প্রখ্যাত ঢোল বাদক এবং একুশে পদক প্রাপ্ত বিণয় বাঁশি জলদাশ বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়নের ছনদারিয়া গ্রামে ১৯১১ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা : উপেন্দ্র লাল জলদাস। মাতা : সরবালা জলদাস। তিনি শৈশবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত রাম সুন্দর বসাকের বাল্যশিক্ষা পর্যন্ত অধ্যায়ন করেন। ক্রমান্বয়ে তিনি যন্ত্র সংগীতকে আপন পেশা হিসেবে বেছে নেন।
রায়খালীর লক্ষীন্দর ও ত্রিপুরা জলদাসের কাছে তিনি তালিম নিয়ে যন্ত্র সংগীত জগতে পদার্পন করেন, এরপর উপমহাদেশের বিখ্যাত কবিয়াল, একুশে পদক প্রাপ্ত, কবিয়াল রমেশ শীলের সহশিল্পী হিসেবে তিনি বাংলার পথে-প্রান্তরে বিচরণ করতে থাকেন। তাঁর প্রধান বাদ্য যন্ত্র হল ঢোল। তাছাড়া তিনি সানাই, বেহালা, দোতারা, করতার, মৃদঙ্গ ইত্যাদি বাদ্য যন্ত্রেও পারদর্শিতা লাভ করেন। তিনি প্রায় পয়ঁত্রিশ বছর কাল যাবত কবিয়াল রমেশ শীলের বাদনশিল্পী হিসেবে বিনয়ের সাথে কাজ করে গেছেন। শিল্পীকে কোন ধরনের হতাশা বা প্রলোভনে দেশ ত্যাগের চিন্তায় তাড়িত করতে পারেনি। ১৯৪৭ এর দেশে বিভাগ দাঙ্গা কিংবা একাত্তরের অগ্নিঝরা যুদ্ধ এমন কি পশ্চিম বঙ্গের কোন প্রলোভনেও তাঁকে দেশাত্ববোধের মহান ব্রত থেকে উপড়ে ফেলতে পারেনি। তাঁর বাজনায় মুগ্ধ হয়ে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নটরাজ উদয় শংকর তাঁর নৃত্যদল “মম বাণিতে” যোগ দেওয়ার জন্য বিণয় বাঁশিকে আহ্বান জানান। ২০০২ সালের ৮ফেব্র“য়ারি তিনি মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ২০০২ সালের ৫এপ্রিল দিবাগত রাত দেড়টায় বিনয় বাঁশি নিজ বাসভবনে পরলোক গমন করেন। তাঁর এসব অবদানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে “একুশে পদক”-এ ভূষিত করেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় বিশটিরও বেশি সম্মাননা পদক পেয়েছিলেন এবং শতাধিক লোক গীতিও রচনা করেছেন।