আন্তর্জাতিক ডেক্স: যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলোকে ‘বিদেশি প্রতিপক্ষগুলোর’ হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

বুধবার তিনি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার ফলে জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা বিদেশি টেলিকম পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করতে মার্কিন কোম্পানিগুলো বাধ্য হবে।

ওই নির্বাহী আদেশে কোনো কোম্পানির নাম বলা হয়নি, কিন্তু চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানিকে লক্ষ্য এটি করা হয়েছে বলে ধারণা, জানিয়েছে বিবিসি।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের দেওয়া একটি বিবৃতি অনুযায়ী, ট্রাম্পের আদেশের লক্ষ হল “বিদেশি প্রতিপক্ষ যারা সক্রিয় ও ক্রমবর্ধমানভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো ও সেবার ক্ষেত্রে দুর্বলতা তৈরি করছে ও এর সুযোগ নিচ্ছে তাদের থেকে আমেরিকাকে সুরক্ষা দেওয়া”।

এই আদেশের বলে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী ‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি আছে এমন লেনদেনে বাধা দিতে পারবেন’ বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এই পদক্ষেপকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানান মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের চেয়ারম্যান অজিত পাই। এক বিবৃতিতে এ পদক্ষেপকে ‘আমেরিকান নেটওয়ার্কগুলো নিরাপদ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

পৃথক আরেকটি পদক্ষেপে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হুয়াওয়ে টেকনোলজিস্ কোম্পানি লিমিটেড ও এর অন্তর্ভুক্ত ৭০টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের ‘এনটিটি লিস্টে’ যুক্ত করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদন ছাড়া এই কোম্পানিটি আর মার্কিন প্রযুক্তি কিনতে পারবে না।

মার্কিন সরকারের এসব সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মত পর্যবেক্ষকদের। ইতোমধ্যেই দেশ দুটি ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে এবং চলতি সপ্তাহে পরস্পরের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্কের কারণে তাদের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ আরও গভীর হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এসব পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া চীনের বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় মার্কিন ভোক্তা ও কোম্পানিগুলোই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাদের কাজে কোনো হুমকি নেই এবং তারা চীন সরকার থেকে স্বতন্ত্র স্বাধীন কোম্পানি, বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে হুয়াওয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করাতে যুক্তরাষ্ট্র আরও সুরক্ষিত বা শক্তিশালী হয়ে উঠবে না বলেও মন্তব্য করেছে কোম্পানিটি।

হুয়াওয়ের পণ্য চীন গোয়েন্দাগিরিতে ব্যবহার করতে পারে বলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্র তার ফেডারেল সংস্থাগুলোতে হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। পাশাপাশি মিত্রদেরও হুয়াওয়ের পণ্য বাদ দিতে উদ্ধুদ্ধ করে। এর জেরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড তাদের পরবর্তী প্রজন্মের ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতির ব্যবহার আটকে দেয়।

গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে, সম্প্রতি হুয়াওয়ে তাদের এই ক্ষমতার দ্বন্দ্বের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here