আইয়ুব খানের শাসনকালের সময়। মিটিং মিছিল,আন্দোলন চলে। এরই মাঝে একটি পরিবারের কাহিনী, পরিবারে সদস্য মাত্র তিনজন।
কাহিনীর বক্তা শুরুতে ঠান্ডা মাথায় নিজের পূর্বপুরুষদের আর বাবার আমলের কিছু কথা বলেন, তাতে কিছুটা নিন্দা মিশে ছিল।
বাড়ি বাঁচাতে কথক বিয়ে করেন মোক্তার সাহেবের বোবা মেয়েটিকে। কথা জানে না, আদর পায় নি কোনোদিন মেয়েটি। মাঝপথে কথক যদিও তার স্ত্রীভাগ্য নিয়ে কষ্টে ছিলেন কিন্তু হঠাৎ করেই বোবা মেয়েটির মায়ায় পড়ে যান। কথা বলার কতটা প্রবল ইচ্ছা তার। মেয়েটিও স্বামীর এরূপ মায়ায় অভিভূত হয়ে যায়।
মিছিল দেখে মেয়েটি কেমন যেন উত্তেজনা অনুভব করে, আওয়াজ যেন ঠিকরে বের হতে চায় গলা দিয়ে।
একদিন এক মিছিল নায়কের বাসার দিকে এগিয়ে আসছে। শ্লোগানের শব্দ শুনেই তার বোবা বউটি গলা দিয়ে আওয়াজ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। শেষে নায়কের মনে হয় তার এই মায়াবী বোবা বউটি যেন “বাঙলা” শব্দ উচ্চারণ করেছে, তার গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে। সমস্ত শক্তি জড়ো করে বাকযন্ত্রের ওপর হুকুম জারি করছে ‘উচ্চারণ করো, উচ্চারণ করো’।
গোটা বাংলাদেশের শিরা-উপশিরায় এক প্রসববেদনা ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের বুকফাটা চিৎকারে ধ্বনিত হচ্ছে নবজন্মের আকুতি।
আহমদ ছফার সবগুলো বইয়ের মধ্যে একটি অনবদ্য উপন্যাস হচ্ছে “ওঙ্কার”।
লেখা শেষ করেন একটি বাক্য দিয়ে, “কোন রক্ত বেশি লাল? শহীদ আসাদের না-কি আমার বোবা বৌয়ের!”