ড. সেলিম জাহাঙ্গীর

হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর (১৮২৬-১৯০৬) পবিত্র বেলায়তের ‘আতরের শিশির’ ছিপি খুলে দিগ-দিগন্তে সুগন্ধি ছড়িয়ে দেওয়ার যে হেকমতি কার্যটি সম্পাদন করে মাইজভান্ডারী ত্বরিকা ও দর্শনকে দেশে এবং বহি:বিশ্বে পরিচিত, প্রচারিত ও প্রসারিত করার অনুঘটকের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন যিনি, তিনিই হযরত মাওলানা শাহ্সুফি অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (ক:) (১৮৫২-১৯২০)

পবিত্র ইসলাম ধর্মের হাজার বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর দেশে দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ত্বরিকার উদ্ভব ঘটেছে। এর মধ্যে একজন বাঙালি সুফি সাধক কর্তৃক বাংলার মাটিতে প্রবর্তিত একমাত্র ত্বরিকা হলো মাইজভান্ডারী ত্বরিকা। মাইজভান্ডারী ত্বরিকার প্রবর্তক গাউসুল আযম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারীর (ক:) জীবদ্দশায়, মাত্র ৫০ বছর বয়সে, তাঁর কামালিয়ত বিকাশের সূচনাপর্বে ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর তুঙ্গীয় জনপ্রিয়তাসূচক একটি বন্দনা পাওয়া যায় এভাবে-
মাইজভান্ডার, বিনাজুরী, কুতুবছড়ি,
দমদমা রায়পুর
মৌলভী আহমদ উল্লাহ জান জগতে মশুর [মশহুর]১ ‘জগতে মশুর’ অভিধার নতুন মাত্রিক অনুরণন শুনা যায় সমকালীন গানেও-
চাডিয়ার জ্ঞানের চাত্তি কভূ নিভেনা/
ও তার সাগর ঘেরা, পাহাড়বেড়া পীর সন্ন্যাসীর আস্তানা/
বদরশাহ, আমানত, বায়েজিদ বোস্তাম/
মোহছেন, গরীবউল্লাহ শোকর পেটান/
‘আহমদ উল্লাহ ভান্ডারী’ জান মানুষ করে দেওয়ান।২

যিনি ৫০ বছর বয়সে জগতে ‘মশহুর’ হয়ে মানুষকে ‘দেওয়ান’ করে তুলেছিলেন তিনি তাঁর সেই অসাধারণ আধ্যাত্মিক বিশেষত্বকে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশ-বিদেশে। আর এর দায়িত্বশীল বিশ্বস্থতম বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খলিফা।

গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য বিশেষত্ব হলো তিনি আধ্যাত্মিকতার পরশে দেশ-বিদেশে অসংখ্য ‘কামেল খলিফা’ নিযুক্ত করে মাইজভান্ডারী ত্বরিকা ও দর্শনের প্রচার প্রসারের ধারা জারি রাখার বিষয়টি সাব্যস্ত করে গেছেন সুপরিকল্পিতভাবে। এ সুপরিকল্পিত কাজের সুন্দর বর্ণনা পাওয়া তাঁরই এক খলিফার লেখনীতে- গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী খোদার ভান্ডার
খোদার প্যারা [পেয়ারা] মাইজভান্ডারী ২ সারি সারি নানান দেশে ২
কামেল সাগ্রিদ [খলিফা] বসাইছে মন সুখে ॥

কত আলেম কত মাওলানা ২ করে বিড়ানা [সর্বশান্ত] ইঙ্গিত নয়নে।
কাজী মুপ্তি [মুফতি] নাএব-নবাব ভ্রমায় স্থানে ২ ॥ ৩ গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর এ ঐতিহাসিক কর্মকান্ডের শুভ সূত্রপাত যাঁকে দিয়ে তিনি হলেন তাঁর প্রথম খলিফা মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপি (ক:)।

একারণে মাইজভান্ডার, মাইজভান্ডারী ত্বরিকা, গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী প্রসঙ্গ আলোচিত এবং উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপির (ক:) নামটি চলে আসে অবলীলাক্রমে।

বলাবাহুল্য, তাঁকে কেন্দ্র করে যত আলোচনা-পর্যালোচনা, ফ্রি ল্যান্স ও প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা হবে তত বেশীকরে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর ত্বরিকার বিশেষত্ব প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে নতুন মাত্রিকতায়, নতুনভাবে।
এ ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনাবোধকে সামনে রেখে মাওলানা অছিয়র রহমান চরণদ্বীপির প্রামান্য পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ প্রণয়নের কাজটিতে হাত দেওয়া আজ রীতিমতো সময়ের দাবীতে পরিগণিত॥
১. কবি আহমদ আলী মিয়ার ‘বড় তুফানের কবিতা’। ব্যক্তিগত আর্কাইভ
২. কবি অমলেন্দু বিশ্বাস এর গান।
৩. মাওলানা আমিনুল হক হারবাঙ্গিরীর ‘ফকির উল্লাস কবিতা’। উদ্ধৃত: মাইজভান্ডার সন্দর্শন, ড. সেলিম জাহাঙ্গীর, বাংলা একাডেমী-ঢাকা-১৯৯৯, পৃ. ৩৩৬, ৩৫০

লেখক: বিশিষ্ট মাইজভান্ডারী গবেষক ও রিসার্চ ফেলো ফিনিস একাডেমী, হেলসিংকী, ফিনল্যান্ড

মৌলানায়ে আকদছ শাহ চরণদ্বীপি (ক.) কেবলার জীবনী শরীফ থেকে সংগৃহিত

লিংক https://play.google.com/store/apps/developer?id=Senani+International

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here