আজ শনিবার সকালে নগরীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৯ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবছরের মতো এবারও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদের চেয়ে এবার রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো, নৌ-পথে বেশ কয়েকটি নতুন লঞ্চ বহরে যুক্ত হয়েছে, রেলপথেও বেশ কয়েক জোড়া নতুন রেল ও বগি সংযুক্ত হয়েছে। এবারের ঈদের লম্বা ছুটি থাকায় জনসাধারণ আগে ভাগে বাড়ি পাঠানোর সুযোগ কাজে লাগানোর কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এবারের ঈদে বিগত বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ১৯.৩৯ শতাংশ, নিহত ২৪.১৭ শতাংশ ও আহত ৪৮.৯৯ শতাংশ কমেছে। এ বছর মোট সংঘটিত ২৩২টি সড়ক দুর্ঘটনার ৭৬টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ। যেখানে মোট নিহতের ৩০ শতাংশ এবং মোট আহতের ১০ শতাংশ । অন্যদিকে পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ায় ঘটনা প্রায় ৪৫ শতাংশ ঘটেছে। আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে এই দুর্ঘটনার প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ঈদ যাত্রা শুরুর দিন ৩০ মে থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১১ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে ২৩২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ও ৮৪৯ জন আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় ৪০জন চালক, ২০জন শ্রমিক, ৬৮জন নারী, ৩৩জন শিশু, ২৪জন ছাত্র-ছাত্রী, ০২জন চিকিৎসক, ১৯জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্য, ০৩জন রাজনৈতিক নেতা, ৯১২জন পথচারী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
উল্লিখিত সময়ে রেল পথে ট্রেনে কাটা পড়ে ০৮টি, ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ০২ টি , ট্রেন যানবাহন সংঘর্ষে ০১ টি, ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ০২টি ঘটনায় মোট ১৩ জন নিহত ও ০৩ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে নৌ-পথে ১১টি ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত, ০৩ জন নিখোঁজ ও ০৮ জন আহত হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য ৪০টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, ৮টি অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা নিন্মরূপ:
তারিখ সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা নিহত আহত
৩০ মে ২০১৯ ১৭ ১৫ ১৬
৩১ মে ২০১৯ ১৩ ১৩ ৩২
০১ জুন ২০১৯ ১৪ ১৫ ৩৭
০২ জুন ২০১৯ ২০ ৩০ ৮৬
০৩ জুন ২০১৯ ০৯ ১৪ ৩৭
০৪ জুন ২০১৯ ১৯ ২৬ ১০৫
০৫ জুন ২০১৯ ২২ ৩৬ ৯৩
০৬ জুন ২০১৯ ১৯ ২১ ৫৬
০৭ জুন ২০১৯ ২৩ ২৪ ১২৮
০৮ জুন ২০১৯ ২২ ২৫ ৬৯
০৯ জুন ২০১৯ ১৫ ১৩ ৯৭
১০ জুন ২০১৯ ১৮ ২০ ৫০
১১ জুন ২০১৯ ২১ ২১ ৪৩
১৩ দিনে নিহত সর্বমোট :২৩২
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৭.৪৩ শতাংশ বাস, ২৩.৮৯ শতাংশ মোটরসাইকেল ২৩.৫৯ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, লরি, ৮.২৫ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭.৬৬ শতাংশ অটোরিকশা, ৪.৪২ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৪.৭১ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৯.৭৪ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৪.৮২ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৯.৩৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায় ও ৬.০৩ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে
১. ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন ২. অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো। ৩. মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল। ৪. বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো। ৫. সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা। ৬. পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য। এবং ৭. মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
এবি/ টিআর