স্মরণীয় : মণীষা
আবুল মােকারেম হযরত মাওলানা সৈয়দ নুরুল ইসলাম (রহঃ) প্রকাশ নুরী বাবা
প্রকাশ:১০-১২-২০২০
মো. তাজুল ইসলাম রাজু
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর আহলা দরবার শরীফ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বোয়ালখালীর প্রাচীন জন বসতি এখানেই। এ আহলা গ্রামেই সুদূর বাগদাদ শরীফ থেকে শেখ মোহাম্মদ ঘোরী ও তাঁর অন্যতম সফরসঙ্গী গাউসুল আজম দস্তগীর-এর আউলাদ-এ পাক সুলতান আহমদ আল বাগদাদী এবং কিছু সংখ্যক সফরসঙ্গীসহ দিল্লী সম্রাটের আমন্ত্রণে সুলতানী আমলে এই উপমহাদেশে আগমন করেন। পরবর্তীতে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানাধীন করলডেঙ্গা পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করেন। যার বর্তমান নাম আহলা শেখ চৌধুরী পাড়া যা ‘আহলা দরবার শরীফ’ নামে প্রসিদ্ধ।
শেখ মুহাম্মদ ঘোরী (রহ.) ও সুলতান বাগদাদী (রহ.) এর বেছাল শরীফের পর শেখ ঘোরীর উত্তসূরীরা আহল্লা দরবার শরীফের মসনদের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছেন বংশানুক্রমে। হযরত শেখ মুহাম্মদ ঘোরীর পর তাঁর বংশধরদের মধ্যে এমন কিছু মহাপুরুষ রয়েছেন, যারা মানুষের জাগতিক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ সাধনে সুবিশাল অবদান রেখেছেন; ‘তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন যথাক্রমে শেখ দানু শাহ, শেখ মনু শাহ, শেখ আনিস প্রকাশ আনু শাহ পরবর্তীতে হযরত মাওলানা সফর আলী শাহ রুহানিয়তের মসনদে সমাসীন ছিলেন।
মাওলানা সফর আলী শাহ ঔরশজাত সন্তান মাওলানা জনাব কাজী সৈয়দ আছাদ আলী সাহেব কেবলা (রহ.) ১৮৫১ ঈসায়ী সালে এ ধরাধামে ভুমিষ্ট হন। বংশ পরম্পরায় কাজী আছাদ আলী শাহ কেবলা শেখ মুহাম্মদ ঘোরীর অধঃস্থন বংশধর এবং আউলাদে রাসূল (দ.)। তিনি উপমহাদেশ খ্যাত মাইজভা-ারী সরাফতের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ ও গোড়াপত্তনকারী “গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ)” প্রকাশ হযরত কেবলার আধ্যাতিœক শিষ্যত্ব লাভ করেন। সাধনা ও রেয়াজতের সুকঠিন সোপানসমূহ পার হয়ে সিদ্ধি লাভের পর তিনি হযরত কবলা (কঃ) এর অন্যতম ‘খলিফা’ হিসেবে পরিনত হন।
কুতব জমান জনাব শাহসুফী মাওলানা কাজী সৈয়দ আছাদ আলী কেবলা কাবার বেছাল শরীফের পর শেখ মুহাম্মদ ঘোরী কর্তৃক সূচিত আধ্যাত্মিক শরাফতের মসনদ আহ্লা দরবার শরীফের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে অনন্য অবদান রেখেছেন জনাব কেবলার দুই পুত্র আউলাদ পাক যথাক্রমে বড় সাহেবজাদা গাউছে জামান হযরত শাহসুফী সৈয়দ মাজহারুল ইসলাম ফকির মাওলানা প্রকাশ ইসলাম মওলা (রহ.) এবং ছোট সাহেবজাদা হযরত শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরী বাবা (রহ.)।
১৯১০ সালে হযরত মাওলানা কাজী আছদ আলী শাহ্ (কঃ)-এর ঔরশে জন্মগ্রহণ করেন আশেকে রাসূল মােজাহেদে আহলে সুন্নাত পেশওয়ায়ে শরীয়ত ওয়া তরীকত, জোবদাতুল মােনাজেরিন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআতের উজ্জল রবি আবুল মােকারেম হযরত মাওলানা শাহ্ নুরুল ইসলাম (রহঃ) প্রকাশ নুরী বাবা। তাঁর মাতার নাম গােলবাহার খাতুন।
শৈশবকাল থেকেই তার মধ্যে গভীর খােদা প্রেম ও আধ্যাত্ম অনুরাগ দেখা যায়। প্রাথমিক শিক্ষা দরবার শরীফের মৌলভী খলীল আহমদের কাছে আরম্ভ করেন। তারপর চট্টগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে নিবির পরিচর্যায় লেখাপড়া করে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি অর্জন করেন। অতঃপর কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় গমন করে তৎকালীন উপমহাদেশের খ্যাত আলেম হযরত মাওলানা শাহ্ সফিউল্লাহ্ (রহঃ) এর তত্ত্বাবধানে অধ্যয়ন শুরু করেন। একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম ও আত্মনিয়ােগের ফলে তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিনি হযরত মাওলানা শাহ্ সফিউল্লাহ্ (রহঃ) এর কাছে বায়আত গ্রহণ করতে চাইলে তিনি তাঁকে বলেন, “এখানে নয় মাইজভা-ার শরীফে চলে যাও”। শিক্ষা জীবন শেষ করে দেশে প্রত্যাবর্তন করার পর তিনি মাইজভা-ার দরবার শরীফে গিয়ে সাধককুল শিরােমনি কুতুবুল আকতাব ইউসুফে সানী, জামালে মোস্তফা হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ গােলামুর রহমান প্রকাশ বাবা ভা-ারী কেবলা (কঃ) মাইজভান্ডারীর পবিত্র হাতে বায়আত গ্রহণ করেন।
এই মহা পুরুষের হাতে বায়আত গ্রহণের পর তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরণ ঘটতে থাকে। কালক্রমে আহল্লা দরবার শরীফের খ্যাতির ইতিহাসকে তিনি আরাে সুসংহত ও শক্তিশালী করে তােলেন। তাঁর আমলে আহল্লা দরবার শরীফ ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে তিনি কুতুবুল আকতাব ফানাফিল্লা বাকাবিল্লা হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান প্রকাশ বাবাভান্ডারীর (ক.) খেলাফত প্রাপ্ত হন। তিনি সুন্নিয়ত প্রসঙ্গ নিয়ে একাধিক মোনাজেরা করেছেন বাতেলদের সাথে। এতে তিনি বিজয় হন এবং আশেকের রাসুলগণের প্রাণের প্রিয়জন হয়ে উঠেন। হাজারো আশেকের এ শিরমনি ১৯৭৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ২৮ অগ্রহায়ণ ওফাত বরণ করেন।