বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রেলওয়ে স্টেশন সম্ভবত চট্টগ্রামের পুরনো রেল স্টেশন। অনেকে প্রশ্ন করেন এই সুন্দর রেলওয়ে স্টেশনটি কবে তৈরি হয়?
আমি বলি বছর বিশেক হবে। আমার কথা শুনে অনেকেই ভিমরি খেয়ে যান।
তাহলে মূল গল্পে আসি।
১৮৪৪ সালে ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড হেনরি হার্ডিঞ্জ বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ভারতে রেলপথ স্থাপন করার অনুমতি দান করেন। সেটার আলোকে ১৮৯১ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি স্থাপিত। এ কোম্পানির মূল লক্ষ্য ছিল আসামের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের রেল যোগাযোগ স্থাপন করা। এ কোম্পানির উদ্যোগে ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই, প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম–কুমিল্লা এবং ৬০. ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ লাকসাম–চাঁদপুর মিটারগেজ সেকশন দুটি চালু হয়। পরের বছর কুমিল্লা-আখাউড়া ও আখাউড়া-করিমগঞ্জ সেকশন চালু হয়। যা পরবর্তীতে (১৯০৩) আসামের তিনসুকিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
ট্রেন ভর্তি চায়ের পেটি আসা শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দরে। এ রেললাইনগুলোর সুবাদে চট্টগ্রাম বন্দর সাবাকলত্ব পায়। প্রথম জেটি স্থাপিত হয় চা ওঠানামানোর জন্য। যা বর্তমানে ৪ নং জেটি বলে পরিচিত। কর্মমুখর হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম স্টেশন।
১৮৯৫ সালের ৩ রা নভেম্বর চট্টগ্রামে একটি দোতলা বৃহতায়তন রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করা হয়। এটা শুধু স্টেশন ছিল না, আসাম বেঙ্গল রেল কোম্পানিদের আবাসনের ব্যবস্থাও ছিল এতে। তারা দোতলায় থাকতেন। তখন অবশ্য পাহাড়তলীই ছিল প্রধান স্টেশন। বটতলি স্টেশনে নামে পরিচিতি পুরনো রেলওয়ে স্টেশন চট্টগ্রাম বন্দরের রপ্তানি দেখভাল করা হত।
কিন্তু মজার ব্যাপার সেসময় যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, আর্থিক সংকট হোক বা অন্য কোন কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা ছোটবেলা দেড়তলা উচু স্টেশন বিল্ডিংটি দেখেছি। সামনের চেহারা ছিল আধখেচড়া।
১৯৯৬ সালে রেলওয়ে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গ্রামীণ ফোন যাত্রা শুরু করে। তখন তারা চট্টগ্রাম পুরনো স্টেশন সংস্কারের প্রস্তাব দেয়। এর আগেই চট্টগ্রাম নতুন স্টেশন নির্মাণ শেষ হয়। পুরনো স্টেশনটি এক রকম অব্যবহৃত ছিল। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবটিতে সায় দেয়।
দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ ফোন কোম্পানি স্টেশনটির সংস্কার কাজ চালায়। আমি নিজে দেখেছি, স্টেশনের প্রত্যেকটি ইট তারা খুলে নতুন ভাবে লাগিয়েছে। এসময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্রামীণ ফোনের হিসাব বিভাগের প্রধান ছিলেন মান্না সোম। আমি তাকে এ কাজটায় আপত্তি জানিয়েছিলাম। উনি তখন আমাকে দারুণ একটি তথ্য দেন।
গ্রামীণ ফোন চট্টগ্রাম পুরনো স্টেশনের মূল নকশাটি সংগ্রহ করেছিল। অর্থাভাবে ব্রিটিশরা যে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি গ্রামীণ ফোন তা করে দিয়েছি।
২০০৩ সালের পর এ সংস্কার কাজ শেষ হয়। তাই আজকের যে চট্টগ্রাম পুরনো রেল স্টেশন দেখা যায়, সেটার বয়স বেশি না। দৈনিক আজাদীর ৩৫ তম বর্ষপূর্তি সংখ্যা, যা ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তা থেকে (পৃষ্ঠা ৬৫) চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পুরনো ছবিটি দিলাম। আশা করি আমার বক্তব্যের সত্যতা পাবেন।
পুরনো স্থাপত্যকে কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয় গ্রামীণ ফোন আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। এই একটা কারণে এ ফোন কোম্পানিটিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে হয়।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here