সৃষ্টির কল্যাণে গাউছুল আযম হযরত বাবাভাণ্ডারী (কঃ)

-আল্লামা গোলাম মোস্তফা মোহাম্মদ শায়েস্তা খান আল আযহারী মাইজভাণ্ডারী

(হে আল্লাহ,) আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন। তাদের পথে যাদের উপর আপনি বহু নেয়ামত দিয়েছেন।” (সূরা ফাতেহাঃ ৬)

উনারা কারা এমন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিবর্গ যাদের উপর আল্লাহতায়ালা অশেষ নেয়ামত দিয়েছেন? এ প্রসঙ্গে অপর এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, “আর যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালা ও রাসূল (দঃ) এর আনুগত্য করবে তারা সেসব ব্যক্তিদের সঙ্গী হবেন যাদের উপর আল্লাহতায়ালা বহু নেয়ামত দিয়েছেন। তারা হলেন নবীগণ, শহীদগণ, ছিদ্দিকগণ এবং সৎ কর্মপরায়ণ (আওলিয়ায়ে কেরাম) ব্যক্তিবর্গ আর সঙ্গী হিসেবে তারা কতই না উত্তম।” (সূরা নিসাঃ ৬৯)

আল্লাহতায়ালার মাহবুব বান্দাদের অন্যতম আওলিয়ায়ে কেরাম। নবীয়ে করিম (দঃ) এর পর্দার পর দ্বীন ধর্মের মহান দায়িত্ব ও মুসলিম উম্মাহর পরিচালনার ভার ন্যস্ত হয় আওলাদে রাসূল (দঃ) ও আওলিয়ায়ে কেরামের নিকট, তাঁরা কেয়ামত অবধি মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক, কোরআন, সুন্নাহ এবং ঈমান ও ইসলামের ধারক ও বাহক। নবুয়তের পরবর্তী যুগ থেকে যারা এ গুরু দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে আসছেন, আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির কল্যাণ সাধনে রত আছেন, তাদেরই অন্যতম- চেরাগে উম্মতানে আহমদী, ইমামুল আওলিয়া, ইমামুত তরিকত, গাউছুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এবং তাঁর বাগানের সর্ব শ্রেষ্ট ফুল শাহে দো আলম, হাজত রাওয়া, জামালে মোস্তফা, মাযহারে নূরে খোদা, হযরত গাউছুল আযম শাহসূফী সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভাণ্ডারী  (কঃ)। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অসহায় মানবতার কল্যাণ সাধনের মহান ব্রত নিয়ে প্রবর্তিত যে মাইজভাণ্ডারী তরিকা, তা আপন মহিমায় দেদীপ্যমান করে মানবতার মহাকাশে উৎক্ষেপণ করার সুকঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী  (কঃ)।

প্রকৃতির অদৃশ্য উপাদানসমূহের মতই তিনি তাঁর নিরব অথচ সক্রিয় সাধনার উপস্থিতির মাধ্যমে মানব সমাজের নিকট অনাবিল ভালোবাসা ও প্রেমময়তার স্নিগ্ধ সুবাতাস বিলিয়ে এক অপূর্ব ঐশী পরিবেশ উপহার দিয়েছেন।

মূলত আল্লাহাতায়ালার পক্ষ থেকে অলি আল্লাহগণ সৃষ্টি জগতের বিশেষ রহমত ও নেয়ামত স্বরূপ। আল্লাহতায়ালা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর রহমত মুহসীন বান্দাদের নিকটবর্তী।” (সূরা আ’রাফঃ ৫৬) অর্থাৎ, আল্লাহর রহমতের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা তাঁর আওলিয়ায়ে কেরামের আস্তানা। তাই সৃষ্টিজগতের মনোনিবেশ আল্লাহর প্রিয়ভাজন বান্দা আওলিয়ায়ে কেরামগণের প্রতি কারণ তারা কোন ভেদাভেদ ছাড়াই আপামর সৃষ্টিকে ভালোবাসেন, দয়া করেন। হাদীসে পাকের আলোকে তাঁরা সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গ- মানুষের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যিনি মানুষের বেশি উপকার করেন।

তাঁরা মানুষকে আল্লাহ ও রাসূল (দঃ) এর পথে টেনে আনেন, হেদায়াত করেন, আল্লাহ ও রাসূল (দঃ) এর প্রতি প্রেমের দীক্ষা দান করেন। যেকোন মানুষের জন্যই এটা সবচেয়ে বড় উপকার। অন্য দিকে মানুষ কোন বালা মুসিবতে পড়লে আওলিয়ায়ে কেরামের শরনাপন্ন হলে তাঁদের দোয়ায়, দয়ায় বালা মুসিবত থেকে মানুষ পরিত্রাণ পায়, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও মুক্তি নিশ্চিত হয়। তাঁদের উসিলায় দোয়া করলে আল্লাহপাকের রহমতের দরিয়া তরঙ্গায়িত হয়। তাঁদের উসিলা গ্রহণ করা কোরআনেরই হুকুম, “ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর দিকে উসিলা তালাশ কর।” (সূরা মায়েদাঃ ৩৫)

তাঁদের সান্নিধ্যে গিয়ে আত্মিক উন্নতি সাধন করে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা নিশ্চিত হয়েছে অনেকেরই। তাই আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের (আওলিয়ায়ে কেরামদের) সাথী হয়ে যাও।” (সূরা তওবাঃ ১১৯)

মওলানা রূমীর ভাষায়,  “খোদার সনে বসতে গেলে আওলিয়ার বৈঠকে যাও, রূমী গুণদারে বলে মসনবি খুলিয়া চাও।” অলি আল্লাহগণের সোহবত এখতিয়ারে, তাঁদের চেহারা মুবারক দর্শনে মানুষের পার্থিব জীবনের মোহমায়া ত্যাগ হয় যা সমস্ত অন্যায় অনাচারের মূল। মাইজভাণ্ডারী আশেকের ভাষায়, “ভবের বন্ধন হল ছেদন, যে দেখেছে তোমারে।” তাঁরা মানবগোষ্ঠীকে অনিবার্য ধ্বংস থেকে রক্ষা করার জন্য ছুটে গিয়েছেন দেশ থেকে দেশান্তরে, মানব সমাজকে পৌত্তলিকতা, ধর্মহীনতা, কপটতা থেকে মুক্ত করে তাদেরকে পান করিয়েছেন তৌহিদের সুধা, বপন করেছেন আল্লাহ ও রাসূল (দঃ) এর প্রেমের বীজ। তাঁরা অকাতরে খোদার সৃষ্টিকে ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছেন। তাই তাঁরা স্রষ্টার পক্ষ থেকে সৃষ্টির জন্য এক বিশেষ অনুগ্রহ। এই মহান সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, আওলিয়ায়ে কেরামগণের অন্যতম হলেন হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী (কঃ)।

আল্লাহ ও রাসূল (দঃ) এর মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালোবাসা, সৃষ্টির কল্যাণ সাধন করা আওলিয়ায়ে কেরামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। খলিফায়ে গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী (কঃ), গাউছে মোকাররম আল্লামা সৈয়দ আবদুস সালাম ইছাপুরী (রঃ) বাবা ভাণ্ডারী কেবলার (কঃ) জীবনী শরীফে লিখেন, “ হযরত বাবাজান কেবলার  কেরামত এত অধিক যে, সমুদয় লিপিবদ্ধ করিয়া প্রকাশ করা একরূপ অসম্ভব বলিয়া বোধ হয়। তাঁহার প্রত্যেক কথায়, প্রত্যেক কাজে, প্রত্যেক শোগলে, এমনকি প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গেই কারামত দৃষ্ট হইতো এবং তাঁহার তাছির জগতের কোন এক স্থানে পতিত হইয়া ক্রিয়া প্রকাশ করিত।” উল্লেখ্য, তাঁর কারামতমূহ তাঁর জীবদ্দশার সাথেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তাঁর বেছাল শরীফের পরও প্রতিনিয়ত তাঁর কারামত সংঘটিত হচ্ছে।

রাহমাতুল্লিল আলামীন এর যোগ্য উত্তরসূরী অলিকূল শিরোমণি গাউছুল আযম হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) পাহাড়-পর্বতে, বন-জঙ্গলে, জীব জন্তু, পশুপাখি ও সেখানকার অধিবাসী যারা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে দূরে ছিলেন তাঁদের তিনি দয়া করেছেন, আশীর্বাদ করেছেন, তাদের রোগ মুক্তি ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে তাদেরকে সৌভাগ্যবান করেছেন, তাদেরকে আল্লাহ প্রেমের দীক্ষা দিয়েছেন।

গাউছুল আযম হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) তাঁর ২৮ বৎসর থেকে ৪০ বৎসর বয়স পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ বৎসর পাহাড়-পর্বতে, বনে-অরণ্যে ছায়ের করেছেন, খোদার প্রেমে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন, আল্লাহর রহমতের দরিয়া থেকে সৃষ্টি জগতে রহমত বিলিয়েছেন।

আওলিয়ায়ে কেরামের দরবার হচ্ছে আল্লাহতায়ালার রহমতের ফোয়ারা, তাঁদের দরবার নবীজী (দঃ) এর নবুয়তের উপ কেন্দ্র যেখানে গেলে মানুষ আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্যের স্বাদ পায়। জাগতিক দুঃখঃ-শোক, বালা মুসিবত থেকে মুক্তি পায় এমন অসংখ্য দরবার আছে যা গাউছুল আযম হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) উজালা করে দিয়েছেন। হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে এই অঞ্চলে ঈমান ইসলামের অবস্থা খুব শোচনীয় ছিল, অনেক আওলিয়ায়ে কেরামের দরবার ঝিমিয়ে ছিল, তাঁরা যেন গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন, যেমন- হযরত শাহজাহান শাহ (রঃ), শাহ মনোহর (রঃ), সুলতানুল আরেফিন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ), কুতুবুল আকতাব শাহ আমানত (রঃ) ও ফতেহে চাটগাম শাহ বদর আওলিয়া (রঃ) সহ অনেক দরবারে গিয়ে হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) তাঁদের জাগ্রত করেছেন, মাজার শরীফগুলো উজালা করে দিয়েছেন, তাঁদের দরবারসমূহের রওনক বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।

হযরত বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) এর অজস্র কারামতের মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য তাঁর হস্তনিঃসৃত পানি বিষয়ক কারামত । জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রে তাঁর হস্তনিঃসৃত পানি মহৌষধ রূপে কাজ করত। আধ্যাত্মিক ফয়েজ দান থেকে শুরু করে মৃতকে জীবিত করার অনেক ঘটনার রহস্য এই নিহিত এই হস্তনিঃসৃত পানিতে।

হযরত বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) এর হাত মোবারকের পানির কারামত বর্ণনা করতে গিয়ে একবার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার মোহাদ্দেস আল্লামা কারী সৈয়দ আবু তালেব ছাহেব বর্ণনা করেন যে, তাঁর পিতা ৮ বৎসর বয়স পর্যন্ত অবশ ছিলেন। তখনকার সময়ে সব রোগের সর্বশেষ চিকিৎসা ছিল বাবা ভাণ্ডারী কেবলার পবিত্র হাত মোবারকের পানি। সে অনুযায়ী তার বাবাকেও বাবা ভাণ্ডারীর দরবারে হাজির করা হয় এবং তাকে বাবা ভাণ্ডারী কেবলার পবিত্র হাত মোবারকের পানি পান করানো হলে সাথে সাথেই তিনি সুস্থ হয়ে যান, পরবর্তীতে লেখাপড়া, সরকারি চাকরি, সংসার জীবন, সব অতি সফলতার সাথে সুসম্পন্ন করেন।

হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) তাঁর তিন নাতিকে মৃত্যু থেকে পুনঃজীবন দান করেছেন। শুধু তাই নয়, হায়াতে আবদী তথা অনন্ত জীবন দান করেছেন, মহান বেলায়তের উচ্চ মর্যাদায় আসীন করে অলীয়ে কামেল মোকাম্মেল বানিয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন বাবা ভাণ্ডারী  কেবলা্র (কঃ) বড় শাহজাদী সৈয়দা মায়মুনা খাতুন (রঃ) এর বড় শাহজাদা হযরত শাহসূফী সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম গায়েবী ধন (রঃ), বাবা ভাণ্ডারী কেবলার (কঃ) বড় শাহজাদা হযরত শাহসূফী সৈয়দ খাইরুল বশর মাইজভাণ্ডারী (রঃ) এর বড় শাহজাদা সুলতানুল আরেফীন হযরত শাহসুফী সৈয়দ শামশুল হুদা মাইজভাণ্ডারী (রঃ) ও বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) এর দ্বিতীয় শাহজাদী সৈয়দা সাজেদা খাতুন (রঃ) এর বড় শাহজাদা শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (রঃ)। তাঁরা সবাই বাবা ভাণ্ডারী কেবলার পরশে জগত বিখ্যাত অলি আল্লাহ, তাঁদের মাধ্যমে অসংখ্য আল্লাহর বান্দা আল্লাহ পথের পথিক হয়েছেন, তাদের ইহকাল ও পরকালীন কল্যাণ সাধিত হয়েছে।

এছাড়াও তিনি অসংখ্য মানব সন্তানকে বেলায়তের উচ্চ আসনে আসীন করেছেন। তাঁদের মধ্যে হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) এর আওলাদে পাক ও খলিফাগণ উল্লেখযোগ্য।। তাঁদের তালিকা জীবনী শরীফে উল্লেখ আছে। তবে বাবা ভাণ্ডারী কেবলার ফয়েজ প্রাপ্তগণ এই তালিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন। তালিকার বাইরেও হাজার হাজার অসংখ্য অলীয়ে কামেল দেশে বিদেশে বিভিন্ন এলাকায় খোদায়ী নূরের জ্যোতি ছড়াচ্ছেন।

বাবাজান কেবলার খলিফাদের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্বরূপ একজনের কথা আলোচনা করছি যিনি হচ্ছেন যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম, হক্কানী রব্বানী, জগত বিখ্যাত মুসলিম মনীষী, গাউছে মোকাররম, কুতুবে আযম, আল্লামা আবদুস সালাম ইছাপূরী (রঃ), যিনি তাঁর ১০৪ বছরের হা্যাতে জিন্দেগীতে হযরত গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী হযরত ছাহেব কেবলা এবং গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী কেবলার জীবনী শরীফ থেকে শুরু করে শরীয়ত ও ত্বরিকতের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ১০৪টি কিতাব রচনা করেছেন, নবী অলিদের দুশমন তথা মাইজভাণ্ডারী তরীকার বিরুধীদের সাথে বিভিন্ন অঞ্চলে ১০৪টি বাহাস মোনাজেরা করেছেন। তিনি বৃটিশ সরকারে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন, কলিকাতা সরকারী হুগলী কলেজের অধ্যাপক পদে আসীন ছিলেন, বাবা ভাণ্ডারী কেবলার রুহানী নির্দেশে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ ত্যাগ করে বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) এর পাক কদমে মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকার খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করেন, যেভাবে আশেকে ইলাহী হযরত শামস তাবরিজ (রঃ) এর কদমে মওলানা রুমি (রঃ) নিজেকে ন্যস্ত করেন।

আল্লামা ইছাপূরীকে (রঃ) একদিন বাবা ভাণ্ডারী কেবলা বেশারত দিলেন – “আপনার নিকট এমন এক ব্যক্তি আসবেন যার থেকে আল্লাহ তায়ালা দ্বীন র্ধমের অনেক খেদমত নিবেন।” সে ব্যক্তি হলেন পি এইচ পি ফ্যামিলির সম্মানিত চেয়ারম্যান সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ছাহেব। সূফী ছাহেব আল্লামা ইছাপুরী কেবলার খেদমতে উপস্থিত হলে আল্লামা ইছাপুরী (রঃ) তাকে তিনি যে খেদমতে আসবেন, সে ব্যাপারে হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী কেবলার সুসংবাদ জানালে অলি আল্লাহর জবান নিঃসৃত কালাম বলে তিনি তা বিশ্বাস করলেন বটে কিন্তু তার তখনকার অবস্থার সাথে তার যেন কোন মিল ছিল না। তখন তিনি অতি সাধারণ ব্যাংক কর্মচারী, বেতন মাত্র ১০০ টাকা। বর্তমানে তিনি বিখ্যাত শিল্পপতি, আন্তর্জাতিক  পর্যায়ে যার সুনাম  খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দ্বীন র্ধমের এবং মানব কল্যাণের এমন কোন খাত নেই যেখানে তাঁর খেদমতের ছোঁয়া লাগেনি।

এভাবে বর্তমান সময়েও অনেক আশেক ভক্ত বাবা ভাণ্ডারীর আওলাদে পাক ও  খোলাফায়ে কেরামগণের মাধ্যমে বাবা ভাণ্ডারী কেবলার ফয়েজধন্য হয়ে তাঁর আর্দশে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবতার কল্যাণ করে যাচ্ছেন, দ্বীন র্ধমের খেদমত করে যাচ্ছেন।

হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) এর নূরানী চেহারার মধ্যে ছিল খোদায়ী নূর এবং দেহ মোবারক ছিল ঐশী জোতিতে জোর্তিময়। তাঁর জন্মের পর তাঁর নূরানী চেহারা মোবারক দেখে তাঁর পিতৃব্য হযরত গাউছুল আযম মওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী হযরত সাহেব কেবলা কোলে নিয়ে বললেন,

“এই শিশু আমার বাগানের শ্রেষ্ঠ গোলাপ, হযরত ইউসূফ (আঃ) এর সৌন্দর্য্য এর চেহারায় এসেছে।”

ইমাম শেরে বাংলা (রঃ) এর ভাষায়, “সৌন্দর্য্যে তিনি যুগের দ্বিতীয় ইউসুফ (আঃ), বাস্তবিকই তাঁকে আল্লাহর নূরের বিকাশস্থল হিসেবে বিশ্বাস কর।”

শাহজাদায়ে গাউছুল আযম, গাউছে জমান হযরত শাহসূফী সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভাণ্ডারী (রঃ) এর ভাষায়,

“সুন্দর মুরতি তুমি, মাইজভাণ্ডারী পূর্ণ শশী।

এতই সুন্দর বলে তোমায় এত ভালোবাসি।”

কবিয়াল রমেশ ফকিরের  ভাষায়,

“দেখলে ছবি পাগল হবি ঘরে রইতে পারবিনা

আঠারো হাজার আলমে

আমার বাবা মওলানা।”

হযরত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) এর জন্মের পূর্বেই তাঁর মাতা ছাহেবানীকে গাউছুল আযম হযরত কেবলা (কঃ) ‘পীরানে পীর সাহেবের মা’ বলে সম্বোধন করে বাবা ভাণ্ডারী যে অলিকূল সম্রাট হবেন, তাঁর পূর্বাভাস দিয়েছেন।

প্রতিদিন মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে অসংখ্য মানুষ হযরত বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) এর কদমে ভিড় জমাতো বিভিন্ন ধরনের মুশকিল থেকে আছানির জন্য। তাঁর দরবার থেকে কেউ নিরাশ হয়ে ফিরে যায় নি। তিনি হাজত রওয়া, মুশকিল  কোশা। তাঁর কাছে গিয়ে মানুষের জাগতিক সমস্যার সমাধানের সাথে সাথে রুহানিয়তের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। অলি আল্লাহর মর্যাদায় উন্নীত হয়েছেন অনেকেই, “এক নজরে হেরে যারে, দিলের পর্দা যায় তাঁর ছিঁড়ে। ইলমে লদুন জারি করে নয়ন ইশারায়।”

তাঁর অসংখ্য কারামতের মধ্যে প্রকৃতির উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- কোন মাধ্যম ছাড়াই অল্প সময়ে হালদা নদী অতিক্রম, মানুষের মধ্যে থেকেও হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, রাতের অন্ধকারে দুর্গম স্থানে হাঁটার সময়ে আশ্চর্যভাবে পথ তৈরি হয়ে যাওয়া, একই সময়ে একাধিক স্থানে অবস্থান ও দর্শন দান, পর্দা করার পরেও আজমীর শরীফে দর্শন দান, তাঁর স্মরণে অলৌকিকভাবে আগুনের লেলিহান শিখা রোধ ইত্যাদি।

বন্য প্রাণীদের উপরও তাঁর ছিল উল্লেখযোগ্য প্রভাব। তাঁর উছিলায় নেকড়ের শিকারে পরিণত হয়েও নিরাপদে অবস্থান, তাঁর নির্দেশে ছোবল মারতে উদ্দত কাল নাগিনীর মাথা অবনতপূর্বক পলায়ন, তাঁর ইশারায় অন্যের ক্ষেত নষ্ট করা থেকে গরুর বিরত থাকা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি তাঁর গায়েবী নির্দেশ পেয়ে বিভিন্ন প্রকার প্রাণনাশী বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘটনাও প্রচুর। তাঁর বেলায়তি ক্ষমতায় সমুদ্রে ডুবন্ত ভক্তকে তিনি নিজ হাতে উদ্ধার করেছেন, জার্মান বাহিনীর বোমা বর্ষণ থেকেও তিনি ভক্তকে অদৃশ্যভাবে নিজ হাতে টেনে উদ্ধার করেছেন।

বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) খাদ্যের মাধ্যমেও আধ্যাত্মিক ফয়েজ প্রদান করেছেন। যেমন, কৃষক শুককুর আলীকে তবারুক খাইয়ে তিনি ফয়েজ রহমত প্রদান করে বেলায়তের উচ্চাসনে আসীন করেন।

অদৃশ্য জগতের অলি আল্লাহদের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল। গভীর রাতে মসজিদে সূফি দরবেশদের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হত, তাঁরা তাকে আন্তরিক অভিবাদন জ্ঞাপন করতেন, বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) তাঁদের নামাযের ইমামতি করতেন।

অর্গলমুক্ত প্রেমবাদ একটি  বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, বাধাহীন ও সর্ববেষ্টনকারী বেলায়তী শক্তি আর মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকা হচ্ছে এই অর্গলমুক্ত প্রেমবাদের ফলশ্রুতি এবং সুফিবাদের চরম বিকশিত রুপ, মানবতাকামী অসাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মাইজভাণ্ডারী দর্শন হচ্ছে তাসাউফের পূর্ণাঙ্গ রূপ । একজন মানুষের দেহ, মন চিন্তাধার্‌ আত্মা তথা প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সর্ববিধ শুদ্ধতার অনুশীলনই হচ্ছে মাইজভাণ্ডারী দর্শনের মূল কথা।

হযরত গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারী হযরত সাহেব কেবলা কর্তৃক প্রবর্তিত মাইজভাণ্ডারী দর্শনের প্রবল গতিতে বিকাশ হয়েছে হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী(কঃ) এর মোবারক হাতে। হযরত গাউছুল আযম  মাইজভাণ্ডারী (কঃ) এর পর বাবা ভাণ্ডারী কেবলা (কঃ) হলেন মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকার দ্বিতীয় মহান অলি আল্লাহ। হযরত আকদস তাঁর সর্ম্পকে বলেন, “মিঞা উয়হ শাহে জালাল হ্যায় , মুলকে ইয়েমেন কা রাহনে ওয়ালা হ্যায়, আলমে আরওয়াহ মে ছায়ের করতা হ্যায়। উছকো আদব কর।”

হযরত আকদসের বাণীসমূহ থেকে  সুস্পষ্ট  প্রতীয়মান হয় যে হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) একজন মহান কর্তৃত্ব সম্পন্ন অলি আল্লাহ ছিলেন। তিনি স্রষ্টার গুণে গুণান্বিত, জাতি, র্ধম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে তিনি সকলের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেছেন। সৃষ্টির প্রতি তাঁর করুণাদৃষ্টি অবিরত। কালক্রমে পর্দার আড়াল থেকে তিনি অদৃশ্যের সুলতান সেজে স্বীয় ইশকে ইলাহির প্রভাবে মানব সমাজকে আকর্ষণ করেন।

মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে তিনি ঐশী প্রেমাসর জমজমাট করে তুলেন, তাঁর দরবারে প্রতিনিয়ত অজস্র লোকের সমাগম ঘটতে থাকে, এসকল ব্যক্তির মধ্যে আশেক-ভক্ত-ফরিয়াদির পাশাপাশি অসংখ্য দর্শনার্থী কৃপা লাভের আশায় নিয়মিত গমনাগমন করতে থাকেন। কিন্ত বাবা ভাণ্ডারী (কঃ) নির্বাক নিঃশব্দে চাদরাবৃত হয়ে থাকেন। গোশানশীন হওয়ার ২ বৎসর পর থেকে তিনি এই অবস্থা অবলম্বন করেন। এ ধরনের  অবস্থা সর্ম্পকে মওলানা রুমী (রঃ) বলেন, “আমি যদি গোপন রহস্য প্রকাশ করি তবে জগত ওলট পালট হয়ে যাবে।”

ইমাম শেরে বাংলা (রহঃ) এর ভাষায় তিনি ফানাফিল্লাহ, বাকাবিল্লাহ এর স্তর অতিক্রম করে নিজ জবানে নিরবতার মোহর অলংকৃত করেছেন।

রমেশ ফকিরের ভাষায়,

“বাবা মুখে নাহি কথা বলে, টেলি চালায় দিলে দিলে।

অন্তরে মিশিয়া খেলে মওলানা।”

মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে নিরব নির্বাক থেকে তিনি শাশ্বত মর্যাদা অর্জন করেছেন, সৃষ্টির মাঝে তৌহিদী সূর্যের আলো বিকিরণ করেছেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার রহমানী গুণ বিশিষ্ট বেলায়তের অধিকারী, আল্লাহ তায়ালার রহমতের এক অপূর্ব নির্দশন । জাতি, র্ধম, বর্ণ নির্বিশেষে তিনি সকল অসহায়দের সহায়, সকলের মঙ্গল সাধনকারী ও হিতাকাঙ্ক্ষী। তিনি ছিলেন খোদায়ী রহস্যের অধরা খনি, এশকে এলাহি ও খোদা প্রেমের উজ্জল প্রতীক।

মাইজভাণ্ডারী দর্শনের মুল লক্ষ্য হলো মানুষের ভিতরে সুপ্ত আত্ম চেতনাবোধকে জাগ্রত করা। এর জন্য প্রয়োজন ইশক বা প্রেম। প্রকৃত প্রেমিক যারা, তারা প্রেমাস্পদের সন্ধানে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। প্রেমের মাধ্যমে ভক্তি ও একাগ্রতা বৃদ্ধি প্রায় এবং প্রেমিক মারেফত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করে, অন্তহীন ঐশী আলোয় প্রেমিকের হৃদয় উদ্ভাসিত হয়। ফলে মানবাত্মা পরমাত্মার সন্ধান লাভ করে। মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকায় খোদা প্রেমের আধিক্যের কারণে এ ত্বরিকার অনুসারীরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ভালোবাসতে ও অসম্প্রদায়িক হতে শেখায়। বর্তমান হানাহানি, সংঘাত ও বিদ্বেষপূর্ণ বিশ্বে মাইজভাণ্ডারী দর্শনই  প্রতিষ্ঠা করতে পারে স্থায়ী শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, ভ্রাতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ, ঐক্য, সাম্য ও সমৃদ্ধি। হযরত গাউছুল আযম বাবাভাণ্ডারী (কঃ) এর জীবানার্দশ আমাদেরকে এ মহান লক্ষ্যে ব্রতী হবার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাক, হযরত গাউছুল আযম বাবা ভাণ্ডারী কেবলা কাবার রূহানী ফয়েজ, বরকত আমাদের সবার উপর বর্ষিত হোক। আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here