আলোকিত ডেক্স : চট্টগ্রাম ওয়াসার ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পে নির্মাণ কাজ পেয়েছে তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। বুধবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়৷

বিষয়টি নিশ্চিত করে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, কার্যাদেশের পর দ্রুত প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে।’

ওয়াসা সূত্র জানায়, ২০১১ সালে প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে শুরু থেকে ভূমি জটিলতায় প্রকল্পের কাজ আটকে যায়। অনুমোদনের তিন বছর পরেও কাজ শুরু করা যায়নি প্রকল্পের।

অন্যদিকে কাজ শুরু আগেই নতুনভাবে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ৩শ ৭৩ কোটি ৮০ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়। গত ২৪ এপ্রিল ওয়াসার বোর্ড সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর আগে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করে। ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর দরপত্র জমাদানের শেষদিন দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দেয়। এর মধ্যে কোলন হ্যানসল জয়েন্ট ভেনচার নামে প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্য হয়নি। অবশিষ্ট তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড আবেদন গ্রহণ করে সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ দিতে দাতা সংস্থাসহ প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।

প্রকল্পে কোরিয়ান সরকারের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অব কো-অপারেশন ফান্ডের (কেইডিসিএফ) পক্ষে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ও সরকার এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা অর্থায়ন করছে। তবে দাতা সংস্থার শর্ত ছিল, দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে।

মূলত, দক্ষিণ চট্টগ্রামে পানি সরবরাহের জন্য ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি হাতে নেয় ওয়াসা। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলোতে এখান থেকে পানি সরবরাহ করা হবে।

ওয়াসার তথ্যমতে, প্রকল্পের আওতায় দৈনিক ৬০ মিলিয়ন লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার, কনভয়েন্স, ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন এবং দুটি রিজার্ভার নির্মাণ করা হবে। এজন্য প্রায় ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে শোধনাগার নির্মাণের জন্য লাগবে প্রায় ৪১ একর জায়গা। পাশাপাশি বাকি জায়গা রিজার্ভার ও পাইপলাইন বসাতে ব্যবহার করা হবে।

প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রায় পাঁচ একর জায়গা অধিগ্রহণ হয়েছে। মূল শোধনাগার নির্মাণের জন্য ৪১ একর জায়গা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। জায়গার মূল্যও জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মালিকরা টাকা বুঝে নিলে ওই জায়গা অধিগ্রহণ করবে ওয়াসা।

‘বিভিন্ন জটিলতায় প্রকল্পটির কাজ আটকে যায়। প্রকল্প গ্রহণের সময় জায়গার দাম যে দরে নির্ধারণ করে হয়েছে সেটি এখন কয়েকগুন বেড়েছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসন হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হওয়ায় প্রকল্পের মূল কাজ দ্রুত শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিন ধাপে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রথম ধাপে ভাণ্ডালজুড়িতে শোধনাগার নির্মাণ, দ্বিতীয় ধাপে কনভয়েন্স, ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন নির্মাণ হবে। শেষ ধাপে পটিয়া ও কেইপিজেডে রিজার্ভার নির্মাণ করা হবে।’

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, বুধবার ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটির সভায় ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। তাই দ্রুত কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here