চেকদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনও বৈধ চুক্তি প্রমাণ করতে না পারলেও এখন থেকে চেক ডিজঅনার হলেই সাজা হবে না মর্মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর বুধবার ওই রায়ের অনুলিপি প্রকাশিত হয়।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এক আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করে এ রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

চেক ডিজঅনার হলেই এর আগে চেকদাতাকে সাজা দেওয়া হতো। চেকমূলে চেকগ্রহীতার টাকা পাওয়ার কোনও কারণ আছে কিনা, সেটি তেমন একটা দেখা হতো না। কিন্তু এখন থেকে চেকগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে যে, চেকদাতা ও চেকগ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনও বৈধ চুক্তি ছিল। তাই চেক প্রাপ্তির বৈধ কোনও কারণ প্রমাণ করতে না পারলে এখন আর চেকদাতার সাজা হবে না।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার প্রয়াত হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর ছোট ভাই, সাবেক কূটনীতিক কায়সার রশিদ চৌধুরীর স্ত্রী (মৃত) সামছি খানমের মালিকানাধীন নর্থ গুলশানের ৩০ কাঠা জমি ১৯৭৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সম্পাদিত ইজারা চুক্তি মূলে আমেরিকান দূতাবাসকে ১১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। যেহেতু ওই ইজারা চুক্তিটি নিবন্ধন (রেজিস্ট্রি) করা হয়নি এবং বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে মৃত সামছি খানমের উত্তরাধিকারগণ- ইমরান রশিদ চৌধুরী, পারভেজ রশিদ চৌধুরী এবং জিনাত রশিদ চৌধুরী জমিটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।

বিষয়টি জানতে পেরে আবুল কাহের শাহিন নামের এক ব্যক্তি ইমরান রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জমিটির বর্তমান বাজারমূল্য তথা ১৫০ কোটি টাকায় কিনতে আগ্রহী ক্রেতা রয়েছে এবং তিনি তা বিক্রি করে দিতে পারবেন বলে জানান।

ইমরান রশিদ চৌধুরী ওই আশ্বাসের ভিত্তিতে ২০১২ সালের ১৩ মার্চ শাহিনের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। এই চুক্তির শর্তানুযায়ী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বর্তমান বাজারমূল্যে জমিটি বিক্রি করে দেবেন এবং তার জন্য শাহিন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ১৩ শতাংশ টাকা পাবেন। তখন ইমরান রশিদ চৌধুরী পরবর্তী তারিখ উল্লেখ করে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার চারটি চেক আবুল কাহের শাহিনের নামে ইস্যু করেন। কিন্তু ৯০ দিন পার হওয়ার পরও শাহিন বর্তমান বাজার মূল্যে কোনও ক্রেতা জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

এরপর ২০১২ সালের ১৬ আগস্ট জমিটির ইজারাগ্রহীতা আমেরিকান দূতাবাসের সঙ্গে জমিটির মালিকরা একটি বায়না চুক্তি সম্পাদন করেন এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ৩ জুলাই বিক্রি সংক্রান্ত দলিল সম্পাদন করেন। এরপর শাহিনকে চেকগুলো ফেরত দিতে বলেন।

এদিকে আবুল কাহের শাহিন ওই পরবর্তী তারিখ দেওয়া চারটি চেক ফেরত না দিয়ে নিজে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি চেক চারটি নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করেন। ইতোমধ্যে ইমরান রশিদ চৌধুরী ওই চেকগুলো সম্পর্কে ব্যাংকে ‘স্টপ পেমেন্ট ইন্সস্ট্রাকশন’ দিয়ে রাখলে সেগুলো যথারীতি ডিজঅনার হয়। এরপর শাহিন সিলেটের আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করে তার পক্ষে রায় পান।

ইমরান রশিদ চৌধুরী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন। এর পর হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট রায় প্রদানের মাধ্যমে ইমরান রশিদ চৌধুরীকে মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেন। পরে আবুল কাহের শাহিন ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করেন। সে আপিলের ওপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রাiয় দেন। ওই রায়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হয়।

এ মামলায় আদালতে বাদী পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার চৌধুরী মুর্শেদ কামাল টিপু। অন্যপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here