আজাদী প্রতিবেদন |

দিন দিন বাড়ছে ধর্ষণ ও বলাৎকার। ধর্ষণের পর খুন করা হচ্ছে নৃশংসভাবে। একাধিক সংস্থার হিসাবে গত পাঁচ বছরে প্রতি বছর গড়ে যতটি ধর্ষণ বা বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরে দশ মাসেই তা ছাড়িয়ে গেছে। সেই হিসেবে এ অপরাধ এখন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনায় দায়ের হওয়া অর্ধশতাধিক মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই শিশু এবং কিশোর-কিশোরী, যাদের বয়স পাঁচ থেকে ১৭ বছর। শতকরা হিসাবে ৬০ শতাংশের বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে মেয়ে শিশু। তাদের ফুসলিয়ে অথবা জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানা মিলিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয় ১০৮টি, ২০১৮ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০টিতে। ২০১৯ সালে নগরীতে ধর্ষণের মামলা হয় ১৯৫টি। ২০২০ সালে হয় ২৪৮টি এবং ২০২১ সালে মামলা হয় ২৫১টি। অর্থাৎ প্রতি বছর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৯(১)-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১[ষোল বছরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করে, অথবা ২[ষোল বছরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে। তবে এই আইনের ধারা ২(ট) সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘শিশু’ অর্থ অনধিক ১৬ বছর বয়সের কোন ব্যক্তি। শিশুদের কোনো লিঙ্গ ভাগ এখানে করা হয়নি।’ তাই কন্যা শিশু ধর্ষণের ক্ষেত্রে যে শাস্তি হবে, ছেলে শিশু বলাৎকারের ক্ষেত্রেও একই শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন, শিশুর প্রতি সহিংসতা একটি সামাজিক সমস্যা। মানুষের মধ্যে যে আদিম প্রবৃত্তি, তা দমিয়ে রাখতে হলে শৈশব থেকে বা পরে স্কুল-কলেজে যথাযথ জ্ঞানচর্চা, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার মধ্যে সাইকোলজিক্যাল একটি ব্যাপারও কাজ করে। কোনো স্থানে একজন করল। তা প্রচার হওয়ার পর দেখা যায় একনাগাড়ে এখানে-ওখানে হতেই থাকে। কারণ যাদের মধ্যে সেই আদিম মনোবৃত্তি দমানো যায়নি তারা ঘটনার সংবাদটি জেনে উদ্বুদ্ধ হয়।
তিনি বলেন, নিউ ইয়র্ক শহরে প্রচুর খুনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু তারা সেটা সেভাবে প্রকাশ করে না ওই একই কারণে। যখন কেউ যখন ধর্ষণ করে বা হত্যা করে তখন সে আনকনশাস থাকে। অবদমিত প্রবৃত্তি তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ ধরনের ঘটনা বাড়তে দিলে সামাজিকীকরণ থাকবে না। আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ হওয়া উচিত। পাশাপাশি পারিবারিক অনুশাসন ও মানুষে মানুষে সামাজিক সম্পর্কটা বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগটা হচ্ছে না। মূল্যবোধ, আদর্শের অবক্ষয় হচ্ছে। বিকৃত যৌন আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে।
নগরীর আকবরশাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলী এলাকায় ৫ বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গত ২ নভেম্বর সন্ধার পর এ ঘটনা ঘটায় মো. আলমগীর খান নামের এক রিকশা চালক। শুলকবহর এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতী মোহাম্মদ ইসহাককে ৩০ অক্টোবর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২৫ অক্টোবর জামালখান এলাকায় চিপস কিনে বাসায় ফেরার সময় মারজান হক বর্ষা নামে ৭ বছরের এক শিশুকে জোর করে মুদির দোকানে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে লক্ষণ দাশ (২৮) নামে এক কর্মচারী। নিখোঁজের তিন দিন পর নালা থেকে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নগরী ও নগরীর বাইরে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ঘটছে এ রকম ঘটনা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here