আলেমকূল শিরোমণি, ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা হাশেমী মুদ্দাজিল্লুহুল আলী বর্তমানে দেশের প্রসিদ্ধ আলেমগণের মধ্যে সবার শীর্ষস্থানে রয়েছেন। তিনি আজীবন কঠোর পরিশ্রমের বদৌলতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমাম হিসেবে দ্বীনে ইসলামের বিশুদ্ধ ঈমান আক্বীদার প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে অনন্য খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। এ উপমহাদেশে বিদগ্ধ ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের মধ্যে বর্তমানে তিনি অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। প্রিয়নবী ছরকারে দো‘আলম হযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী এ মহান ব্যক্তিত্ব আমাদের জন্য অনুপম অনুসরণীয় আদর্শ।

জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ

আউলিয়ায়ে কেরামের স্মৃতিধন্য চট্টগ্রাম জেলার তৎকালীন পাঁচলাইশ বর্তমানে বায়েজীদ থানার অন্তর্গত জালালাবাদের এক ধর্মভীরু সম্ভ্রান্ত মুসলিম কাযী পরিবারে হাশেমী বংশে ১৯২৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর, ১৫ রজব, রবিবার রাতে ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা কাযী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী হুযূর কেবলা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাহ্ সুফী মাওলানা কাযী আহ্ছানুজ্জমান হাশেমী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ছিলেন প্রসিদ্ধ হাশেমী বংশের একজন কৃতিপুরুষ। তাঁর মাতা ছিলেন বাংলার মোহাদ্দেসে আযম অলিয়ে কামেল চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতীব আল্লামা ছফিরুর রহমান হাশেমী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর ঔরসজাত কন্যা। তাঁর পুর্বপুরুষ সৈয়্যদুশ শোহাদা ইমাম হোসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)-এর বংশধর। তাঁর পিতার পূর্বপুরুষ মদীনা শরীফ হতে হিজরত করে বাগদাদে আসেন। (তাঁদের বংশ ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)-এর সাথে মিলিত হয়।) ওখান থেকে দিল্লীর বাদশাহ্ আওরঙ্গজেব আলমগীরের আমলে কাযীউল কুজাত বা প্রধান বিচারপতি হয়ে দিল্লীতে আসেন। দিল্লী থেকে নবাবী আমলে ইসলাম খাঁর অনুরোধে কাযীর দায়িত্ব গ্রহণ করে বিশেষত ইসলাম প্রচারের নিমিত্তে চট্টগ্রামে তাশরীফ আনেন। হযরত গাউসে আযম আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর শ্রদ্ধেয় পীর কুতুবুল আরেফীন, ইমামুল মাশায়েখ হযরত খাজা ছালেহ লাহোরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সুযোগ্য খলিফা পাঁচলাইশ থানার বাকলিয়া নিবাসী মাওলানা সৈয়দ আব্দুন্নবী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কন্যা বিবি শরীফা খাতুনের সঙ্গে তাঁর দাদাজান মাওলানা কাজী আবদুর রহীম হাশেমীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পিতা ও মাতা উভয় দিক থেকে তাঁর বংশধারা ছিল সম্ভ্রান্ত ও উঁচুস্তরের।

বাল্যকাল ও শিক্ষা জীবনঃ

বাল্যকাল থেকেই আল্লামা হাশেমী মুদ্দাজিল্লুহুল আলী তীক্ষ্ণ মেধাবী ও অত্যন্ত প্রতিভাবান ছিলেন। ছয় বছর বয়সে ক্বোরআন মজীদ খতম করেন। উর্দু, ফার্সি, আরবী, বাংলার প্রাথমিক জ্ঞান স্বীয় গৃহে আপন বুযর্গ পিতার কাছ থেকে অর্জন করেন। অতঃপর প্রাইমারী স্কুল পাশ করে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়াজেদিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষা অর্জন আরম্ভ করেন। সেখান থেকে প্রত্যেকটি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে ১৯৪৫ সালে জামাতে পঞ্জুমের পরীক্ষায় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর স্বরূপ সনদ ও মাদ্রাসার পক্ষ থেকে গোল্ড মেডেল লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে জমাতে উলা পর্যন্ত শিক্ষা কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেন। তিনি তাঁর সম্মানিত উস্তাদ আল্লামা মুছা মুজাদ্দেদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছ থেকে আরবী ভাষার বিভিন্ন বিষয়ে পাণ্ডিত্য লাভ করতে সক্ষম হন।

উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে ঢাকা গমণঃ আল্লামা হাশেমী জমাতে উলা পাশ করে ওয়াজেদীয়া মাদ্রাসায় একবছর যাবৎ দরস দানে লিপ্ত থাকেন। তখন তাঁর অন্তরে কামিল ডিগ্রী অর্জন করার প্রবল আগ্রহ জন্মে। তৎকালীন উপমহাদেশের ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসাকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করা হয়। উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে আল্লামা হাশেমী ঢাকা গমন করেন এবং তৎকালীন ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকাতে ১৯৫১ সালে টাইটেল ক্লাশের হাদীস বিভাগে ভর্তি হন। তথায় তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে হাদীস শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এদিকে ওই সময়ে তিনি সন্ধ্যাকালীন ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে উর্দুতে ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পন্ন করেন। তিনি তখনকার সময়ের পাক ভারতের অনন্য ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন আলেম শরীয়ত ও তরিকতের মাজমাউল রাহরাইন আরবী ও উর্দু ভাষায় বিভিন্ন বিষয়াদির উপর অগণিত গ্রন্থ রচয়িতা প্রখ্যাত আলেম আল্লামা মুফ্তি সৈয়দ আমীমুল এহছান মুজাদ্দেদী বরকতী কুদ্দেসা সিররুহুর সান্নিধ্যে থেকে ইলমে হাদীস, ফেকাহ, তাফসীর ইত্যাদি বিষয়ের উপর গবেষণা করে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৯৫২ সালে হযরত মুফতী সাহেব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁকে “নাইলুল মুরাম বে-আসানিদে আশ্ শায়খ নূরুল ইসলাম” বিশেষ সনদ ও সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি প্রখ্যাত আরবী সাহিত্যিক আল্লামা আবদুর রহমান কাশগরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি )-এর স্নেহ লাভেও ধন্য হন।

হুযূর কেবলার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকমণ্ডলীঃ

আল্লামা হাশেমী তৎকালীন বহু খ্যাতনামা বুযর্গ, বিজ্ঞ, সুদক্ষ দ্বীনি আলেমগণের কাছ থেকে ইলম অর্জন করতে সক্ষম হন। তাঁর শিক্ষকমণ্ডলীর মধ্যে তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ আলেম শরীয়ত ও তরিকতের মাজমাউল বাহরাইন আরবী, উর্দু ভাষায় অসংখ্য গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা মুফতি সৈয়দ আমীমুল এহছান মুজাদ্দেদী বরকতী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) হতে তারিখে এলমে হাদীস ও বোখারী ২য় খণ্ড অধ্যয়ন করেন। তাফসীরে কাশ্শাফ আশ্শায়েরুল আবকরী হযরতুল আল্লামা আবদুর রহমান কাশগরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছ থেকে পড়েন, তাফসীরে বায়যাভী মাহেরুল ফুনুন হযরতুল আল্লামা হুজ্জাতুল্লাহ্ মুহাম্মদ শফী ফিরিঙ্গী মহল্লী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছ থেকে, আবু দাউদ ২য় খণ্ড প্রখ্যাত আলেম আল্লামা আবদুস সত্তার বিহারী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে অধ্যয়ন করেন। মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড ও তিরমিযী শরীফ ১ম খণ্ড মাওলানা মমতাজুদ্দীন (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছ থেকে অধ্যয়ন করেন, যিনি আল্লামা নাজির হোসাইন থেকে যিনি হযরত শায়খ আহমদ আলী ছাহারানপুরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছ থেকে সনদে ফযিলত অর্জন করেন। সহীহ বোখারী ১ম খণ্ডের প্রথম দুই তৃতীয়াংশ নাসায়ী ১ম খণ্ড ও শরহে নুখবাতুল ফিকর খাতেমুল মুহাক্কেকীন হযরতুল আল্লামা নজীরুদ্দীন কটকী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে অধ্যয়ন করেন। বোখারী শেষ তৃতীয়াংশ হযরতুল আল্লামা জাফর আহমদ উছমানী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে অধ্যয়ন করেন। সল্লুমুল উলুম ও হেদায়া অধ্যয়ন করেন কদওয়াতুল মুহাক্কেকীন জামেয়ে উলুমে মাকুল ওয়া মনকুল হযরতুল আল্লামা মাওলানা আজিজুর রহমান (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছ থেকে। তাফসীরে জালালাইন ও মসনবী মাওলানা রুমী অধ্যয়ন করেন মুক্তাদায়ে শরীয়ত হযরতুল আল্লামা মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ আতীকুল্লাহ্ খাঁন (মুদ্দাজিল্লুহুল আলী)-এর কাছে। মিশকাতুল মাসাবীহ, মুসাল্লামুস্ সাবুত, মুল্লা মুবীন, হেদায়তুল হিকমত, মাইবুযি, মুখতাসারুল মায়ানী, মুতাওয়াল, কুত্বী, শরহে জামী, জামেউল গুমুছ, ‘আবদুর রাসূল, আবদুল গফুর ইত্যাদি কিতাব হযরতুল আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ মুছা মুজাদ্দেদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর কাছে অধ্যয়ন করেন। এছাড়া মুসলিম ২য় খণ্ড, নাসায়ী ও তিরমিযী ২য় খণ্ড, আবু দাউদ ১ম খণ্ড, ইবনে মাজাহ্, ইতকান, তারিখে ইসলাম মাদ্রাসায়ে আলীয়া ঢাকার প্রসিদ্ধ শিক্ষক মণ্ডলীর কাছ থেকে অধ্যয়ন করার সৌভাগ্য লাভ করেন। আল্লামা আহমদ হাসান (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি.)’র কাছ থেকেও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ইলম অর্জন করেন। উর্দু ডিপ্লোমা ঢাকা ইউনিভার্সিটির ডক্টর ইন্দলিভ শাদানী, আল্লামা নজমে নুমানী আফতাবে সবজওয়ারী এবং ইলমে ওরুজ অধ্যয়ন করেন আল্লামা সাঈদ আহমদ জাফরী প্রমুখ পন্ডিত ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে। এভাবে হুযুর কেবলা ইলমের উপর বুৎপত্তি অর্জন করতে সক্ষম হন।

হুযূরের কর্মজীবন ও ওয়াজ নছিহতঃ

ঢাকা হতে হুযুর কেবলা শিক্ষা সমাপনীর পর স্বীয় বাড়ীতে ফিরে আসেন এবং তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র চট্টগ্রাম ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় যোগ দেন এবং প্রধান মুহাদ্দিসের পদ শূন্য হলে তিনি উক্ত পদে নিযুক্ত হন। মাদ্রাসার অভ্যন্তরে তাঁকে টাইটেল সাহেব সম্বোধন করা হতো। এছাড়াও তিনি পটিয়া শাহ্চাঁন্দ আউলিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলীয়া মাদ্রাসা, হাটহাজারী অদুদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসায় বেশ কিছুদিন যাবৎ হাদীসে নববী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর খেদমত আঞ্জাম দেন। অতুলনীয় আশেক্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম হুযুর কেবলা আল্লামা হাশেমী তরিকতের মহান দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশের আনাচে কানাচে ওয়াজ নসিহত ও ভাষণ বক্তৃতার মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে দ্বীনের সঠিক মতাদর্শ আকাঈদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে প্রতিষ্ঠা করার মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

হুযূ্র কেবলার শিষ্যবৃন্দঃ

হুযূর কেবলা আল্লামা হাশেমী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী তাঁর শিক্ষকতা জীবনে কত ছাত্রকে পাঠদান করেছেন তার হিসাব করা অত্যন্ত কঠিন। বর্তমানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নামকরা যত আলেম ও পীর মাশায়েখ রয়েছেন, তার অধিকাংশই হুযুরের শিষ্যত্ব গ্রহণে ধন্য হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকজন শিষ্যের নাম উল্লেখ করা হলঃ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলীয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস শেরে মিল্লাত আল্লামা ওবাইদুল হক নঈমী সাহেব, ছিপাতলী আলীয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল পীরে তরিকত আল্লামা আজিজুল হক্ব আল কাদেরী, ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপ্যাল আল্লামা মুফতি ইনামুল হক্ব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), গহীরা আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপ্যাল আল্লামা নুরুল মুনাওয়ার সাহেব, আহ্ছানুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতি আহমদ নজির সাহেব, ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল আল্লামা আবদুস সাত্তার আনোয়ারী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), ঢাকা বদরপুর দরবার শরীফের পীর সাহেব আল্লামা আবদুর রব চিশ্তী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), বুড়িশ্চর জিয়াউল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আল্লামা জাফর আহমদ সিদ্দিকী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা মুফতি কাযী মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম হাশেমী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা কাযী মুহাম্মদ বজলুর রহীম হাশেমী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), গহিরা আলীয়া মাদ্রাসার প্রধান মোহাদ্দেস আল্লামা মুফতি ইব্রাহীম আল কাদেরী, আশেকানে আউলিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আল্লামা খায়রুল বশর হক্কানী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক প্রধান ফকীহ্ মুফতি সৈয়দ অছিয়র রহমান, মিরশ্বরাই লতিফীয়া আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সালাহ উদ্দীন ইমামী, ছিপাতলী গাউছিয়া মুঈনীয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মরহুম মাওলানা মোয়াজ্জাম হোসাইন চৌধুরী, পটিয়া শাহ্চান্দ আউলিয়া আলীয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ খাইরুল্লাহ্, নানুপুর গাউছিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা মুঈনুদ্দীন আহমদ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও মাওলানা শামসুল আলম হেলালী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), কাটিরহাট মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ আবুল বশর, গহিরা আলীয়া মাদ্রাসার সাবেক মোহাদ্দেস মরহুম মুফতি মাওলানা আবুল মোহছেন, রাঙ্গুনীয়া বেতাগী দরবার শরীফের গদ্দিনাশীন মাওলানা মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান আলী শাহ্ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), সাতকানিয়া মির্জাখীল দরবার শরীফের গাদ্দিনাশীন মাওলানা মুহাম্মদ আরেফ বিল্লাহ্, কালাপুল ওহিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম মাওলানা আবদুস্ সালাম, আলমশাহ্ পাড়া আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শামসুল আলম চৌধুরী, মির্জাপুর মোমেনীয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুল আনোয়ার, কুমিল্লা নাঙ্গলকোট সিনিয়র মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা হারেসুর রহমান, নাঙ্গলমোড়া সিনিয়র মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা হাফেজ আবুল হায়াত, হাটহাজারী ওদুদীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ হোসাইন, আনোয়ারা ছুন্নাপাড়া মুরিরুল ইসলাম সিনিয়র মাদ্রাসার প্রধান মোর্দারেস মাওলানা আবুল বশর, পটিয়া ছিরমাই সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রশীদ প্রমুখ। এছাড়া দেশের আনাচে কানাচে হুযুরের আরো অগণিত শিষ্য দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসারে নিয়োজিত আছেন।

রচনাকর্মঃ

শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন ও দিবারাত্রি সর্বদা ওয়াজ নসিহত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও ফতোয়া প্রদান ইত্যাদি ব্যস্ততা স্বত্বেও হুযুর কেবলা নিম্নে বর্ণিত গ্রন্থগুলো রচনা করেন। (১) নসীহাতুত্ তালেবীন। (২) যাদুল মুসলেমীন। (৩) আকাঈদে বাতেলা। (৪) সত্যের আহবান। (৫) আদ্দুররুত-দলায়েল বে-কেরাহতিল জামাতে ফিন্ নাওয়াফেল। (৬) আল আরবাইন ফি মুহিম্মাতিদ্ দ্বীনে। (৭) মেরাজুল মু’মিনিন। (৮) মুসলমানদের সম্বল পরহেজগারদের দিশারী। (৯) ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) কেন? (১০) নূরে মোস্তফা। (১১) আল্লামা আহ্ছানুজ্জমান হাশেমী (রহঃ)-এর জীবনী গ্রন্থ। (১২) শাযরাতুয যাহাব। (১৩) দো‘আর ভাণ্ডার। (১৪) তাযকেরাতুল কেরাম। (১৫) ওয়াযায়েফে হাশেমীয়া।

সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক জীবনঃ হুযূর কেবলা আল্লামা হাশেমী মুদ্দাজিল্লুহুল আলী ১৯৮০ সালে জামাতে আহলে সুন্নাতের অঙ্গসংগঠন হিসেবে আকাঈদে আহলে সুন্নাতের ধারক বাহক এদেশে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনরত একক সুন্নী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা গঠনে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সুদৃঢ় করণে হুযুর কেবলা আজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বর্তমানে এদেশের সুন্নী আকীদা ভিত্তিক একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিরাট দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আতের কেন্দ্রীয় পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থা-বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, এদেশের আ‘লা হযরত চর্চা ও গবেষণার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আ‘লা হযরত ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদযাপন কমিটির সম্মানিত আহ্বায়ক।

মাদ্রাসা মসজিদ ও দ্বীনি সংগঠন প্রতিষ্ঠাঃ

হুযূর কেবলা আল্লামা হাশেমী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী নিজ বাড়ীতে ১৯৬৪ সালে আহ্ছানুল উলুম জামেয়া গাউছিয়া আলীয়া মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মাদ্রাসার সাথে মসজিদে গাউছিয়া রেফাঈয়া-এরও ভিত্তি দেন। এছাড়াও হুযূর কেবলা বিভিন্ন স্থানে অগণিত মসজিদ ও মাদ্রসা স্থাপন করেন। ১৯৮৭ সালে হুযুর কেবলা আধ্যাত্মিক তরিকত ভিত্তিক সংগঠন “আঞ্জুমানে মুহিব্বানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গাউছিয়া জিলানী কমিটি” নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের ব্যবস্থাপনায় হুযূর কেবলার সভাপতিত্বে ১২ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শীর্ষক সেমিনার বর্তমান সময়কার দেশ বিখ্যাত মাহফিলে পরিণত হয়েছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর ৬৩ বছরের হায়াতে তাইয়্যেবা আলোচনার উপর গবেষণাধর্মী ও রূহানী মাহফিল হিসেবে তা ঈমান আক্বীদা হেফাজতকারী। ছাত্র ও যুবকদের সুন্নীয়ত ও তরীকতের দিক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁরই নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গাউছিয়া হাশেমী কমিটি-বাংলাদেশ।

পবিত্র হজ্বে গমন, বিদেশ সফর ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে সুন্নীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাঃ

আল্লামা হাশেমী (মুদ্দাজিল্লুহুল আলী)-এর অবদানের সুফল ও খ্যাতি শুধু স্বদেশেই সীমিত নয়, বরং আন্তর্জাতিক মুসলিম বিশ্বের বহুদেশ সফরের মাধ্যমে সুন্নীয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। হুযুর কেবলা আটবার পবিত্র হজ্বব্রত পালন ও একবার উমরাহ্ পালন করেন। তাছাড়া ১৯৮৯ সনে হুযুর কেবলা প্রথম বারের মত সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। ওহাবী সম্প্রদায় দ্বারা প্রভাবিত আরব আমিরাতে তাঁর নূরানী ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে প্রবাসী সুন্নীদের মনে উৎসাহ্ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। তিনিই প্রথম প্রকাশ্যভাবে সেখানে সুন্নী মাহফিলে ওয়াজ করেন। ইতিপূর্বে সুন্নী ওলামায়ে কেরাম সেদেশে মাহফিল করতে যাবার সাহস ও সুযোগ পাননি। ১৯৯২ সনে প্রবাসী সুন্নীদের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে পুনরায় দ্বিতীয় বার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফর করেন। এরপরও আরো বেশ কয়েকবার প্রবাসী বাংলাদেশী ও পাকিস্তানীদের আমন্ত্রণে তিনি আমিরাত সফর করেন। তিনি সেখানে গমনের ফলে এবং সারগর্ভ বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশী, পাকিস্তানী ও ভারতের সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে এক নবজাগরণ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশী ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানের অনেক সুন্নী মুসলমান তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। ১৯৯৪ইং সনে সুদূর আমেরিকায় অবস্থানরত সুন্নী মুসলমানদের একান্ত আবেদন ও ব্যবস্থাপনায় হুযুর কেবলা আমেরিকার বিভিন্ন ষ্টেটে কষ্টসাধ্য সফর করেন। সেখানেও তিনি এদেশের সুন্নী ওলামা কেরামগণের মধ্যে অগ্রণী। তিনি তথায় বিভিন্ন সভা সমিতিতে বক্তব্য রাখেন, কয়েকটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। তাঁর সাক্ষাত ও ওয়াজ নসিহতে প্রভাবিত হয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অমুসলিম তাঁর হাতে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাছাড়া হুযুর কেবলা ইরাকে হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু), গাউছে পাক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)-এর মাযার, প্রায় ২৫ জন নবী (আলাইহিমুস সালাম)-এর রওজায়ে পাক এবং আরো বহু আউলিয়ায়ে কেরামের মাযার জিয়ারত করে ফুয়ুজাত ও বারাকাত লাভে ধন্য হন। হুযুর কেবলা খাজা বাবার মাযার শরীফসহ আরো অনেক আউলিয়া কেরামের মাযার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভারত সফর করেন।

যাঁদের কাছ থেকে খেলাফত ও এজাযত লাভ করেছেনঃ

ইমামে আহলে সুন্নাত, রাহ্বুরে শরীয়ত মুহিউস্ সুন্নাহ্, কা‘মেয়ে বিদ্আত্, বকিয়াতুস্ সালাফ, হুজ্জাতুল খালাফ, সিরাজুল ওলামা, বদরুল ফুযলা আল্লামা কাযী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী মুদ্দাজিল্লুহুল আলী ক্বাদেরীয়া তরীকায় প্রথমে তাঁর পিতা সুলতানুল ওয়ায়েজীন সিরাজুস্সালেকীন, হাদীয়ে যমান, হযরত মাওলানা কাযী মুহাম্মদ আহ্ছানুজ্জমান হাশেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মোবারক হাতে বায়‘আত গ্রহণ করে সুলুকের কাজ শেষ করার পর খেলাফত লাভ করেন। শাহ্ মাওলানা আহ্ছানুজ্জমান রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলাইহি তাঁর আপন নানাজান যুবদাতুল আরেফীন বোরহানুল আশেক্বীন, আশেক্বে ইলাহী হযরত মাওলানা আবদুন্নবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে খেলাফত লাভ করেন। তিনি ইমামুত্ ত্বরীকত মাখ্জনে হাকীক্বত, রাজদারে রূমুজে মারেফত, মোসলেহে উম্মত হযরত মাওলানা শাহ্ সালেহ্ লাহুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে খেলাফত লাভ করেন। যিনি হযরত শাহ্ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এরও পীর মুরশীদ ছিলেন। এ ছাড়া ফুরফুরা দরবারের পীর ও মুরশীদ হযরত মাওলানা আবূ বকর ছিদ্দিক্বী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আল্লামা হাশেমী সাহেব ক্বেবলার বাবাজান কেবলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-কে স্বেচ্ছায় খেলাফত ও এজাযত প্রদান করেন; কিন্তু তাঁর বাবাজান প্রায় আপন নানাজান কেবলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর সিলসিলায় বায়‘আত করাতেন। ফুরফুরা দরবারের বড় শাহ্জাদা পীরে কামেল মাওলানা আবদুল হাই সাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এক সফরে চট্টগ্রাম আসলে তাঁর বাবাজান কেবলার সাথে সাক্ষাৎ করতে আল্লামা হাশেমী সাহেব ক্বিবলার বাড়িতে তাশরিফ আনেন; সে দিন আল্লামা হাশেমী সাহেবকে তিনিও খেলাফত ও এজাযত প্রদান করেন। এছাড়া হযরত পীর সাহেব ক্বেবলাকে চট্টগ্রাম রাউজান থানাধীন আন্ধার মানিকের সু-প্রসিদ্ধ পীরে কামেল হযরত শাহ্ মাওলানা সাইয়্যাদ আবদুল জলীল আল-ক্বাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও খেলাফত ও এজাযত দান করেন। উল্লেখ থাকে যে, অতুলনীয় আশেক্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম, আলেমকুল শিরমণি শামসুল আরেফীন, ইমামুল মোনাযেরীন, সাইয়্যাদুল মোহাক্বেকীন, ইমামে আহলে সুন্নাত, গাজীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত, হযরত আল্লামা শাহ্ সৈয়্যদ আজিজুল হক্ব আল-ক্বাদেরী শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও আল্লামা হাশেমী সাহেব ক্বিবলাকে এজাযত প্রদান করেন। প্রকাশ থাকে যে, হযরত শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-আওলাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম, গাজীয়ে ফিলিস্তিন, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত, ছাহেবে কাশ্ফ ও কারামত হযরত আল্লামা সাইয়্যাদ আবদুল হামীদ বাগদাদী আফিন্দি আজহারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে খেলাফত ও এজাযত লাভ করেছিলেন। ১৯৯৫ ইংরেজীতে আল্লামা হাশেমী সাহেব ক্বিবলা পবিত্র হজ্বব্রত পালন করতে গেলে, আরবের সুপ্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন ও পীর, সনদুল মুহাক্কেকীন, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীকত হযরতুল আল্লামা সাইয়্যাদ মুহাম্মদ ইবনে সাইয়্যাদ আলাভী মালেকী দামত বারাকাতুহুমুল আলীয়াও তাঁকে ক্বাদেরীয়া চিশ্তীয়া নক্শবন্দিয়া মোজাদ্দেদীয়া ত্বরীকার খেলাফত ও এজাযত প্রদান করেন। এছাড়া আল্লামা হাশেমী সাহেব ক্বেবলা চিশ্তীয়া নেযামীয়া তরীকায় হযরত খাজা নেযামুদ্দিন মাহবুবে ইলাহী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর ভাগিনার আওলাদ, কোদওয়াতুস্সালেকীন হযরত মাওলানা পীর যামেন নেযামী সাইয়্যাদ বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর পবিত্র হাতে বায়‘আত খেলাফত ও এজাযত লাভে ধন্য হন। উল্লেখ্য পীর যামেন নেযামী রাহমাতুল্লাাহি আলাইহি তাঁকে ‘সিরাজুল ওলামা’ খেতাবে ভূষিত করেন। নক্শবন্দিয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকায় তাঁর নানাজান, উসতাদুল ওলামা ওয়াল মোহাদ্দেসীন, বাহরুল উলুম হযরত আল্লামা শাহ্ সফিরুর রহমান হাশেমীর পবিত্র হাতে এজাযত প্রাপ্ত হন। তাছাড়া মুহতারাম হুযূর ক্বিবলা মুদ্দাজিল্লুহুল আলী ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার প্রধান মোহাদ্দেস, সাইয়্যাদুল ওলামা ওয়াল মুহাদ্দেসীন, বহু কিতাবের প্রণেতা, হযরত আল্লামা মুফতী সাইয়্যাদ মুহাম্মদ আমিমুল এহ্সান মোজাদ্দেদী বরকতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে মুজাদ্দেদীয়া নক্শবন্দীয়া তরিকায় বাইয়াত গ্রহণ করতঃ খেলাফত ও ইজাযত লাভ করেন। এছাড়া তিনি তাঁর পবিত্র হাতে লিখিত ‘নাইলুল মুরাম বে-আসানিদে আস্ শাইখ নুরুল ইসলাম’ নামে একটি ইলমে হাদীস, তাফসীর, ফিক্হ্ ও তরিকতের ইজাযত সম্বলিত সনদও প্রদান করেন। এছাড়া বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, সাইয়্যাদুল মুনাযেরীন, রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীকত, হযরত আল্লামা সাইয়্যাদ আবেদ শাহ্ মোজাদ্দেদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও ক্বাদেরীয়া চিশতীয়া নক্শবন্দিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরিকায় খেলাফত ও এজাযত প্রদান করেন। সিরহিন্দ শরীফের সাজ্জাদানশীন হযরত মাওলানা এহইয়া মোজাদ্দেদী মুদ্দাজিল্লুহুল আলী নক্শবন্দিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরিকায় খেলাফত ও এজাযত দান করেন। এছাড়া আরব আযমের অনেক বুযর্গানে দ্বীন হুযূর কেবলাকে খেলাফত ও এজাযত দিয়ে সম্মানিত করেছেন।

উপমহাদেশের সর্বজন স্বীকৃত শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন, পীরে কামেল ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা শাহসূফী কাজী মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম হাশেমী (রহঃ) ২জুন ২০২০ তারিখ ভোর রাতে নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here