কাজী আয়েশা ফারজানা

কবিগানের নতুন যুগের সূচনাকারী অবিভক্ত বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিয়াল রমেশ শীল ও তাঁর সৃষ্টি কাণ্ডকে আগামী প্রজম্মের অন্তরে লালন করতে বাংলাদেশ সরকার এবার তাঁকে পাঠ্যবইয়ে স্থান দিয়েছে। ২০২৩ সালের সরকার অনুমোদিত ৭ম শ্রেণির নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বইয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে একুশে পদকপ্রাপ্ত বোয়ালখালীর কৃতীপুরুষ কবিয়াল রমেশ শীলকে। শিক্ষাক্রমের শিল্প ও সংস্কৃতির পাঠ্যবইয়ে ২২ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায়ে তাঁর জীবন ও কর্মচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ উদ্যোগে সরকার এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বোয়ালখালীর সর্বস্তরের মানুষ।

রমেশ শীল ছিলেন লোককবি। তাঁর সৃজনশীলতা জোয়ার সৃষ্টি করে সাধন সঙ্গীতকে নিয়ে আসে লোকসঙ্গীতের কাতারে। ২০০২ সালে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয় তাঁকে। তাঁর ১৮টি পাণ্ডুলিপির ১৭টি পুড়ে গেছে। রক্ষা পাওয়া একটি পাণ্ডুলিপিই উপমহাদেশে জ্যোতির্ময় হয়ে উঠেছে।

কবিয়াল সম্রাট রমেশ শীল ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদণ্ডীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের ৬ এপ্রিল তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর পিতা চণ্ডীচরণ শীল ও মাতা রাজকুমারী শীল। ১৮৮৮ সালে পিতার মৃত্যুর কারণে ৪র্থ শ্রেণিতেই পাঠ চুকাতে হয় তাঁকে। ১৮৯৮ সালে কবিগানের আসরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কবিয়াল হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তিনি ১৯০৮ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসির খবর নিয়ে, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯১৯-২০ সালে খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে অসংখ্য গান, কবিতা রচনা করেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার শ্রদ্ধানন্দ পার্কে কবিগানের পর তাঁকে বঙ্গের শ্রেষ্ঠ কবিয়ালের উপাধি দেওয়া হয়।

রমেশ শীলের নাতি প্রিয় রনজন শীল জানান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৫ ডিসেম্বরের দিকে সকালে পাকহানাদার বাহিনী রমেশ শীলের বাড়িটি গানপাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে রমেশ শীলের ছনের ছাউনিযুক্ত সমাধিও পুড়িয়ে দেয় হানাদার বাহিনী। সেদিন পাকসেনাদের দেওয়া আগুনে রমেশ শীলের লেখা কবিতা ও গানের ১৮টি পাণ্ডুলিপির মধ্যে ১৭টি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কোনো রকমে একটি পাণ্ডুলিপি মাটির নিচে পুঁতে রেখে রক্ষা করা হয়। বর্তমানে সেই পাণ্ডুলিপিই অসংখ্য গান, কবিতার ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে।

তাঁর মেয়ের ঘরের নাতি শিক্ষক প্রলয় চৌধুরী মুক্তি বলেন, ‘রমেশ শীলের গান, কবিতার ভাণ্ডারের সংরক্ষণের কেউ গরজ মনে করছে না। বিভিন্ন শিল্পী তাঁর লেখা গানকে নকল করছে, আবার অনেকে বিকৃতও করছে। যদি তাঁর লেখাগুলো সংরক্ষণ করা হত তাহলে এ সব হত না। ’

রমেশ শীলকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করায় চট্টগ্রাম ও বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে সরকার ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here