সব ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা। মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশের সব জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার ট্রেন, বিমান ও নৌযান চলাচল বন্ধ হচ্ছে ।

মঙ্গলবার রাত ১২ টা থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ খবর জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ।

এরআগে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে সব ধরণের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।

এরইমধ্যে যেসব ট্রেনগুলো বেইজ স্টেশন থেকে ছেড়ে এসেছে সেগুলো আবার ফিরে যাবে।

সেসময় যাত্রী পরিবহন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে রেলমন্ত্রী বলেন, যদিও আমরা পরিবহনের উদ্দেশ্যে পরিচালনা করছি না, তবে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কেউ ট্রেনে উঠে বসলে সেটা ভিন্ন বিষয়।

তবে পণ্য পরিবহনের জন্য মালবাহী ট্রেনগুলো চলাচল করবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে, মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে নৌপথে লঞ্চ, ছোট নৌকাসহ সব ধরণের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নৌ পরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ কথা নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, যাত্রীবাহী নৌযান না চললেও পণ্যবাহী নৌযানগুলো চলাচল করবে।

এর আগে সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে সব ধরণের গণপরিবহন বৃহস্পতিবার থেকে ‘লকডাউন’ করা হবে। বাংলাদেশের কোন সড়কে কোন রকম যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করবে না।

এই লকডাউন কার্যকর থাকবে পরবর্তী দশদিন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

তবে লকডাউন উপেক্ষা করেই সোমবার ছুটি ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেন স্টেশন ও বাস স্টেশনে মানুষের ভিড়ের ছবিও ছড়িয়ে পড়ে।

সোমবারই লক্ষ্মীপুরে ফিরেছেন আল আমিন। তিনি জানান, সোমবারও সায়েদাবাদে উপচে পড়া মানুষের ভিড় ছিল। তিনি আলাদাভাবে বাস ভাড়া করে ফিরলেও তার এক বন্ধু সায়েদাবাদ বাস স্টেশনে সোমবার বিকেলে গিয়ে টিকেট না পেয়ে গভীর রাতে বাসে করে বাড়ি ফেরেন।

ট্রেনে করে নীলফামারি ফিরতে চেয়েছিলেন এইচ এম ফরহাদ আর তার ছোট ভাই। তারা জানান, ছুটি ঘোষণার পর পরিবারের চাপেই ঢাকা থেকে নীলফামারি ফেরার জন্য সোমবার ট্রেনের টিকেট করে রাখেন তিনি।

তবে মঙ্গলবার সব ধরণের ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করার পর তাদের যাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

তবে পরিবহণ বন্ধের ঘোষণা আসার আগেই লঞ্চে করে লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সবুজ আলম ফিরোজ। ঢাকায় বন্দী অবস্থায় থাকতে হবে বলে গ্রামের বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্তের কথা জানান মিস্টার আলম।

তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখতে পান, শুধু তিনি একা নন, তার মতো আরো অনেক মানুষ বাড়ি ফিরছে।

তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে যে, ঈদের ছুটির মতো মানুষ ফিরছে”।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়টাতে কেন বাড়ি ফিরছেন এমন প্রশ্নে মিস্টার আলম বলেন, বাড়ির লোকজন চিন্তা করছে বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

“বুঝি যে না গেলেই বেটার হতো। কারণ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে পুরো একটা গ্রামও সাফ হয়ে যেতে পারে। আমি বুঝি। কিন্তু মা যেতে বলেছে আর মনও মানছে না,” বলেন তিনি।

এদিকে মঙ্গলবারও নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে, গণপরিবহন ব্যবহারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

ছুটি পেয়ে বাসে করে মঙ্গলবার রাতে গ্রামের বাড়ি শেরপুরে ফিরছেন গৃহকর্মী শাহিদা বেগম। তিনি জানান, রোগের কথা জানেন তিনি। তবে ঢাকায় পরিচিত কেউ না থাকায় সংকটের মুহূর্তে গ্রামেই ফিরে যাচ্ছেন তিনি।

“সবাই যাইতেছে। যে বাসায় থাকি, তার সব কিছু খালি হইয়া যাইতেছে। একলা কি করুম। তাই যাইতেছি,” তিনি বলেন।

“দেশ-গেরামে তো মা-বাপ-ভাই-বোন সবাই আছে। এই খানে তো কিছু হইলে কেউ কাউরে ধরে না, কাছে আসবো না। ওই খানে তো কেউ ডরায় না, তাই যাইতেছি”।

খবর বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here