মকবুল আহমেদ

রম্যরচনার ধারা বাংলাদেশের সাহিত্যের মধ্যে অপ্রধান বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। রাজনৈতিক ধারার লেখকদের মধ্যে আরো কম পাওয়া যাইবে রম্য প্রভাব। রাজনৈতিক বিষয়ে লেখার মধ্যে হাস্যরসের সরস ব্যঞ্জনা সৃষ্টির অনন্যসাধারণ লেখক ছিলেন আসহাব উদ্দীন আহমদ। তাঁহার মৃত্যুদিবস ২৮ মে তারিখে। ১৯৯৪ সালের এই দিনে এই মহান লেখকের মহাপ্রয়াণ ঘটে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। তাঁহার মৃত্যুদিবস স্মরণে বাংলা ভাষার পাঠকদের সামনে তাঁহার সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য তুলিয়া ধরা হইল

আসহাব উদ্দীন আহমদ জন্মেছিলেন ১৯১৪ সালে চট্রগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামে। তাঁর মায়ের নাম নাছিমা খাতুন, বাবার নাম মুনশী সফর আলী চৌধুরী। আসহাব উদ্দীন ছিলেন একাধারে সফল শিক্ষক, সরস লেখক ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তাঁর রচনাবলির দুস্প্রাপ্যতার কারণে নতুন প্রজন্মের পাঠক তাঁকে চিনতে পারছেন না এবং পুরনো পাঠকেরা ভুলে যাচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের পাঠকদের জন্যই এখানে তাঁর কর্মজীবনের ও রচনাবলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হবে।
আসহাব উদ্দীন আহমদ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন তাঁর নিজ গ্রামের বাণীগ্রাম-সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৩২ সালে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন চট্রগ্রাম কলেজে ১৯৩৪ সালে। কোলকাতা বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৩৬ সালে বিএ পাসের পর ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ সালে।
শিক্ষাজীবন শেষ করেই আসহাব উদ্দীন আহমদ শিক্ষকতায় যোগ দেন। তিনি চট্রগ্রাম কলেজ, মহসীন কলেজ (তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ), লাকসাম নবাব ফয়েজুন্নেসা কলেজ, ফেনী কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
আসহাব উদ্দীন আহমদ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনাকালেই পূর্ব পাকিস্তানে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। ততদিনে বাংলা ভাষার উপর চরম আঘাত হানার অপচেষ্টা শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তানের শাসকশ্রেণির ধর্মভিত্তিক রাজনীতি তখন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর বিশেষ করে সংখ্যালঘু জনসাধারণের উপর নির্যাতনের রূপ নিয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সংখ্যালঘু জনগণের উপর নির্যাতন ও সর্বোপরি বাংলা ভাষার উপর আঘাত হানার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য কয়েকজন সহকর্মী অধ্যাপক ও কয়েকজন হিন্দু-মুসলমান ছাত্রের উদ্যোগে আসহাব উদ্দীন কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত করেন ‘প্রগতি মজলিশ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। কুমিল্লা বীর চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি ও টাউন হলের উল্টা দিকে একটি কাপড়ের দোকানের দোতলায় ছিল এর অফিস।
মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কোন প্রগতিবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা তখন সহজ কাজ ছিল না। পাকিস্তানি শাসকদের প্রতিক্রিয়শীল ও নিপীড়নমূলক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আসহাব উদ্দীন ও তাঁর বন্ধু অধ্যাপকরা কঠিন কাজটি করলেন। কাজেই, সাথে সাথে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রশাসনের কোপদৃষ্টি পড়ল ‘প্রগতি মজলিশ’ সংগঠন এবং অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন ও তাঁর বন্ধুদের উপর। গোয়েন্দা বাহিনীর সবকটি শাখার টিকটিকিরা লেগে গেল উল্লেখিত অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে। তখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে টিকে থাকাই আসহাব উদ্দীন ও তাঁর বন্ধু অধ্যাপকদের জন্য দুস্কর হয়ে উঠল।
আসহাব উদ্দীন আহমদের যখন অধ্যাপনা করতেন তখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন বিখ্যাত সমব্যয়ী দার্শনিক ড. আখতার হামিদ খান। অবাঙ্গালি ড. খান পাকিস্তান রাষ্ট্রের কোপানল থেকে অধ্যাপক আসহাব উদ্দীনসহ অন্যদের রক্ষা করে আগলিয়ে রাখেন। সেদিন আখতার হামিদ খান না থাকলে উক্ত অধ্যাপকদের তো বিপদ হতই তাছাড়াও ‘প্রগতি মজলিশর’ও মৃত্যু ঘটত নিঃসন্দেহে।
আসহাব উদ্দীন আহমদ ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেন। এ সময় পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব-পশ্চিমের বিভেদ নীতি ও বাংলা ভাষার উপর আঘাতের ফলে তাঁর চিন্তা ও তৎপরতা রাজনীতিকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। তারই ফলশ্রুতি ‘প্রগতি মজলিশ’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা। এ কাজে তাঁর প্রধান সহযোদ্ধা ছিলেন অধ্যাপক আবুল খায়ের। একই কলেজের অধ্যাপক আবুল খায়ের ছিলেন আগে থেকেই মার্কসবাদে দীক্ষিত এবং সমাজতন্ত্রী। আসহাব উদ্দীনের জীবনে ও চিন্তায় তাঁর প্রভাব সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। কুমিল্লায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঝুঁকি নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সাহসী হয়নি। তাই এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক আবুল খায়েরের সাথে অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন। ১৯৫৩ সালে ‘প্রগতি মজলিশ’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগেই কুমিল্লা টাউন হলে সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় নিখিল পূর্ববঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন। যাতে পূর্ববঙ্গের সকল নামজাদা শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক উপস্থিত হয়েছিলেন। পাকিস্তানবিরোধী আদ্দোলনে এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ সাহিত্য সম্মেলনের মুখ্য নেতৃত্বে ছিলেন আসহাব উদ্দীন আহমদ।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আসহাব উদ্দীনের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা। এই আন্দোলন তাঁকে ক্লাসরুমের নিরুদ্বিগ্ন শান্ত নিরাপদ জীবন থেকে একেবারে আন্দোলনের ময়দানে, রাজপথে নিয়ে আসে।
কলেজের শিক্ষকতা থেকে সেই ভাষা আন্দেলনের পথে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে রাজনীতির ময়দানে নেমে এলেন। এসে ঠাঁই করে নিলেন জনজীবনের মাঝে, দীক্ষা নিলেন মার্কসবাদে, নিজেকে সমর্পণ করলেন কৃষক-শ্রমিকের মুক্তির সংগ্রামে, অঙ্গীকার করলেন সমাজতন্ত্রের। কলেজের শ্রেণিকক্ষের দিকে তিনি আর ফিরে তাকাননি। কাদা-মাটি মাখা কৃষক-শ্রমিককে তিনি ভাই বলে আলিঙ্গন করলেন। আমৃত্যু তিনি সেই পথে ছিলেন।
আসহাব উদ্দীন আহমদ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিপ্লবী রাজনীতির অনুসারী হওয়ার জন্য পাকস্তান আমলে তিনি এক বছর জেল খাটেন এবং রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে তিনি ১৫ বছর আন্ডারগ্রাউন্ডে হুলিয়া মাথায় নিয়ে জীবন কাটান। পাকিস্তান সরকার তাঁকে ধরে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। এ সময় তিনি গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের বাড়িতে, তাদের আশ্রয়ে আত্মগোপন করে কাটান। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ চাষী মুক্তি সমিতি, বাংলাদেশ লেখক শিবির, চট্টগ্রাম যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রভৃতি সংগঠনের সাথে কাজ করেন ও নেতৃত্ব দেন।
রাজনীতির পাশপাশি মানুষকে সচেতন করার হাতিয়ার হিসেবে লেখালেখিকে বেছে নেন আসহাব উদ্দীন আহমদ। শোষণমুক্তি ও সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে জীবনকালেই তিনি ২৭টি বই লিখে যান। তিনি তাঁর লেখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ‘আমার সাহিত্য জীবন’ বইতে বলেন, ‘আমার লেখায় হাসি-ঠাট্টার ভেতর দিয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অবিচারকে তুলে ধরা হয়েছে এবং জনগণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিকে প্রচার করা হয়েছে, জনপ্রিয় করা হয়েছে, প্রোপাগান্ডার আকারে নয়, সাহিত্য রূপে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার ক্ষুদ্র শক্তি দিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ কায়েমের জন্য প্রেরণা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই লিখেছি। শোষণ জুলুমের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মনোভাব সৃষ্টিই আমার লেখার উদ্দেশ্য।’
আসহাব উদ্দীন আহমদের গ্রন্থাবলির নাম এখানে তুলে ধরছি: ১. বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর ২. ধার, ৩. উদ্ধার, ৪. সের এক আনা মাত্র, ৫. জান ও মান, ৬. বন্দে ভোটরম্ (ইংরেজি ভাষায়) ৭. পথ চলিতে, ৮. আওয়ামী লীগের মীর জাফরী ঐতিহ্য, ৯. হাতের পাঁচ আঙ্গুল, ১০. লেখক ও পাচক, ১১. দাড়ি সমাচার, ১২. বিপ্লব বনাম অতি বিপ্লব, ১৩. ভাতের বাংলা কাপড়ের বাংলা, ১৪. বাঁশ সমাচার, ১৫. দ্বিপদ বনাম চতুষ্পদ, ১৬. আমার সাহিত্য জীবন, ১৭. শিকল ভাঙার গান (প্রথম সংস্করণের নাম ‘ইন্দিরা গান্ধীর বিচার চাই’), ১৮. চিঠিপত্র, ১৯. ঘুষ, ২০. ফেলে আসা দিনগুলি, ২১. উজান স্রোতে জীবনের ভেলা, ২২. দাম শাসন দেশ শাসন, ২৩. ভূমিহীন কৃষক, কড়িহীন লেখক, ২৪. সেরা রম্য রচনা, ২৫. সংবর্ধনার উত্তরে ভাষণ ‘উজান স্রোতের যাত্রী’, ২৬. শিশু তোতা পাখি নয়, ২৭. লাথি লাঠি গণতন্ত্র, ২৮. নতুন বোতলে পুরানো মদ, ২৯. আসহাব উদ্দীন রচনা সংগ্রহ, চার খ-।
আসহাব উদ্দীন আহমদের সবচেয়ে আলোকোজ্জ্বল অংশ তাঁর লেখালেখির জীবন। তাঁর লেখক জীবনে আর্থিক অনটনের অবস্থায় পড়ে নিজেকে নিয়েও তিনি ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করেছেন ভূমিহীন কৃষকের সাথে কড়িহীন লেখকের তুলনা দিয়ে। নিজের অর্থনৈতিক দৈন্যদশাকে নিয়ে তিনি সরস রসিকতা করতে জানতেন। আসহাব উদ্দীন বাংলা ভাষার একজন ভিন্ন ও বিরল ধারার লেখক। সমাজের বৈরী সম্পর্ক, নিপীড়িত মানুষের বেদনাক্লিষ্ট জীবন কাহিনী, শাসকশ্রেণির অন্তঃসারশূন্য লক্ষ্য ও স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা এমন ব্যঙ্গবিদ্রƒপে, এমন জনবোধ্য ভাষায় চিত্রিত করেছেন খুব কম লেখকই। আসহাব উদ্দীনের প্রতিটি গ্রন্থের নামকরণে ও বিষয়বস্তুতে সমাজের নানা অসঙ্গতি ফুটে উঠেছে।
বাংলা ভাষায় প্রতিবাদী রাজনৈতিক চেতনাসমৃদ্ধ ও জনবোধ্য ভাষায় সমাজসচেতন ব্যঙ্গ রচনার ধারায় আসহাব উদ্দীন আহমদ একজন সফল ও প্রধান লেখক। এই সফলতা ও কৃতিত্ব তিনি তাঁর জীবনকালেই পেয়েছেন। সাহিত্য রচনার পেছনেও আসহাবউদ্দীনকে অনুপ্রাণিত করেছে মানুষের প্রতি ভালবাসা ও প্রতিবাদী চেতনাবোধ। আমাদের দেশের মানুষের আয়ুর গড়পড়তা হিসেবে তিনি দীর্ঘজীবন পেয়েছিলেন। তাঁর জীবন আশি বছর অতিক্রম করেছিল। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের প্রতি মমত্ববোধ এবং মানুষের প্রয়োজনীয় কাজটি সম্পাদন করে দিতে তাঁর দায়িত্ববোধের কথা তিনি কখনো বিস্মৃত হননি। সেই কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে সাধারণ মানুষের প্রতি নিবেদিত থেকেছেন তিনি সারা জীবন। মানুষের কল্যাণের জন্য নিরলস খেটেছেন সাধারণ কর্মীর মত। জীবনের প্রতি ও সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর এই অঙ্গীকার তাঁর সকল লেখায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
রিক্ত, নিঃস্ব ও সর্বহারা মানুষের মুক্তির উপায় হিসেবে শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে দেখতেন আসহাব উদ্দীন। তাঁর কর্মজীবনের সময়কালকে নানা পর্বে ভাগ করলে যেমন শিক্ষকতা, রাজনীতি, লেখালেখি প্রভৃতি পর্বের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার একটা কালপর্বকেও তাঁর জীবনে যোগ করতে হয়। সারা জীবন তিনি নানা স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট স্বীকার করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ও শ্রমে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম: ১. বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ, ২. চট্রগ্রাম সিটি কলেজ, ৩. সাতকানিয়া কলেজ, ৪. সাধনপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, ৫. পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয় এবং ৬. রতœপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে স্ব স্ব মহিমায় গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে চলেছে।
আসহাব উদ্দীন আহমদ একজন অনন্যসাধারণ লোক হয়েও সব সময় সহজ সাধারণ রূপে বিরাজ করতেন। তিনি কৃষক সমাজকে উচ্চ মূল্য দিতেন। কৃষক সমাজের মুক্তি সংগ্রামে যুক্ত হয়ে তিনি নিজেকে কৃষক সমাজের বাইরের লোক বলে ভাবতেন না। তিনি এমন বেশভূষা ধারণ করতেন না পাছে কৃষকেরা তাঁকে পর ভাবেন। তিনি জীবনের দ্বিতীয়াংশে (রাজনৈতিক ও লেখক জীবনে) শার্ট-কোর্তার সাথে প্যান্টের বদলে স্বচ্ছন্দে লুঙ্গি পরতে পছন্দ করতেন। গ্রামে কি শহরে বড় বড় সভা-সমিতিতেও তিনি লুঙ্গি পরে চলে যেতেন।
আসহাব উদ্দীন ভালবাসতেন চির দুঃখী কৃষককে এবং কৃষক মুক্তির সংগ্রামকে। আর ভালবাসতেন শ্যামল প্রকৃতি, বৃক্ষ ও ফুল। এমনই এক অনুভূতি জানিয়ে তাঁর নিজের গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক হিসেবে আমার প্রতি এক চিঠি লিখেন ১৯৯৩ সালে। সেই চিঠির অংশবিশেষ এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তিনি আমাদের প্রতি লিখেন,

আপনারা আমার সালাম ও শুভেচ্ছা জানবেন। বাঁশখালী কলেজের চারদিকে এবং সরকারী রাস্তা থেকে যে পথটি কলেজের মাঠের দিকে উঠেছে তার দুধারে কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে কলেজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়বে। মনে হবে, কলেজের গলায় একটি খুব বড় মালা শোভা পাচ্ছে। এ ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা নিয়ে কাজটি সুসম্পন্ন করলে আমি অপরিসীম সুখী হব, আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে আমার বক্তব্য হলে: খড়াব ঘধঃঁৎব, খড়াব ইড়ড়শং. প্রকৃতিকে ভালোবাসুন, বইকে ভালোবাসুন। বই হলো মনের খোরাক। যে সব শিক্ষিত লোক বইপত্র পড়েন না তারা নিজেদের মনকে উপবাসী রাখার অপরাধে অপরাধী। তাদের প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত লোক বলা যায় না…।’ (চিঠিপত্র)

পরের বছর ২৮ মে তারিখে আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নেন অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদ। বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গণে লাল হয়ে ফুটে থাকা তাঁর প্রিয় এক কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তিনি শায়িত আছেন। তাঁকে লাল সালাম।

কপি- সর্বজন

এবি/টিআর 28/5/2019

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here