মগন \/ পান্থশালায় অবিরত/ রং তামাশায় রলি রত/ হারাবি মন কাল-সাগরে জীবন যৌবন \/ জীবনরবির বেলা শেষে/ কাটাবি মন হা-হুতাসে/ মুর্শিদ ধর সাধন কর থাকিতে জীবন \/ মন কোথা মজালি কবি/ ত্যাগ কর মায়ার ছবি/ এই যে শুধু ছায়াছবি, নিশির স্বপন \’

‘অনিলে সলিলে তুমি ওগো দয়াময়’ গানে তিনি স্পষ্ট করেছেন ‘প্রভুই সব’। গানটির শেষের দিকে তিনি বলেছেন : ‘হে প্রভু, তুমিই খন্ড, তুমিই অখন্ড, তুমিই ক্ষুদ্র, তুমিই বৃহৎ’। ‘অনিলে [অনলে] সলিলে তুমি ওগো দয়াময়/ ভূ-চরে খেচরে তুমি, তুমি সর্বময় \/ আকাশে তুমি পাতালে তুমি/ শূন্যে তুমি মহাশূন্যে তুমি/ অনু তুমি পরমাণু তুমি, তুমি সৃষ্টিময় \/ মন্ডলে তুমি নব-মন্ডলে তুমি/ স্বরূপে তুমি বিরূপে তুমি/ স্রষ্টা তুমি দ্রষ্টা তুমি/ তুমি চেতন চির-চেতন, তুমি চেতনময় \/ খন্ড তুমি অখন্ড তুমি/ ক্ষুদ্র তুমি ব্যাপী তুমি/ ঈছা বলে আমি তুমি, এক বচনময় \’
বাংলার অজ্ঞাত এক মরমি কবি লিখেছিলেন : ‘এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া / কত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই।/ ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ/ যেমনি নাচাও তেমনি নাচি পুতুলের কী দোষ?/ যেমনি নাচাও তেমনি নাচি,/ তুমি খাওয়াইলে আমি খাই (আল্লা)।/ হাকিম হইয়া হুকুম করো পুলিশ হইয়া ধরো/ সর্প হইয়া দংশন করো ওজা হইয়া ঝাড়ো।/ তুমি বাঁচাও তুমি মারো, তুমি বিনে কেহ নাই (আল্লা)।/ তুমি ভেস্ত তুমি দোজখ তুমি ভালো-মন্দ/ তুমি ফুল তুমি ফল তুমি তাতে গন্ধ।/ আমার মনে এই আনন্দ কেবল আল্লা তোমায় চাই (আমি)। ‘এই গানেরও মর্মার্থ ‘প্রভুই সব’। সম্ভবত ঈছা আহমেদ ‘অনিলে সলিলে তুমি ওগো দয়াময়’ গানটি রচনাকালে অজ্ঞাত মরমি কবির গানটির দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।

‘আল্লা তোমার স্মরণ ছাড়া’ গানে ঈছা আহমেদ লিখেছেন : ‘আল্লাহ্র স্মরণ অর্থাৎ জিকির ব্যতিত তাঁর আর কিছুই চাওয়ার নেই’। তিনি এই গানে ‘অরূপ রূপের তত্ত¡ নিতে’ আল্লাহ্ নামের ছবি আঁকার কথা উল্লেখ করে বলেছেন : ‘আল্লাহ্ই সত্য, পৃথিবী মিথ্যে। আল্লাহ্র উপরে কোন সত্য নেই’। ‘আল্লাহু নাম আঁকতে আঁকতে‘, ‘আল্লাহু আল্লাহু মূল নামে যে জন মজেছে’, ‘আল্লাহু নাম আঁকি ভাবে তন্ময় হলে’, ‘আল্লা নামের রসস্রোত হই গো রসময়’, ‘গোপন ঘরে আল্লাহু নাম আঁকা আছে যার’, ‘ডাকি বারে বারে দয়াল নামটি আঁকি আঁকি’, ‘তোমার নামে যে মজেছে তাঁহার মরণ নাই’ ইত্যাদি গানে আল্লাহু নামই যে বিপদ-আপদ-বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার ও আনন্দে থাকার উপায়, মধুর ভান্ডার, নিজেকে চেনার মূল, সবকিছু প্রাপ্তির মাধ্যম তা প্রস্ফুটিত হয়েছে। ‘গুরু কী ধন চিনলি নারে মন’ গানে তিনি গুরুর গুরুত্ব ধরে বলেছেন : ‘গুরু চিনতে পারলে সাধন-ভজন সার্থক হবে। কারণ গুরুই পতিত-পাবন’। ‘গুরু কী ধন চিনলি নারে মন/ তোমার মাঝে তোমার গুরু আছে রে গোপন \/ চিনতে যদি পার মন/ তোমার মাঝে গুরু কোন জন/ সার্থক হবে সাধন ভজন, গুরু পতিত পাবন \/ তোমার গুরু নিত্য চেতন/ ধ্যানে কর অবলোকন/ চক্রভেদে মিলে রতন, ওরে বলেন সুজন \/ বস ঈছা যোগের ঘরে/ নামের নক্সা চক্রজুড়ে/ নির্মল জ্যোতি লহর ধরে, এলে জাগরণ \’

চট্টগ্রামের প্রাচীন লোককবি আস্কর আলী পন্ডিত তাঁর ‘বসি রইলি ওমন কার আশে রঙের বাজার’ গানে লিখেছিলেন: ‘গুরু কেমন ধনরে ওভাই, গুরু কেমন ধন/ সময় থাকতে না চিনিলি ওরে অবুঝ মন’। ঈছা আহমেদের ‘গুরু কী ধন চিনলি নারে মন’ গানে আস্কর আলী পন্ডিতের গানটির প্রভাব রয়েছে। ঈছা আহমেদ তাঁর ‘মানবকে সৃজিল প্রভু করতে ইবাদত’ গানেও গুরুর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন : ‘একমাত্র গুরু বা মুরশিদকে মানলেই মুক্তির পথ পাওয়া যায়’। ‘মানবকে সৃজিল প্রভু করতে ইবাদত/ জানিয়ে নিও পীরের কাছে কিবা তাহার মতামত \/ মৌলভীরা বলে রে ভাই নামায আর কালাম/ বিনিময়ে মিলিবে তার বেহেস্তি এনাম \/ দরবেশগণে বলবে তোরে/ আল্লা আল্লা জিকির করে/ খুলিও ভাই হৃদয়কপাট করে রেয়াজত \/ জগতবাসী দিশেহারা/ শুনে এসব পথধারা/ কোন পথেতে পাবে তারা প্রভুর রহমত \/ পাগল ঈছা ডাকি বলে/ প্রেমিক সুজন যদি মিলে/ তানে মুর্শিদ মানিয়া নিলে পাবি মুক্তিপথ \’

‘মুর্শিদও-তুমি বিনে নাই ভরসা’ গানেও ঈছা আহমেদ বলেছেন : “ও মুরশিদ, আমাকে তোমার চরণে স্থান দাও, পথ দেখাও। তুমি ছাড়া ‘পঞ্চভূতের দেহঘরে মায়া মোহ অন্ধকারে’ আমাকে উদ্ধার করার মতো আর কেউ নেই”। একারণে তিনি মুরশিদের জন্য আকুল, মুরশিদের বিরহে পাগল। তিনি কাঁদছেন : ‘প্রাণ কাঁদে মোর মুর্শিদ বিনে গো সখি/ ঘরে থাকা দায়, আমি করি কী উপায়?/ সখি গো, মুর্শিদ আমার যেই না দেশে/ আমি যাব তাঁর তালাশে গো/ নইলে আমি প্রাণে মরি গো সখি/ অঙ্গ যে জ্বলিয়া যায় \/ সখি গো, একবার আমি মুর্শিদ বলে ডাকি/ চরণে তাঁর মাথা রাখি গো/ আমি জন্মের মত লুঠিয়ে রবো গো সখি/ আমার মুর্শিদেরি পায় \/ সখি গো, হয়ে ঈছা মুর্শিদহারা/ এখন হইলো সর্বহারা গো/ দিন ফুরালো সময় গেল গো সখি/ ওহে পন্থ থাকি পথ না পায় \’

‘জন্মাবধি ডাকলাম তাঁরে গো সখি’ গানে তিনি বলেছেন : ‘আমি পরম বন্ধু আল্লাকে অনেক করে ডেকেও খুঁজে পাই নি। মুরশিদের দয়া ছাড়া তাঁকে পাওয়া সম্ভব নয়‘। কোরানে বলা হয়েছে: ‘তোমরা আমার নৈকট্য লাভের জন্য উসিলা (মুরশিদ) অন্বেষণ কর’। তার মানে কোরানেরও ঘোষণা, মুরশিদ ব্যতিত আল্লাকে পাওয়া সম্ভব নয়। ঈছা আহমেদ গানটির শেষে কোরানের এই মর্মার্থই তুলে ধরেছেন। সে-কারণে তিনি আরেক গানে বলছেন: ‘আমায় ফিরে চাওরে মুর্শিদ আমায় ফিরে চাও/ (আমি) পথের মাঝে পথ হারায়ছি পথের সন্ধান দাও \/ আসিয়া এই বিদেশে তোমায় ভুলি মায়াবশে/ কিবা গতি পরিশেষে আমায় সঙ্গে নাও \/ তুমি যদি চাও রে ফিরে/ চরণতলে রইবো পড়ে;/ তোমার আবাস যেই না দেশে আমায় নিও ভালবেসে/ পরম পাওয়া ঈছার হবে ডুবেও যদি নাও \’

বলেছি, ‘গুরুধন’ সংকলনটিতে আল্লাহ, রাসূল ও অন্যান্য বিষয়েও গান রয়েছে। হজরত আবদুল কাদের জিলানি, হজরত খাজা গরিবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতি, হজরত শাহ্জালাল, হজরত গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারি প্রমুখ সাধকদের প্রশস্তিমূলক গান উপস্থাপন করে তাঁদের মাহাত্ম্যও তুলে ধরা হয়েছে। আবুল খায়ের নকশবন্দির, যিনি ঈছা আহমেদের গুরু, প্রশস্তিমূলক অনেকগুলো গানও লক্ষণীয়। একটি গানের অংশবিশেষ: ‘সেই যে আমার হুজুর কেবলা মাওলানা আবুল খায়ের/ সে যে আমার প্রাণের মুর্শিদ/ মাওলানা আবুল খায়ের \/ একা আমি অন্ধকারে/ যেতে হবে অচিনপুরে/ সাথে আছে মুর্শিদ আমার, মাওলানা আবুল খায়ের \’‘গুরুধন’ ব্যাপক প্রচারিত-প্রসারিত হোক।

আরো পড়ুনঃ

আত্মশুদ্ধি ছাড়া সিদ্ধি লাভ অসম্ভব

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here