কাজী এম এস এমরান কাদেরী.

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর, অসংখ্য দরুদ-সালাম হাবীবে খোদা নবী মুহাম্মদুর রাসুল (স.) এর জন্য।
আল্লাহ তাঁর ইবাদতের জন্যই জ্বীন ও মানব জাতিকে সৃষ্ঠি করে যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসুল (আলাইহিমুচ্ছালাম) দের প্রেরণ করেছেন জাতির পথ নির্দেশক হিসেবে। কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী সাইয়্যেদুল মুরছালিনকে (স.) প্রেরণের মধ্য দিয়ে নবুয়্যতের ইতি ঘটান। এরপর রাসূলে আকরাম’র (সা.) উত্তরসূরী হিসেবে মানব জাতিকে তাঁরই দর্শণ, পথ, মত ও নির্দেশনা পৃথিবীতে জারি রাখার প্রত্যয়ে একেক যুগে, একেক সময়ে কিছু সংখ্যক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটানো হয়। যাঁর দর্শণের ছোঁয়ায় দিকহারা জাতি পায় নতুন জীবন। ত্বরান্বিত হয় অগ্রগতি। আর তাঁরাই হচ্ছে এ সময়ের আওলিয়ায়ে কেরাম। যারা যুগে যুগে মহান দ্বীনের মিশনারীর দায়িত্ব ও আন্জামকে জিবনে এক মহান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এমনই এক মহন মুনিবের মধ্যে একজন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী খিতাপচর গ্রামের আর্বিভুত পীরে ত্বরিকত আল্লামা শাহ্সূফি মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ আলকাদেরী (র.)। তিনি এমনই এক ব্যক্তিত্ব যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সা.) দেয়া দর্শন ও আদর্শের অন্যতম পথিকৃত। এছাড়াও যিনি গাজ্জালিয়ে জামান, মোজাদ্দেদে মিল্লাত, আশেকে রাসুল (সা.) শাহ ছৈয়্যদ আল্লামা গাজী ইমাম শেরে বাংলা আজিজুল হক আলকাদেরী (র.) এর যুগ্য উত্তরসূরী ও প্রধান খলিফা। তাঁরই দেয়া আধ্যাতিœক দর্শনকে ব্রত করে নিয়ে দেশের অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও গোমরাহীতে নিমজ্বিত জনমানুষের এক বিশাল অংশকে অন্ধকারের অতল গহব্বর থেকে উত্তরণের মাধ্যমে আলোর সন্ধান দিয়ে ছিলেন। তাঁর পুরো জীবন ছিল আধ্যাত্মিক দর্শণে ভরপুর। মানবতার কল্যাণে তাঁর জীবনের সবটুকু অংশই উৎসর্গ করেছিলেন। মরনোত্তর তিনি তাঁর আওলাদ ও মুরীদানদের উদ্দেশ্যে বলে ছিলেন, তোমাদের জন্য সম্পদ হিসেবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালবাসাই রেখে গেলাম। তা ধারণ করলে কেউই পথভ্রষ্ট হবেনা।
May be an image of outdoorsবার আউলিয়ার স্মৃতি বিজরিত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার অন্তর্গত খিতাপচর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ্আলেম পরিবারে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ পিতা মাওলানা মুহাম্মদ মিন্মাত আলী (র.) এবং সম্মানিত মহীয়সি জননী মরহুমা আলেকজান বিবি। স্থানীয় একটি এবতাদায়ী মাদ্রাসায় শুরু করেন প্রাথমিক শিক্ষা। পরর্বতীতে চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রসিদ্ধ দারুল উলুম মাদ্রাসা হতে ‘উলা’ পাশ করে কৃতিত্ব লাভ করেন। এর কিছু দিনের মধ্যেই ঐশি নির্দেশে আশেকে রাসুল (স.), মোজাদ্দেদে মিল্লাত, আল্লামা গাজী শাহ ছৈয়্যদ আজিজুল হক আলকাদেরী ইমামে শেরে বাংলা (র.) হাতে বায়েত গ্রহণ করেন।

পরবর্তিতে নিজ মুর্শিদের নির্দেশে উচ্চ শিক্ষা নিতে ভারতের ঐতিহাসিক দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলা হযরত ইমাম আহমেদ রেজা ফাজেলে ভ্রেলভী’র (র.) প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা থেকে “ছিহাছিত্তার হাদিস শরীফে”র শিক্ষা সমাপ্তি করেন। এসময় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ন হওয়ায় তথায় দিল্লীর জামে মসজিদে দরসের সমাপনি অনুষ্ঠানে তৎকালীন অনেক বুজর্গানে দ্বীন ও মোহাদ্দেসিনদের উপস্থিতিতে সু-প্রসিদ্ব “বাহারে শরীয়ত” কিতাবের মুসান্নিফ শাহ সূফি আল্লামা আমজাদ আলী শাহ (র.) এর হাত থেকে হুজুর কেবলা শাহ্সূফি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল মাবুদ আলকাদেরী (র.) দস্তারে ফজিলত ও কৃতিত্বের সনদ গ্রহণ করেন।

ভারতে অবস্থান কালীন সময়ে সেখানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান সহ অসংখ্য আধ্যাত্মিক ব্যক্তির সাহচার্য লাভ করেন। এরপর তাঁরই মুর্শিদ ইমাম শেরে বাংলা’র (র.) ঐশী নির্দেশ পেয়ে দেশে ফিরে এসে সাহচার্য গ্রহন করেন। শিষ্য শাহ্সূফি আল্লামা আবদুল মাবুদ আলকাদেরী (র.) এর দ্বীন ও তরিক্বত চর্চা, কর্ম চাঞ্চল্য, তাকওয়া, রাসুলের (সা.) মহব্বত, সততা এবং আধ্যাত্মিকতায় মুগ্ধ হন মুজাদ্দেদে মিল্লাত আল্লামা গাজী শাহ ছৈয়্যদ ইমাম শেরে বাংলা আলকাদেরী (র.)।

একপর্যায়ে ইমাম শেরে বাংলা (র.) গাউছে সামাদানী, পীরে লা’ছানী, মীর আব্দুল কাদের জিলানী আল-হাসানী ওয়াল-হুসাইনী (র.) এর নির্দেশে ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ির খান্কা শরীফে অসংখ্য আলেম-ওলামার উপস্থিতিতে ‘প্রধান খলিফা’ হিসেবে ঘোষনা দেন। তখন থেকে শাহ্সূফি আল্লামা আবদুল মাবুদ আলকাদেরী (র.) জীবনের পুরো অংশই বাতিলপন্থিদের রাহু গ্রাসে দংশিত মানব জাতিকে উদ্ধার, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সা.) তথা আউলিয়া কেরামের পথ মত অনুস্বরণের মাধ্যমে খোদার সন্তুষ্টি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি পথভ্রষ্টদের চক্রান্ত থেকে মানব জাতীকে ঈমানী চেতনায় উজ্জিবিত রাখতে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন।

যিনি জবিদ্দশায় পৃথিবীর মোহে নষ্ট করেননি জীবনের সামান্যতম অংশও। তাঁর এ আধ্যাত্মিক জীবনের সবটুকু সময় কেটেছে সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর প্রিয় হাবীব রাসূল(সা.) এর প্রেমে। হযরত শাহ্সূফি আল্লামা আবদুল মাবুদ আলকাদেরী (র.) দ্বীন, ইসলাম ও মানবতার কল্যাণে কাজ করেছেন অবিরত। রাসূল’র (সা.) আদর্শে উজ্জীবিত সৈনিক এবং সুন্নীয়ত ভিত্তিক সুশীল সমাজ গঠনের কাজকে নিজের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। সেই সাথে তাঁর অলৌকিক দর্শন দিয়ে আলোকিত করেছেন অজস্র পথভ্রষ্ট মানব জাতিকে। ইমাম শেরে বাংলার মতাদর্শে সুন্নীয়ত ভিত্তিক সমাজ বিনির্মানের মহান লক্ষ্য নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তৎমধ্যে উল্লেখযোগ্য বোয়ালখালীতে খিতাপচর আজিজিয়া মাবুদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, গাউছিয়া আজিজিয়া হেফজখানা, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদে গাউছিয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও চট্টগ্রামের আনোয়ারা, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, দোহাজারীসহ বিভিন্ন এলাকায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন।

হুজুর কেবলা হায্ত রাওয়া, মুশকিল কোশা পীরে ত্বরিকত আল্লামা শাহ্সূফি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল মাবুদ আলকাদেরী(র.) হাজার হাজার মুরিদ, ভক্ত ও আশেকীনদের শোক সাগরে ভাসিয়ে ১৪০৮ হিজরীর ২৩ সফর, ১৩৯৪ বাংলার ২৮ আশ্বিন, ১৯৮৭ সালের ১৬ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটের সময় ৬৩ বছর বয়সের সুন্নতী জীবনের ইতি টানেন ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজেউন)।

হুজুর কেবলার ইহ জগৎ ত্যাগের পরবর্তী সময় থেকে তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে পীরে ত্বরিকত রাহ্নুমায়ে শরীয়ত হযরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ মুফতি মোহাম্মদ আবদুর রহিম আলকাদেরী (মা.জি.আ) এসব প্রতিষ্ঠানের পৃষ্টপোষকতা ও ত্বরিকতের খেদমত আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরই সাথে ছাঁয়ারমত সর্বৈব সহযোগীতা যাচ্ছেন হুজুর কেবলা (র.) এর ছোট শাহজাদা অধ্যাপক আল্লামা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল করিম আলকাদেরী।

সেই ১৯৮৭ সাল পরবর্তী প্রতি বছর আরবী চান্দ্রমাসের ২৩ সফর হুজুরে কেবলা হযরত শাহ্ সূফি আল্লামা মোহাম্মদ আবদুল মাবুদ আলকাদেরী’র (র.) পবিত্র বার্ষিক ওরশ মোবারক বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যেদিন এ দরবারে লাখো লাখো মুসলিম জনতা, সুন্নী মতাদর্শের হাজার হাজার আলেম, পীর মাশায়েখ, বুদ্ধিজীবি সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যোগদান করে থাকেন। লোকে লোকারণ্য আল্লাহু আকবর, জিকির, দরুদ, মিলাদ-মাহফিল, আধ্যাত্মিক ও ঈমানী ধ্বনীতে দরবার প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠে।

দরবারের আধ্যাত্মিক সংগঠন আঞ্জুমানে আজিজিয়া মাবুদিয়া সুন্নীয়া কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর খিতাপচর মাবুদিয়া দরবার শরীফে পবিত্র ওরশ শরীফ প্রতিবছর ২৩ সফর অনুষ্ঠিত হয়।

এ উপলক্ষে বাদে ফজর খতমে কোরআন শরীফ, খতমে বোখারী শরীফ, বাদে আসর-খতমে গাউছিয়া ও খতমে খাজেগান শরীফ। বাদে মাগরিব থেকে রাতব্যাপী মিলাদ মাহফিল, আওলিয়ায়ে কেরামের জীবনী ও দর্শণ নিয়ে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিশেষে মহান আল্লাহ তা’য়ালা সকলকে আউলিয়া কেরামের দর্শন বুঝে ও গ্রহণ করে ঈমানী জীবন যাপনের তৌফিক দান করুন, আমীন।

May be an image of 1 person and beardলেখক- কাজী এম এস এমরান কাদেরী.

সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here