মো. তাজুল ইসলাম রাজু
এক.
১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইংরেজী, মঙ্গলবার। ভেন্যু চট্টগ্রাম নগরীর মোটেল সৈকত কনভেনশন হল। নবীণ, প্রবীন, আবাল বৃদ্ধ বনিতার এক সরব উপস্থিতি। উপলক্ষ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবতাবাদী সংগঠক, দেশে-বিদেশে বহুপুরস্কার, সম্মাননা ও উপাধিপ্রাপ্ত বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০২০ সালে শিক্ষায়-‘একুশে পদক’- এ ভূষিত, বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র ৭৫বছর জন্ম জয়ন্তী। হীরক জয়ন্তী ও আজীবন সম্মাননা পরিষদ’র আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, খ্যাতিমান সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সরব ও আলোক ঝলমল উপস্থিতিতে পরিনত হল নিবেদিত মানুষের যেন এক প্রাণের মিলন মেলা। এ আয়োজনের বুনিয়াদী ও উদ্যগ একটি প্রকাশনা ‘ বিভাসিত বিকিরণ’ শিরোনামে একটি স্মারক গ্রন্থ। যা নিয়ে আজকের আলোচনা- গৌরচন্দ্রিকা করার ইচ্ছে কিংবা অবকাশ না নিয়ে বিষয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে চাই। কেননা প্রকাশনাটি আপেক্ষিক ভাবে যেমন সুদৃশ্য হয়েছে তেমনি সন্নিবেশিত উপাচারও সমৃদ্ধ, তথ্য ও তত্ত্ববহুল।

দুই.
‘বিভাসিত বিকিরণ’ স্মারক গ্রন্থটিতে যাঁরাই লিখেছেন- সকলের লেখনির মূল প্রতিপাদ্য- প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া। বইটি পড়ে শিক্ষা ও সামাজিকতায় ব্রতী হয়ে ৭৫টি বসন্ত যিনি পার করলেন এ সুখময় পৃথিবীর আন্দোলিত জীবনে, তা একপ্রকার বিষ্ময়কর বটে। প্রতিটি লেখকই নিজের রচনাশৈলিতে প্রফেসর ড. বড়–য়া’র বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে মনের মাধুরি মেশানো শব্দের গাঁথুনি দিয়ে সাজিয়েছেন। একজন মানুষের জীবনে এত প্রাণচঞ্চল কর্মযজ্ঞের উপস্থিতি থাকতে পারে তা এই স্মারক গ্রন্থটি না পড়লে বুঝতে পারবে না।

তিন.
এবার একটু পর্যালোচনা, স্মারক গ্রন্থের লেখনী নিয়ে- স্মারক গ্রন্থটিতে প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র জীবন ও কর্মর্কীতি মূল্যায়নকৃত ৮৪টি প্রবন্ধ/ নিবন্ধ, নিবেদিত কাব্য ১৩টি, প্রফেসর ড. বড়–য়া’র ৩টি মূল্যবান তথ্য সম্বলিত প্রবন্ধ, হীরক জয়ন্তীকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গুণিজন, রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবিদ ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গের ১৭টি বাণী, প্রফেসর ড. বড়–য়া’র জীবন ও কর্মনীতির দুর্লভ চিত্র সম্বলিত এ্যালবাম, ২০টি রচিত গ্রন্থ ও সম্পাদনা করেছেন তার প্রচ্ছদের ছবি, বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত ৪৫টি প্রশংসা পত্রের ছবি, বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত পেপার কাটিং এবং হীরক জয়ন্তী ও আজীবন সম্মাননা পরিষদের সদস্যদের নামের তালিকা ছাপানো হয়েছে ।
উল্লেখ্য প্রফেসর ড. বড়–য়া’র পরিবারের পক্ষ থেকে বড় মেয়ে সংগীতা বড়–য়া’র এক পুচ্ছ অনুভূতি প্রকাশ পায়। যা প্রতিটি পাঠককেই নষ্টালজিক সংবেদনশীল করে তুলবে। স্মারক গ্রন্থটিতে প্রতিজন লেখকই স্ব-স্বভাবে পরিচয় বহন করেন। উনাদের কেউ শিক্ষাবিদ, কেউ প্রতিষ্ঠানের প্রধান আবার কেউ বা প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র সরাসরি ছাত্র, শুভানুধ্যায়ী, সুধিজন।

চার.
যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা আর কঠিন বাস্তবতার নিরংকুশ পারাকাষ্ট দেখিয়েছেন অধ্যাপক বড়–য়া। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্মাননি বটে, তবে দু’চোখ ছিল সোনালী স্বপ্নে বিভোর। তাই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও একুশে পদক প্রাপ্ত প্রফেসর ড. সুকোমল বড়–য়া কথাগুলো এভাবেই লিখলেন- ‘তাঁর প্রতি আমার একটি কষ্টের উপলব্ধিও আছে। যেমন- তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম জীবন থেকে একজন একনিষ্ঠ সমর্থক এবং ঐ আদর্শের বুদ্ধিজীবি। দীর্ঘকাল থেকে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক ¯্রােতধারার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এমনকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতেও তিনি সরব ছিলেন। যে কোন মিছিল সংগ্রামে তাঁর অনন্য ভূমিকা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। মনে হয় তিনি তাঁর বহু মূল্যবান সময় ঐ রাজনৈতিক আর্দশেই ব্যয় করেছেন। জীবনে ঝুঁকি নিয়েও নানা সমস্যা ও সংকটপূর্ণ কাজে এগিয়ে গেছেন এবং বহু ত্যাগও স্বীকার করেছেন।’

প্রজ্ঞাবান শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সুধীর বিকাশ দেবের ভাষায় ‘আজকের বিখ্যাত পদার্থবিদ, বয়স ৭৫ হলেও সমান সুদর্শন, মিতবাক, মুখে যাঁর সর্বদা স্মিথ হাসি, গুরুগম্ভীর হলেও প্রথম দর্শণেই আপন মনে হয় তাঁকে।’ তাই বলতে হয় প্রফেসর ড. বড়–য়া মানুষ হিসেবে খুবই বিনয়ী ও নিরহংকারী; সহজে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে আন্তরিকভাবে মিশতে পারেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সহজে আপন করে নিতে পারেন। তাঁর মার্জিত ভদ্র অমায়িক আচার-আচরণ সকলকে আকর্ষণ করে। প্রফেসর ড. বড়–য়া সুস্থির সহিষ্ণু ধৈর্যশীল বিনয় ভারসাম্যপূর্ণ এক প্রাজ্ঞ পরিপূর্ণ মানুষ। এমনভাবেই নিবেদিত লেখাগুলোর মধ্যে উঠে এসেছে ড. বড়–য়া’র মহীরূহ জীবনালেখ্য।

বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক প্রাপ্ত বাংলার বরেণ্য ছড়া সাহিত্যিক সকুমার বড়–য়া’র ১৬লাইনের একটি ছড়া নিবেদন যেন পাঠকদের জন্য একটি অসাধারণ প্রাপ্তিযোগ।
‘এক জীবনে এতো পাওয়া/ হয়না সবার ভাই, আবুর খীলের বিকিরণের / নাই তুলনা নাই।
শিক্ষা বলেন-ধর্ম বলেন/ সমাজ বোয় এগিয়ে চলেন, সকল কাজে গুণী মানুষ / সবার আগে পাই। ’…

স্মারক গ্রন্থটি সম্পাদনায় শিমুল বড়–য়া লিখেছেন- ‘শিক্ষার প্রসারে-মানোন্নয়নে, বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে, সমাজ-সদ্ধর্মের উন্নয়নে, মানবতার সেবায় এবং আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রবাহমান রাখার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য প্রফেসর ড.বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অসংখ্য পুরস্কার-সংবর্ধনা-সম্মাননা-উপাধিতে অভিষিক্ত হয়েছেন। বয়স পঁচাত্তর হলেও এখনো তারুণ্যদীপ্ত, কাজে কর্মে চিন্তা চেতনায় পঁচিশকেও হার মানাবে। এখনো সমাজকে দেশকে কিছু দেবার জন্য উদগ্রীব উৎসুক।

চবি গবেষক ভাস্কর ডি. কে. দাশ (মামুন) প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র জীবন চরিতের একটি অংশে লিখেন ‘চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশে যে ক’জন দেশদরদী, শিক্ষাব্রতী সমাজ সেবক, যাঁদের অসাধারণ ত্যাগের মাধ্যমে আপন সমাজ, সম্প্রদায়, সংস্কৃতি, ধর্ম, মানবিক কল্যাণে, মানবতার আদর্শের জয়গান গেয়ে এই জনপদের ভাবমূর্তিকে স্বদেশে এবং বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল করার মহান প্রয়াস চালিয়ে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করেছেন তন্মধ্যে প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়ার নাম নিশ্চয়ই তালিকার অগ্রভাগে। প্রগতিশীল চেতনা ও আদর্শে পশ্চাদপদ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সুদীর্ঘ প্রায় ৫৬ বৎসর ধরে নিজেকে নিয়োজিত রেখে প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ূয়া মানব সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শিক্ষার উন্নয়নে, যুব সমাজের কল্যাণে, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির পরিপোষণে, সচেতনতামূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নের মতো ইত্যাদি কর্মকান্ডে যে ক’জন ব্যক্তি ও মহান নেতা বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তন্মধ্যে প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া অন্যতম পুরোধা জন হিসেবে ইতিমধ্যে সমাদৃত হয়েছেন। বহুগুণে গুণান্বিত একজন প্রতিভাদীপ্ত, মেধা ও সৃজনশীল ব্যক্তি প্রফেসর ড.বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া তাঁর বহুমুখী কর্মকা-ে অবদানের জন্য দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পরিষদ, সংস্থা কর্তৃক প্রভূতভাবে প্রসংশিত হয়েছেন এবং বহু উপাধিতে ভূষিত হয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত করেছেন। মণীষীতুল্য এই মানুষটির জীবন শত চড়াই-উৎরাইর ভেতর দিয়ে এগিয়েছে বরাবর।’

…লিখেছেন ওপাড় বাংলার খ্যাতনামা বাঙালী বুদ্বিজীবি লেখকগণ। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভারতের কলকাতা আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যশস্বী অধ্যাপক দেবকন্যা সেন লিখেছেন- ‘একজন সমাজ অনুভাবককে নিয়ে আমার আজকের এই লেখার অবতারণা। এঁরা এমনই প্রকৃতির যে ভৌগোলিক সীমারেখা, রাষ্ট্রিক-সামাজিক বলয় কিংবা গন্ডি কখনো তাঁদের নিদিষ্ট ভূখন্ডের জন্য স্বাতন্ত্রিক কওে তোলা সম্ভব নয়। সমগ্র বিশ্বটিই তাঁদের কাছে আপনালয়ের মতো তাঁদের নিলয় কিংবা আলয়ের চৌহদ্দিটাই দিগস্ত প্রসারী এক বিশ্বজোড়া মানবিকতার নিপুণ সূচি কর্মের নিটোল টেপেষ্ট্রী। মূল্যবোধ আর মানবতা তাঁদের জীবন চলার মূলমন্ত্র। তাঁরা আসে, অবলীলায় জগৎকে অবলুপ্ত কর। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মাঝে তাঁদের সামগ্রিক মুক্তির দাবী, প্রতিবাদ, জনকল্যাণে সুবিধানের জন্য। কল্যাণমিত্র, জনবান্ধব অথচ, ধী ও প্রজ্ঞার আলোয় উদ্ভাসিত সেই মানুষটি হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যশস্বী শিক্ষক, খ্যাতিমান ভৌত বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া।’

মানুষের মধ্যে মৈত্রী-করুণা-মুদিতার অভাব হলে তাকে ভাল মানুষ বলা যায় না। এভাবে মূল্যায়ন করে বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘনায়ক অধ্যাপক বনশ্রী মহাথের লিখেছেন- ‘প্রফেসর ড.বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়ার সৌভাগ্য যে তিনি স্বদেশে, বিদেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বহু পুরস্কার, সম্মাননা ও অভিধা লাভ করেছেন। জীবদ্দশায় হীরক জয়ন্তী পালন ও আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তি সবই তাঁর অবদানে স্বীকৃতি।’

নানামুখী প্রতিভার অধিকারী হলেই যে একজন মানুষ অনেকের মনে স্থান করে নিতে পারে। সমাজকে দিক নির্দেশনা দিতে পারে, এমন কথায় উঠে এসেছে চবি পালি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গবেষক প্রফেসর ড. দীপংকর শ্রীজ্ঞান বড়–য়া’র লেখনিতে। তিনি লিখেছেন- ‘প্রফেসর বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া একজন আদর্শ শিক্ষক, লেখক, প্রবন্ধকার, অনুবাদক ও গবেষক। তাঁর বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলোতে সমাজরে দিক নির্দেশনা রয়েছে। বেশ কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্ত ছাড়াও কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থে তাঁর পান্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি উঁচু মাপের বক্তাও বটে। তাঁর যুক্তি সহকারে উপস্থপিত বক্তৃতা সর্বমহলে প্রশংসিত। ’

সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন বুড্ডিস্ট স্টাডিজ এ ও উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ প্রফেসর দীপক তালুকদার লিখেছেন- ‘ছাত্র জীবন হতে তিনি ধর্মীয় সংগঠন সহ বিজ্ঞান বিষয়ক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের একজন প্রথম সারির নেতার তথা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। ধর্মীয় দর্শনের তাঁর বক্তব্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকে ধার্মিকতার পথে চলার পথ খুঁেজ পেয়েছেন।’
মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী জয়কেতু বড়–য়া লিখেছেন- ‘মানুষে নিজের অন্তরে এক বিরাট শক্তি উৎস নিহিত রয়েছে। মানুষ যতক্ষণ তার সন্ধান না পায় ততক্ষণ সে ছোট দুর্বল নানা প্রলোভন অনায়সে তাকে বশীভূত করে থাকে। সে মহাশক্তিধর সমস্ত বিপত্তি জয় করে দুর্বার শক্তিতে আপন লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। তাই প্রয়োজন হচ্ছে আত্ম-সংযম দমনের মধ্য দিয়ে ঐ শক্তির উৎসকে উন্মোচিত ও সদ্ব্যবহার করা’।

চট্টগ্রামে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন ওপাড় বাংলা ভারতের কলকাতার বহু সমাজ সংগঠনের কর্ণধার এবং নারী সংগঠক ভারতের জাতীয় অধ্যাপক মিনতি দত্ত মিশ্র। তিনি কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের উক্তি থেকে প্রবন্ধে লিখেছেন – ‘একটি কথা আমরা অবশ্যই বলতে পারি- দেশের চাইতে বড় কিছু নয়, আর দেশের মানুষের জন্য, স্বদেশের স্বাধীন সত্তার জন্য, সমাজ সংস্কৃতিকে মর্যাদায় ধরে রাখার জন্য, নিজ ধর্মবিশ্বাসে অবিচল থেকে, দেশ ও জাতিকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের মধ্যে, চোখে দেখে, তার ধারাবাহিক কর্মপদ্ধতিকে চাক্ষুস করে একজন মানুষকে চিনেছি, তিনি হলেন- প্রফেসর ডক্টর বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশে গিয়ে তাঁর সাথে পরিচিত হলাম। আরো লিখেছেন-কলকাতার গীতিকার-নাট্যকার-সংস্কৃতিকর্মী উজ্জ্বল বিশ্বাস।
হীরক জয়ন্তী ও আজীবন সম্মাননা পরিষদের সচির, প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র সরাসরি ছাত্র এবং বহু পাঠ্যগ্রন্থের প্রনেতা অধ্যক্ষ শেখ এ. রাজ্জাক রাজু অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ‘স্যারকে যেমন দেখেছি- আজো ভুলিনি’ শিরোনামে লিখলেন-‘সন্ধ্যাকাশের ধ্রুবতারার মতো আলোকোজ্জ্বল আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালী মনীষা ’৭১-এর রণাঙ্গানের বীরমুক্তিযোদ্ধা, নির্লোভ, নিরহংকার, উদার মানবতা দরদী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, পদার্ধবিজ্ঞানী ও দার্শনিক। যাঁর শিক্ষাদানের আলোয় আলোকিত হয়ে নিজেকে এ পর্যায়ে এনেছি- তিনি হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া, আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক। আকাশের মতো উদারতা, ¯্রােতস্বীনি নদীর মতো প্রখরতায় ড. বিকিরণ স্যার লোক সমাজের জন্য অনুকরণযোগ্য চরিত্র-এ এক বিরল উপমাহীন দ্রষ্টা। তাই তাঁর প্রতি এতো আবেশ-মনোনিবেশ।’

উদ্যোক্তা পুলক কান্তি বড়–য়া অনুভতি প্রকাশ করে লিখলেন- ‘৭৫বছরের একটি মানব জীবন মহাবিশ্বের কাছে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? পৃথিবী নামক যে গ্রহে মানবটি ৭৫ বছর বেচেঁ রইলো সেই গ্রহের কাছেইবা একজন মানবের অস্তিত্বের বসবাস কোন প্রয়োজনকে ধারণ করে কি? ৭৫ বছর শেষে একজন বেচেঁ থাকা মানুষের বিকেলটি প্রায় ¤্রীয়মান হয়ে উঠেছে, বিকীর্ণ তাই সময়টিও। মানুষটি ৭৫ বছর ধরে মহাবিশ্বের সমস্ত আলো নিয়েছেন, উত্তাপ নিয়েছেন, পৃথিবী থেকে বাতাস নিয়েছেন, নেয়ার এই সমীক্ষা কোন মানব সহজে করতে বসেন না, পরিমাণও মাপতে চায় না। ৭৫ বছরের নেয়ার হিসেব কষতে বসেছেন আজ একজন মানুষ। তিনি পদার্থবিদ প্রফেসর ড.বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া।’

পাঁচ.
অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশ-বিদেশের প্রাজ্ঞবান ব্যক্তিদের বাণীগুলো প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র জীবনকে বর্ণিল ও অসিক পোষণ পুষ্টতায় মহিমান্বিত করে তুলেছে। উনার সচিত্র জীবন ও কর্মকীর্তি এ্যালবাম অংশটি সুন্দর হয়েছে। সাথে উনার লেখা গ্রন্থগুলোর প্রচ্ছদ ও প্রশংসা পত্রগুলো প্রকাশ করার কারনে পাঠক ও শুভাকাঙ্খিদের জন্য যেন অন্যরকম পাওনা হলো। সেখান থেকে বিজ্ঞ পাঠকরা উনার সম্পর্কে অনেক দৃশ্যমান তথ্য পাবেন।
একটু সমালোচনা- প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র নিজের লেখা- ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শণ ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন’, ‘পবিবেশ সংরক্ষণ : মানুষ বাঁচান’, ‘মাইন্ডফুল লিডারশীপ অব কম্পেসান’ শিরোনামে তিনটি লেখা স্থান পেয়েছে। যাকে নিয়ে এই গ্রন্থ সেখানে অন্য বিষয়ে নিজের লেখা কেন প্রকাশ করলেন গ্রন্থের সম্পাদকের কাছে তা জানতে আমার আগ্রহ রয়েছে। এখানে প্রফেসর ড. বড়–য়া স্যারের একটি অনুভূতি প্রবণ লেখা প্রকাশ হতে পারতো।
বইটি পাঠে বেশ কিছু বাক্য বিভ্রাট ও বানান ভুল চোখে পড়েছে। কোন কোন শব্দ বানান ভুলের কারনে অর্থও অন্যরকম হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আরো একটু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল।
গ্রন্থটি উৎসমূখ হতে টানা পড়তে গিয়ে ক্লান্তির উদ্রেক হতে পারে। গ্রন্থটিতে একই বিষয় বারে বারে এসেছে। প্রফেসর ড. বড়–য়ার পূরোধা জীবনকে নিয়ে লেখা গ্রন্থটিতে তাঁর জীবকে ঘিরে ত্রিমাত্রিক উপস্থাপনার প্রয়োজন ছিল।
লেখার বিষয় ও মান অনুযায়ী সাজানো হয়নি। হতে পারতো লেখকের আদ্যাক্ষর দিয়ে নতুবা বিষয় শিরোনাম দিয়ে সাজানো।
পরিশেষে- সকল লেখনিতে একটি বিষয় খুব দৃষ্টিগোছর হয়েছে, বর্তমান সমাজে অনেক জ্ঞানীগুণী মহাপুরুষ ছিলেন এবং আছেন, যাঁরা দেশের জন্য, সমাজের জন্য, জাতির জন্য এবং মানবকল্যাণে অশেষ অবদান রেখেছেন, তাঁদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। জীবদ্দশায় তাঁদের অনেকেরই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ গুণিজন সংবর্ধনা, পুরস্কার, সম্মাননা প্রদান করা হয় না।
পরে আমি জেনেছি যে, স্মারক গ্রন্থের সম্পাদক শিমুল বড়–য়া, প্রফেসর বিকিরণ বড়–য়া বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, পরিবেশ, মনোজগত নিয়ে কি ভাবেন তা জানতে চাইলে প্রফেসর বড়–য়া তাঁকে এই তিনটি লেখা দেন। সেগুলোই তনিি ছাপিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু মৃত্যুর পর শোকসভা, স্মৃতিচারণ সভা, স্মরণসভা, মরণোত্তর পুরস্কার, সম্মাননা প্রদান, শ্রদ্ধা নিবেদন, ব্যানারে-ব্যানারে, ফুলে-ফুলে ভরে যায়। জীবদ্দশায় না দিয়ে মৃত্যুর পর দিলে এর কতটুকুু সার্থকতা আছে।
মূল্যবান এ স্মারক গ্রন্থটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৫২৪। বোর্ড বাধাঁই করা ফোল্ডিং কভারে প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়া’র ছবি সম্বলিত মলাটে দাম রাখা হয়েছে ৫০০টাকা। নান্দনিক প্রচ্ছদ ও বইটির নামলিপি করেছেন রঞ্জন বড়–য়া।
মুদ্রিত হয়েছে পূর্বা, ৩৫ মোমিন রোড চট্টগ্রাম থেকে। প্রকাশের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ইংরেজী। শিমুল বড়–য়ার সম্পাদনায় এই স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশক হলেন হীরক জয়ন্তী উদযাপন ও আজীবন সম্মাননা পর্ষদ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
স্মারক গ্রন্থটি বিজ্ঞপাঠরা পড়বেন। সাহিত্য ও সামাজিক চেতনায় নিজের জ্ঞানকে আরো শাণিত করবেন সেটি প্রত্যাশা করি।

লেখক: কলামিষ্ট ও সম্পাদক- আলোকিত বোয়ালখালী।

For The Roots BY Dr. Ashish Kumar Chowdhury (MBBS, PhD)

মাওলানা আমিনুল হক হারবাংগিরী রচিত ‘ফকির উল্লাস ও ওফাতনামা’

আত্মশুদ্ধি ছাড়া সিদ্ধি লাভ অসম্ভব

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here