সুবিমল
“আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা।”
জেল থেকে এ কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। আমি কোনো বীর সন্ন্যাসীর বীরত্বের কথা শুনিনি। কিন্তু বীর শহীদের বীরত্বের ইতিহাস পড়েছি। যাঁদের নিয়ে গান বা কবিতার সংখ্যা খুবই কম! বীর শহীদের বীরত্ব সংবাদে দেখেছি। শহীদ হলেন ফাদার স্ট্যানিস্লাস স্বামী। এই তো কয়েক মাস আগে পর্যন্ত— কতজন কৃষক শহীদ হয়েছেন তার কোনো হিসেব রেখেছেন কেউ? এর আগেও অনেক শহীদের নাম কেউ মনে রাখেননি। তার আগেও না।
স্বাধীনতা সংগ্রামী দু’জন যুবক মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট ডগলাসকে হত্যা করেন। ধরা পরলেন একজন যুবক, তিনি প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য। নির্মম অত্যাচার সত্ত্বেও প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য তাঁর সঙ্গীর নাম প্রকাশ করেননি। বিচারে তার ফাঁসি হয় ১২ই জানুয়ারি, ১৯৩৩ সালে।
পরের বছর ১৯৩৪ সাল। ১২ই জানুয়ারি শহীদ হলেন সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদার। তাঁদের ওপর চলেছিল অতি নির্মম অত্যাচার। হাতুড়ি দিয়ে তাঁদের দাঁত ভাঙা হয়। তাঁদের শরীরের হারগুলো ভেঙে টুকরো করে দেওয়া হল। কেউ জানতে পেরেছিলেন তাঁরা শহীদ হয়েছিলেন ফাঁসির আগে না পরে? অত্যাচার চলেছিল মৃতদেহের ওপরেও। মৃতদেহের বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন কোথায় যেন ফেলে দেওয়া হল!
“ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো”—
একথা বলতেন অঙ্কের মাস্টারমশাই বিপ্লবী সূর্য সেন।
কোনো বীর সন্ন্যাসীর বীরত্বের কথা শুনিনি। কিন্তু তাঁদের নিয়ে হাজার হাজার গানের ঘ্যানঘ্যানানি আছে। অথচ, বীর শহীদের বীরত্বকে নিয়ে গান বা কবিতা খুবই কম, কিংবা নেইই। শহীদদের নিয়ে কোনো গান বা কবিতা সময় দেয়নি। যেটা নিয়ে একমাত্র একজনই ভাবতে পারেন এবং ভাবাতে পারেন তিনি এই যুগের সঙ্গীত শিল্পী কবীর সুমন।