ধর্ষক মজনু- অরুনা নামে এক নারীর কাছে মাত্র ৪০০ টাকায় বিক্রি করে ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনটি। অরুনা সেই মোবাইল খাইরুল নামের পরিচিত এক রিকশাচালকের কাছে চার্জের জন্য দেয়। সেই মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করেই ধর্ষক মজনুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, গতকাল (৭ জানুয়ারি) বিকেলে র‌্যাব মোবাইল ফোনের লোকেশন ধরে প্রথমে খাইরুল নামের রিকশাচালককে রাজধানীর শেওড়া এলাকা থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

খাইরুল জানায়, এই ফোন অরুনার কাছে পেয়েছে। পরে খাইরুলকে অরুনার কাছে নিয়ে গেলে অরুনা র‌্যাবকে জানায়, ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনে থাকে মজনু নামের এক ব্যক্তি। সে তার কাছে ৪০০ টাকায় ফোনটা বিক্রি করেছে। তখন র‌্যাব মজনুর খোঁজে নেমে পড়ে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ধর্ষণের পর মজনু ফোন বিক্রি করে প্রথমে বনানী রেলস্টেশনে যায়। সেখান থেকে কমলাপুর এবং কমলাপুর থেকে ওই রাতেই ট্রেনে নরসিংদী যায়। নরসিংদী থেকে গতকাল ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে ফিরে আসে সে। বুধবার ভোরে ৪ টা ৫০ মিনিটে শেওড়া রেল ক্রসিং থেকে মজনুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা।

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি, রোববার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে করে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কুর্মিটোলা বাসস্টপেজে নামার পর তাকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গলা ও মুখ চেপে ধরলে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তাকে ঝোঁপে নিয়ে ধর্ষণ করে।

পরে রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে ওই শিক্ষার্থী রিকশায় করে বান্ধবীর বাসায় যান। সেখান থেকে বান্ধবীসহ অন্য সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিসি সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ৬ জানুয়ারি সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করেন।

শিশু, প্রতিবন্ধী ও নারী ভিক্ষুকদের টার্গেট করতো মজনু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ধর্ষক মজনু একজন ‘সিরিয়াল রেপিস্ট’ বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। নোয়াখালীর এই দিনমজুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বিভিন্ন সময় ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী নারীদের ধর্ষণ করে সে। এসব ঘটনায় কুর্মিটোলার ওই জায়গাটি প্রায়ই ব্যবহার করেছে সে।

র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে নোয়াখালির হাতিয়া থেকে ঢাকা আসে মজনু। এরপর কখনো কমলাপুরে , কখনও আবার  ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে ভবঘুরে হিসেবে দিন কাটাত মজনু। আর এসব রেলস্টেশনের থাকা প্রতিবন্ধী নারী ও ভিক্ষুকদের ধর্ষণ করত সে।

ব্রিফিংয়ে সারওয়ার বিন কাশেম জানান, মজনু মাদকাসক্ত। সে  ছিনতাই, রাহাজানি ও চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডেও জড়িত। বুধবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর শেওড়া এলাকা থেকে ধর্ষক মজনুকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান র‌্যাবের মিডিয়া শাখার এই পরিচালক।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে শেওড়া রেল ক্রসিং এলাকা থেকে ধর্ষক মজনুকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। এসময় তার কাছ থেকে ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও পাওয়ার ব্যাংক এবং মজনুর পোশাক উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার সন্দ্বীপে। তার বাবা মৃত মাহফুজুর রহমান। মা জীবিত থাকলেও বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। মজনু বিবাহিত, তার স্ত্রী মারা গেছেন। ১০ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসে সে।

অ্যাজমার কারণে মেয়েটিকে সহজেই কাবু করে ধর্ষক মজনু

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার মজুন ঘটনার দিন কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিজের চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সে ওই মেয়েটিকে দেখতে পায়। এরপর সে মেয়েটিকে অনুসরণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে মজনু ওই শিক্ষার্থীর মুখ ও গলা চেপে ধরে। মেয়েটির অ্যাজমা থাকায় সে খুব সহজেই অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর সে মেয়েটিকে পাজা কোলে করে ঝোঁপের আড়ালে নিয়ে গিয়ে কয়েকবার ধর্ষণ করে। ফাঁকে ফাঁকে ওই মেয়েটিকে সে ঘুষি ও চড়-থাপ্পর দেয়। এমনকি তাকে গলা টিপে হত্যারও পরিকল্পনা ছিল ধর্ষকের।’— বলছিলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মিডিয়া শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘ধর্ষক মজনুর কাছ থেকে ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর ব্যাগ, মোবাইল ফোন, পাওয়ার ব্যাংকের পাশাপাশি ইনহেলারও উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি মেয়েটিও জানিয়েছে যে, তার অ্যাজমা ছিল বলেই সে ব্যাগে ইনহেলার রাখতো। আর অ্যাজমায় থাকায় মেয়েটির মুখ চেপে ধরার কারণে সে খুব সহজেই অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর মজনু ওই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।’

এদিকে মেয়েটির স্বজনরাও জানিয়েছে যে, তার অ্যাজমা ছিল। সে কারণে ব্যাগে সবসময় ইনহেলার বহন করতো।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৫ জানুয়ারি, রোববার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে করে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কুর্মিটোলা বাসস্টপেজে নামার পর তাকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অনুসরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গলা ও মুখ চেপে ধরলে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তাকে ঝোঁপে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে ওই শিক্ষার্থী রিকশায় করে বান্ধবীর বাসায় যান। সেখান থেকে বান্ধবীসহ অন্য সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here