কর্ণফুলী নদীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে শ্বাসরোধ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম।

বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, কর্ণফুলীর তলদেশে গ্র্যাব ড্রেজার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ক্যাপিটাল ড্রেজিং হবে। সব খালের মুখে স্টিলের নেট দিতে হবে। পোর্টের লাইফলাইন নদী। নদী না থাকলে পোর্ট থাকবে না। শিপিং ও অর্থমন্ত্রী যৌথভাবে কাজ করলে বন্দর কাস্টম কেন্দ্রিক সমস্যা থাকবে না। এখন বিচ্ছিন্নভাবে কাজ হচ্ছে বন্দর ও কাস্টমসে। কাস্টমস বিশ্বের উন্নত বন্দরগুলো ভিজিট করতে হবে। বন্দরের ইমেজ নষ্ট করছে অকশন গোলা।

মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামকে নিয়ে আমার স্বপ্ন আছে। বে টার্মিনালের পরিকল্পনা কুমিরা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। এ এলাকায় যাতে কেউ স্থাপনা গড়তে না পারে। বন্দরের কার্গোর জন্য ডেলিগেটেড সড়ক ও রেলপথ থাকতে হবে। এটি সবচেয়ে জরুরি। হামবুর্গ পোর্টে দেখেছি ১৪টি দেশের জন্য ডেলিগেটেড রেললাইন। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে জিডিপিতে দেড় শতাংশ গ্রোথ বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের ১৫০ বিলিয়নের পরিকল্পনা রয়েছে ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের জন্য।

এ সময় কমিটির সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, এসএম শাহজাদা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুছ ছাত্তার, উপ সচিব বেগম মালেকা পারভীন, ড. দয়াল চাঁদ মণ্ডল, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপ পরিচালক আবদুল জব্বার, সিনিয়র সহকারী সচিব এসএম আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ, সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মহিদুল হাসান চৌধুরী, হারবার মেরিন কমডোর শফিউল বারী, চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান, সচিব মো. ওমর ফারুক, ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান, উপ সচিব আজিজুল মওলা প্রমুখ।

মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বলেন, পোর্ট চার্জ বাড়িয়েছিলো এক-এগারোর সময়। হাইয়েস্ট কস্ট এখনো দিচ্ছি। ৭ দিনে চীন থেকে ভিয়েতনামের কারখানায় কাঁচামাল চলে যায়। আমাদের লিড টাইম অনেক বেশি। ২১ শতাংশ রপ্তানি কমে গেছে আমাদের। বায়ার কমছে আমাদের। বার্থ অপারেটর বাড়াতে হবে। শেডে গিয়ে দেখুন এলসিএল পণ্যের কী অবস্থা। সবকিছু সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে। বিজিএমইএ’র কার্গোবাহী জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে ওয়েটিংয়ে রাখা যাবে না। সারা দুনিয়া অনলাইনে চলে গেছে। অনলাইনে কনটেইনার ইন্ডেন্ড নিতে হবে। অফডকে ল্যান্ডিং চার্জ নিচ্ছে আমদানিকারকের কাছ থেকে।

তিনি বলেন, আইসিডি নীতিমালা কেউ মানছে না। বার্থ অপারেটর ও শেড অপারেটের পৃথক করতে হবে। অপশন নেই আমদানিকারকের হাতে। এখন লেবারের জন্য চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি এমএ সালাম বলেন, আরএমজিতে নেগেটিভ গ্রোথে আছি। বন্দরের লিড টাইম, ব্যবসার কস্ট কমাতে হবে। প্রতিযোগী দেশের মতো করতে হবে। খালি কনটেইনার পড়ে আছে। আমরা সহযোগিতা চাই ডেলিভারিতে। ৯৪ শতাংশ কনটেইনার যায় সড়ক পথে। রেলে কনটেইনারের সিরিয়াল পেতে ১৫ দিন লাগে। প্রয়োজনে কনটেইনার পরিবহন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যায়। কাস্টমসের দক্ষতা বাড়াতে হবে। সহকারী কমিশনার এসেছেন। উচ্চপদের কেউ আসতে পারতেন।

আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেন, বন্দরের লোকের চেয়ে অতিথি বেশি। আনসার বেশি। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য টেন্ডার করে। আমরা মনে করি লেবার হ্যান্ডলিংয়েরও টেন্ডার করা উচিত।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী, কনটেইনার দ্রুত সরবরাহ নেওয়ার জন্য আমদানিকারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।

পরিচালক শাহেদ সরওয়ার বলেন, নিলাম প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে অ্যাকশন চাই। রেফার কনটেইনারে বছরের পর বছর ইলেকট্রিক বিল দিতে হচ্ছে। এতে বন্দর সম্পর্কে নেতিবাচক ম্যাসেজ যাচ্ছে। স্পেশাল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট চাই বন্দর এলাকায়। শ্রমিকদের ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, বন্দরের সাফল্যে বার্থ অপারেটরের ভূমিকা অপরিসীম। পিসিটিতে দেশি অপারেটরদের সুযোগ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পদ্মা সেতু হলে পিসিটিও দেশি অপারেটররা পরিচালনা করতে পারবেন। বার্থ অপারেটরদের আরও হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট দিলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে।

বাফার পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, স্ক্যানিং সঠিকভাবে হচ্ছে না। স্ক্যানিং না হলে রপ্তানি কার্গো যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টে জটিলতা তৈরি করবে। খুবই জরুরিভিত্তিতে স্ক্যানিং মেশিন দিতে হবে। এলসিএল পণ্যের জন্য বন্দরের বাইরে শেডে আনার সুযোগ দিতে হবে। হেজার্ড কার্গোর কনটেইনার রাখার জন্য ডাম্পিং শেড দেওয়া যেতে পারে।

কাস্টমসের সহকারী কমিশনার বলেন, ৯৮ শতাংশ পণ্য পরীক্ষা ছাড়াই যাচ্ছে। গোপন সংবাদ থাকলে কনটেইনার লক করা হয়। দিনে এ ধরনের ৪-৫টি কনটেইনারের বেশি নয়। শুল্কায়ন ২৪ ঘণ্টা চললেও জেটিতে হচ্ছে না।

বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, দুই ঈদে ১৮ দিন খোলা রাখি, বন্দর পাহারা দিই। বন্দরকে প্লেনের মতো চিন্তা করতে হবে। তাই একদিন আগে কনটেইনারের অ্যাসাইনমেন্ট নিতে হবে। আমরা অনলাইনে এটি নেবো। রেফার কনটেইনারের বিদ্যুৎ চার্জ অযৌক্তিক, কিন্তু অডিট আপত্তি দেবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরে এখন কনটেইনার আছে ৩২ হাজার টিইইউস। এর মধ্যে ১ হাজার দিন বয়সীও আছে। দ্রুত কনটেইনার না নিলে আইনের আশ্রয় নেবো আমরা। ১৭টি জেটি আছে, ৬টি নির্মাণাধীন আছে। জেটি তৈরি হবে চাহিদার ওপর। ট্রান্সশিপমেন্ট বিষয়ে কলকাতার সঙ্গে দুটি ট্রায়াল রান হবে। জানুয়ারিতে হওয়ার কথা।

মেজর (অব.) রফিকুল আলম বলেন, পলিসি লেবেলের কর্মকর্তাদের নিয়ে দিনব্যাপী সভা করবো। স্টেক হোল্ডাররা লিখিত প্রস্তাব দিতে পারবেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here