বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘকায় মানুষ হিসেবে বিবেচিত কক্সবাজারের জিন্নাত আলী মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘জিন্নাত আলীকে আমরা একেবারে শেষ সময়ে পেয়েছি। তিনি ছোটবেলা থেকেই হরমোনের জটিলতায় ভুগছিলেন। এই জটিলতা থেকে তার মস্তিস্কে টিউমার হয় এবং গতকাল (সোমবার) পরীক্ষায় সেটা অনেক বড় দেখা গেছে, যা অপারেশনের অবস্থায় ছিল না। মৃত্যু অবধারিতই ছিল।’

‘তবে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এই মানুষটা কেন অস্বাভাবাবিক লম্বা হয়েছেন, সেটা খতিয়ে দেখা হয়নি কখনো। হরমোনের জটিলতার সঠিক চিকিৎসা যদি শুরুতেই পেতেন তাহলে হয়তো তাকে অকালে মরতে হতো না’, বলেন এই চিকিৎসক।

মস্তিস্কে টিউমার আক্রান্ত জিন্নাত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গতকাল সোমবার সকালে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। প্রথমে নিউরোলজি বিভাগ এবং পরবর্তীতে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে তাকে পাঠানো হয়। জটিলতর অজ্ঞান অবস্থায় থাকা জিন্নাতকে নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান নোমান খালেদ চৌধুরীর নির্দেশে আইসিইউতে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন।

নোমান খালেদ জানান, রাত সাড়ে তিনটার পর জিন্নাতের মৃত্যু অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যান কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। ভোরে সব সাপোর্ট খুলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের কৃষক আমীর হামজার ছেলে জিন্নাত আলী। জন্ম ১৯৯৬ সালে। আমীর হামজার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জিন্নাত তৃতীয়।

২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জিন্নাত আলীকে নিয়ে কক্সবাজারের রামু-সদর আসনের সাংসদ সাইমুম সরোয়ার কমল। সেসময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১২ বছর বয়স থেকেই উচ্চতা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে তার। সেসময় জিন্নাত আলীর উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ২ ইঞ্চি।

অস্বাভাবিক লম্বা হওয়ায় শারীরক বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে জিন্নাত প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। এছাড়া কেউ কাজ না দেওয়ায় অভাবে আয়-উপার্জন না থাকার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। সেসময় তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয় তাকে। পরে সুস্থ হয়ে জিন্নাত বাড়ি ফেরত যান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতায় জিন্নাতকে তার এলাকায় একটি দোকানও করে দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here