মনিরুল ইসলাম
মানুষের জীবনে এমন একটা মূহূর্ত আসে যখন মানুষ একেবারে নিজের মুখোমুখি দাঁড়ায়। আত্মানুসন্ধান করে, নিজেকে প্রশ্ন করে, উত্তর খোঁজে, নিজেই প্রশ্নের সাথে উত্তর মিলিয়ে নেয়। আমার জীবনেও আজ সেরকম একটা দিন, অফিসিয়ালি আমার পঞ্চাশ (Half Century) পূর্ণ হলো! নিতান্তই পেটের তাগিদে চাকুরিতে এসেছিলাম, বেছে নিয়েছিলাম পুলিশের পেশা। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পুলিশি জীবনেও পঁচিশ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। খুব একটা নন্দিত নয় জেনেও পুলিশের চাকুরি করতে এসেছিলাম। ইউনিভার্সিটির অতি প্রিয় এক বড় ভাই যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তার মর্মার্থ অনেকটা এরকম ছিল, পড়ার অভ্যাসটা ধরে রাখতে পারলে পুলিশের পাশাপাশি মানুষ থাকা যাবে। আমি পেটের ক্ষুধার জন্য চাকুরি করেছি, করছি কিন্তু মনের ক্ষুধা মিটানোর জন্য পূরোনো অভ্যাসগুলো (বই পড়া, গান শোনা আর ছবি দেখা) ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। পেশাগত জীবনকে পারিবারিক-সামাজিক জীবন থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা সব সময়ই ছিল। লোভ কিংবা উচ্চাকাঙ্খা মনে বারবার উঁকি দিলেও সেভাবে আমাকে ওভারপাওয়ার করতে পারেনি। পেশাগত জীবনে বরাবরই আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা বজায় রাখার চেষ্টা ছিল, এমনকি যখন আমার প্রতি দৃশ্যমান অবিচার করা হয়েছে তখনও।
আজ নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঘোষনা করছি যে, পঞ্চাশ বছরে আমার প্রাপ্তি প্রত্যাশার চাইতেও অনেক অনেক গুণ বেশি। বিশ্বজুড়ে যখন মৃত্যুর মিছিল, বাংলাদেশে ও মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে, অনেক চেনা-জানা মুখ চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। এমন আতঙ্ক, শোক আর স্বার্থপরতার নগ্ন বর্হিপ্রকাশের মধ্যেও আমার মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ফেসবুকের টাইম লাইন এবং ইনবক্সে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা, সন্মান আর ভালোবাসা জানিয়েছে যে আমি একেবারেই অভিভূত! সবাইকে পৃথকভাবে ধন্যবাদ জানাতে না পারলেও সবার প্রতি আমার সীমাহীন কৃতজ্ঞতা, আন্তরিক ধন্যবাদ এবং নিরন্তর শুভ কামনা! ধন নয়, পদ নয়, মর্যাদা এবং আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে, আপনাদের একজন হয়েই বাঁচতে চাই। মহামারী গত হবে, সংকট কেটে যাবে একদিন। যতদিন সংকট থাকে ততোদিন সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন-শুভকামনা সবার জন্য!
আবারও সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। কবিগুরুকে দিয়ে শেষ করছি-
“মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
আমি তোমাদেরই লোক
আর কিছু নয়,
এই হোক শেষ পরিচয়!”