দুই নাতির সাথে হুজুর কেবলা

চরণদ্বীপ দরবারে রজভীয়া আলিয়া শরীফের পীর ছাহেব, মুফতিয়ে আজম, মুফাচ্ছেরে হাক্কানী, মুহাদ্দেসে রব্বানী, আকমালুল কামেলীন, বাহরুল উলুম, মুরশিদে বরহক, নায়েবে আলা হযরত, হুজুর অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি শাহ্ মুহাম্মদ ইদ্রীছ রজভী বড় হুজুর কেবলার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-

ইসলামের মূল রুপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রচার-প্রসারে বর্তমানে যাদের নাম ও ত্যাগের কথা সর্বত্র সমাদৃত, তাদের মধ্যে মুফতিয়ে আজম বড় হুজুর কিবলা অন্যতম।

ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রাহঃ) এর যোগ্য শিষ্য হিসেবে সুন্নীয়তের ময়দানে তিনি যে অবদান রেখে যাচ্ছেন তা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নিম্নে তার গৌরবোজ্জ্বল জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছিঃ-

জন্ম ওবংশ পরিচয়ঃ

বার আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার অন্তর্গত চরণদ্বীপ গ্রামে ১ জানুয়ারী ১৯১৩ সালে কোন এক শুভ মুহুর্তে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন অলিয়ে কামেল হযরত শাহসূফি আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ দুলা মিয়া ছাহেব কেবলা (রাহঃ)

শিক্ষা জীবনঃ

শিশুকালে তিনি স্বীয় সম্মানিত পিতার বিশেষ তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল গাজী শেরে বাংলা (রাহঃ)’র প্রতিষ্ঠিত হাটহাজারী মেখলে অবস্থিত এমদাদুল ইসলাম মাদ্রাসায় ইমাম শেরে বাংলারই সঠিক তত্ত্বাবধানে প্রথম থেকে জামাতে উলা পর্যন্ত দ্বীনি ইলম অর্জন করেন। অতঃপর চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রসা থেকে কৃতিত্বের সাথে কামিল (টাইটেল) পাশ করেন। এরপর সুদূর ভারতের বেরেলী শরীফে ইমামে আহলে সুন্নাত, আ’লা হযরত (রাহঃ)’র প্রতিষ্ঠিত মানজারুল উলুম গমন করেন। সেখানে মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান আল্লামা সরদার আহমদ লায়ালপুরী (রাহঃ)’র শিষ্যত্ব গ্রহণ করে কুরআন, হাদিস, তাফসীর, বিশেষ করে ফিকাহ্ শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। অতঃপর মসলকে আ’লা হযরতের দীক্ষা নিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

কর্মজীবনঃ

স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে সর্বপ্রথম তিনি রাউজান থানার অন্তর্গত কদলপুর গ্রামে অবস্থিত ইমাম শেরে বাংলার পীর ও মুর্শিদ হযরত আবদুল হামিদ বোগদাদী (রাহঃ) ‘র নামে প্রতিষ্ঠিত হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। কিছুদিন অধ্যাপনা করার পর রাউজানে অবস্থিত কুতুবুল এরশাদ সৈয়দ শাহ্ সিরিকোটি (রাহঃ)’র প্রতিষ্ঠিত দারুল ইসলাম মাদ্রাসায়ও দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষকতা করেন ও জামিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা ওয়াকার উদ্দিন সাহেবের সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময়ে আল্লামা ওয়াকার উদ্দিন সাহেব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লামা বড় হুজুর কেবলার পরামর্শ নিতেন।
১ ফকিহে মিল্লাত আল্লামা আমিনুল ইসলাম হাশেমী (রাঃ)
২ আল্লামা জিল্লুর রহমান আলি শাহ্ (বেতাগী আস্তানা শরীফ)
৩ খতীবে বাঙ্গাল অধ্যক্ষ আল্লামা জালাল উদ্দিন আল-কাদেরী (রাহঃ)’র মত যুগশ্রেষ্ঠ আলেম,
৪ আল্লামা আবুল কাশেম নুরী,
৫ শেরে মিল্লাত মুফতি ওবাদুল হক নঈমী,
৬ অধ্যক্ষ মুফতি অছিয়র রহমান আলকাদেরী
৭ আল্লামা আজিজুল হক রজভী (রাঃ) চরণদ্বীপ
৮ বড় হুজুর কেবলার তিন শাহজাদা
৮.১, আল্লামা অধ্যক্ষ শাহ্ মুহাম্মদ ইলিয়্যাছ রজা (রাঃ)
৮.২,আল্লামা অধ্যক্ষ শাহ্ মুহাম্মদ আতাউল মোস্তফা রজভী (মাঃ)
৮.৩,আল্লামা অধ্যক্ষ শাহ্ মুহাম্মদ শোয়াইব রজা (মাঃ)
৯ আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ফরিদ রজভী (মাঃ)
সহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরামের তিনি ওস্তাদ। যারা দেশ-বিদেশে মাযহাব-মিল্লাতের খেদমতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

আল্লামা রেজভীর প্রাতিষ্ঠানিক খেদমতঃ

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার লক্ষ্যে তিনি ১৯৫৩ সালে নিজ গ্রাম চরণদ্বীপে আ’লা হযরতের মসলকের উপর চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া সুন্নীয়া ফাজিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৪৬ সালে নিজ দরবারে আল্লাহ্ তায়ার ঘর শরীফ মুসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ১৯৬০ সালে জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপহার দিয়েছেন,আন্জুমানে কাদেরিয়া চিশতীয়া রজভীয়া ট্রাষ্ট বাংলাদেশ এর সন্মানিত চেয়ারম্যান, রজভীয়া মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন তিনি প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ঐতিহাসিক শ্রীপুর বুড়া মসজিদের খতিবের দায়ীত্ব-পালন করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতায় ও পরামর্শে অনেক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

আল্লামা রজভীর লেখনী খেদমদ
১ ঈদে মিলাদুন্নবী ও সীরাতুন্নবী (সাঃ) উদযাপনের বাস্তবতা
২ শরীয়তে মুহাম্মদীয়া রদ্দে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া
৩ এজহারুল কাজেবাত লেমা ফিল বাইয়্যিনাত
৪ মাসায়েলে সামাহ্
৫ বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী মতবাদ প্রচারের ষড়যন্ত্র
৬ আজানের পূর্বে ও পরে দরুদ সালাম
৭ কোরআনের পবিত্রতা রক্ষারর আহবান
৮ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীকে জানা উচিত
৯ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর আক্বিদা বিশ্বাসী পোষণকারী হতে হুশিয়ার মুসলমান!
১০ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ও ইসমাইল দেহলভীর মুদ্রার এপিঠ -ওপিঠ
১১ গাওছুল আজম তত্ত্ব
১২ পিতা পুত্র গাওছুল আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলির চমৎকার কাহিনি।

ফতোয়া প্রণয়নে গভীর বিচক্ষণতা ও গ্রহণযোগ্যতাঃ

আল্লামা রেজভী ইসলামী বিভিন্ন জটিল কঠিন সমস্যা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে ফতোয়া প্রদানে পারদর্শী। এ যাবত অত্যন্ত স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে তার প্রদত্ত ফতোয়া ওলামা সমাজে সমাদৃত ও সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।

তরীকত জগতে অবদানঃ

মুহাদ্দিসে আযম পাকিস্তান আল্লামা সরদার আহমদ লায়ালপুরী (রাহঃ)’র হাতে দ্বীনি শিক্ষার্জনের পাশাপাশি ইলমে তরীকতের দীক্ষাও লাভ করেন। দীর্ঘদিন কঠিন সাধনা করে আপন ওস্তাদ পীর ও মুর্শিদ হযরত লায়ালপুরী (রাহঃ) হতে তরীকায়ে কাদেরীয়া চিশতীয়া ছাবেরীয়া রজভীয়ার খেলাফত লাভে ধন্য হন। তরীকতের এ মহান দায়িত্ব বর্তমানেও তিনি অত্যন্ত নিষ্টার সাথে পালন করে যাচ্ছেন।

মসলকে_আলা হযরত প্রতিষ্ঠায় ও বাতিলদের তর্কযুদ্ধে তার কৃতিত্বঃ-

খলিফায়ে হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা লায়ালপুরী (রাহঃ)’র স্পর্শে তিনি মসলকে আ’লা হযরত ও দীর্ঘদিন যাবৎ ইমাম শেরে বাংলা (রাহঃ)’র সাহচর্যে থেকে সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণা লাভ করেন। বাস্তবেও তিনি তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে মসলকে আ’লা হযরত প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য।
ইমাম শেরে বাংলার সাথে অনেক মোনাজেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার গৌরব অর্জন করেন। ইমাম শেরে বাংলা (রাঃ) বড় হুজুর কেবলাকে নিয়ে অহংকার করতেন, ইমাম শেরে বাংলার ওফাতের পর তিনি বাতিলপন্থীদের সাথে অনেক তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে পরাজিত করে সুন্নীয়তের বিজয় ছিনিয়ে আনেন। আজানের পূর্বে ও পরে সালাত ও সালাম পেশ করার ব্যাপারে হাটহাজারী ওহাবী মাদ্রাসার মুহতামিমদেরকে তিনি বৃদ্ধ বয়সেও যেভাবে ধরাশয়ী করে ফেলেছিলেন তা সবার নিকট আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে।

আজানে পূর্বে ও পরে সালাত ও সালাম প্রচলনে তার অবদানঃ

চট্টগ্রাম জেলার রাউজান, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, হাটহাজারী সহ বিভিন্ন থানার প্রায় তিন শতাধিক মসজিদে তিনি কুরআন সুন্নাহর অকাট্য দলীল পেশ করে আজানের পূর্বে ও পরে সালাত ও সালাম প্রতিষ্ঠা করেন। যাতে ঐ সমস্ত মসজিদগুলো সুন্নী মতাদর্শী মসজিদ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে আশেকে রাসুলদের নামাজ পড়তে কোন অসুবিধা সৃষ্টি না হয়।

আল্লাহপাক মুফতিয়ে আজম শাহেন শাহে বড় হুজুর কেবলায়ে আলমের আরো দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুক-আমিন

সৌজন্যে- দরবারে রজভীয়া শরীফ

এবি/টিআর

অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি শাহ্ মুহাম্মদ ইদ্রীছ রজভী বড় হুজুর কেবলার ওফাত বরণ

একজন মানুষ বেঁচে থাকে অন্যের প্রতি সুন্দর আচরণের মাধ্যমে :মুফতি ইদ্রিস রেজভী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here