প্রত্যাশা পূরণের পথে এগোচ্ছে কালুরঘাটে সড়ক কাম রেলওয়ে সেতু। দীর্ঘদিন ধরে এই সেতুর দাবিতে আন্দোলন করছেন স্থানীয়রা। আশ্বাসের বাণী শোনা গেলেও এবার আলোর মুখ দেখবে বলে আশাবাদী তারা।

প্রত্যাশিত সেতু বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ সেতুর নির্মাণে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ১১০০ কোটি টাকা দক্ষিণ কোরিয়া ও অবশিষ্ট ৯০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করবে জানিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। সেতু নির্মাণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ বছর।

রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, এ সেতুর অর্থায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্মতি মিলেছে। মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, যেহেতু অর্থায়ন মিলছে তাই এবার নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ হবেই।

জানা গেছে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কালুরঘাট সেতু নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও মতামত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত দ্য ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) কাছে পাঠিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ের ওপর মতামত জানতে চেয়েছে।

ইডিসিএফের সিনিয়র লোন অফিসার ইয়েলি কিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অথবা শুধু রেল সেতু নির্মাণের বিষয়ে রেলওয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সর্বনিম্ন স্ট্যান্ডার্ড নেভিগেশনাল ছাড়পত্র কত হবে, সিঙ্গেল নাকি ডাবল রেললাইন, লেন সংখ্যা, সেতুর টাইপ (এক্সট্রা ডোজড/ট্রাশ), রেলওয়ে গেজ (সিঙ্গেল/ডাবল), ব্রডগেজ বা মিটার গেজ এবং প্রকল্পের সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয় সম্পর্কে কূটনৈতিক চ্যানেলে বিস্তারিত প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেগুলো নিয়ে কাজ করছে।

এছাড়া নতুন কালুরঘাট সেতুর টেকনিক্যাল বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি। রেলওয়ের প্রস্তাবিত নক্সায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ মিটার। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ১২ মিটার করার শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

ইতোমধ্যে উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়ে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন জমা দিলে বিআইডব্লিউটিএ’র সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। তাদের শর্ত পূরণ করে নক্সা তৈরির কাজও করছে রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (সংগ্রহ) মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, সেতুর নির্মাণের জন্য কয়েকটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট জানতে চেয়েছে কোরিয়া। এর মধ্যে রয়েছে নেভিগেশনাল ছাড় বিষয়। বিআইডব্লিউটিএ সেতুর উচ্চতা ১২ মিটার করার শর্ত দিয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম সাড়ে ৭ মিটার। এ নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এরসঙ্গে এই মাসের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আশা করি। বৈঠক শেষে বিষয়টি কোরিয়াকে জানানো হবে। আমরা সেতুতে দুইটি রেললাইন করতে চেয়েছিলাম, কোরিয়া জানিয়েছে দুইটি রেললাইন হবে না। সেতুতে একটি রেললাইন ও আর দুইটি সড়ক থাকবে।

বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আবদুল মোমিন বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল একটি সেতুর নক্সা প্রণয়ন করেছে। আমরা সেতু নির্মাণের বিষয়ে আশাবাদী। দীর্ঘদিনের দাবির এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে মনে করছি। ভোগান্তি নিরসনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের মহাসড়কে শামিল করবেন চট্টগ্রামবাসীকে। এর জন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

বোয়ালখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শাহীনুর কিবরিয়া মাসুদ বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার প্রত্যাশিত সেতু নির্মাণ একটি মাইলফলক সিদ্ধান্ত। আমরা এর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশী।

কালুরঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য জাতীয় সংসদে আমৃত্যু দাবি জানিয়েছিলেন প্রয়াত সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল। তার শূন্য আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দীন আহমদ প্রয়াত এমপি বাদলের স্বপ্ন পূরণে এক বছরের মধ্যে কালুরঘাটে সেতু নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

এ সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রাম শহরের আবাসনের চাপ, যানজট বহুলাংশে কমে আসবে। এছাড়া অর্থনৈতিক সোনালী দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশাবাদ নাগরিক সমাজের। সাংসদ মোছলেম উদ্দীন আহমদ বলেন, দোয়া করেন খুব সহসাই এর প্রতিফলন দেখতে পাবেন।

খবর দৈনিক জনকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here