আবদুর রহিম ও অগ্রদূত

প্রাচীন ইতিহাসের লেখনি সংরক্ষণ সংগ্রাহকদের মনের মানুষ বিশিষ্ট পুঁথিগবেষক মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী আর নেই। সোমবার (২৩ নভেম্বর ২০২০) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নগরের সার্জিস্কোপ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭২ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ বহুগুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর ২০২০) সকাল ১১টায় নিজগ্রাম পটিয়ার দক্ষিণ হুলাইনে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। লেখক গবেষক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সমাজ হিতৈষীগণের উপস্থিতেতে জানাযা শেষে নিজ বাড়ীর আঙিনায় পারিবারিক কবরস্থানে পরম মমতায় চির নিদ্রাায় শায়িত হন পূঁথি গবেষক ইসহাক চৌধুরী।

একাধারে লেখক, গবেষক পূঁথি সাহিত্য সংগ্রাহক মোহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবলিও গ্রাফার হিসেবে সফল কর্ম থেকে অবসর গ্রহণ করেও গবেষণা কর্মে কমরত ছিলেন। তিনি খ্যাতিমান পুঁথিবিশারদ আবদুস সাত্তার চৌধুরীর ছেলে এবং মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের আত্মীয় ও অনুসারী ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত :
মুহাম্মদ ইসহাক চৌধুরী। জন্ম -১৯৪৮ সালে পটিয়া হুলাইন গ্রামে। মা- মৃত ছবিলা খাতুন। বাবা- খ্যাতনামা পুঁথি সংগ্রাহক আবুদস ছাত্তার চৌধুরী। পিতার লোক সাহিত্য প্রীতি, দেশ প্রেম ও আত্মত্যাগের অধ্যাবসায়ী চর্চিত পথে নিজেকে সঁপে দিয়ে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে আগুয়ান। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের চাকরি দিয়ে জীবন শুরু করে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রেয়র শাখায় চাকুরী গ্রহণ করেন। অবসরে। থেমে ছিলনা তাঁর অনুসন্ধানী পথ চলা। চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনুসন্ধানী কর্মতৎপরতায় নিজেকে আমৃত্যু ব্যস্ত রেখেছেন। হারানো কীর্তি বা অবলুপ্ত প্রায় প্রত্মসম্পদ কিংবা সাহিত্য, পুঁথি, গাঁথা প্রভৃতি অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাদুঘর ও গ্রন্থগারে প্রাচীন পুঁথি ও পান্ডুলিপি ছাড়াও বহু পূরাকীর্তির আনুষাঙ্গিক তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহ করে দেন। তৎমধ্যে ফতেয়াবাদস্থ ফকির তকিয়ায় প্রাপ্ত (তাঁর আবিষ্কৃত) স¤্রাট আওরঙ্গজেবের নামাঙ্কৃত একটি শিলালিপি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি এ পর্যন্ত ২০০০ প্রাচীন পুঁথি ও ৫০০ দ্বিভাষী পুঁথি সংগ্রহ করেন।

বর্তমানে তাঁর পৈত্রিক বাসভুমিতে পিতার নামে একটি সংগ্রহশালায় এসব পান্ডুলিপি এখনো শোভাবর্ধন করে আছে। তথ্যমতে এ সংগ্রহশালায় ১৬০০ সাল থেকে তৎপরবর্তী সময়ের কয়েক শত বছরের পান্ডুলিপি ও প্রাচীন কিছু মূল্যবান দলিল সংরক্ষণে আছে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছাপানো তাঁর প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৪০০।

বাংলার লোক চর্চায় অবদানের জন্য এই অকৃত্রিম বন্ধুকে সৃজনশীল সাহিত্য গোষ্ঠী ‘মালঞ্চ’, ‘রমেশ-বিনয়-শেফালী চর্চা কেন্দ্র’ সহ নানা ভাবে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে স্মারক সম্মাননা অর্জন করেছিলেন।

পৃথিবীর চলমান জীবনে তিনি আর নেই। তবে পৃথিবীর লোক সাহিত্য ও বাঙ্গালীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর অনুপস্থিতি বাংলার লোক সাহিত্যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁর কর্মময় জীবনকে লোক সাহিত্যে সফলতার সোপানে স্মৃতি হয়ে থাকুুক। ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকুন ইতিহাসে, তেমনটি বললেন উপস্থিত অনেক লেখক-গবেষক ও সমাজ হিতৈষীগণ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here