১৮৬৩ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন শিশুসাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তার বাবা কালীনাথ রায়চৌধুরী ওরফে শ্যামসুন্দর মুন্সী সংস্কৃতে পাণ্ডিত্যের জন্য পরিচিত ছিলেন। উপেন্দ্রকিশোরের পারিবারিক নাম ছিল কামদারঞ্জন। শ্যামসুন্দর মুন্সী তার এক নিকটাত্মীয় ময়মনসিংহের জমিদার হরিকিশোর চৌধুরীর অনুরোধে চার-পাঁচ বছরের কামদারঞ্জনকে দত্তক দেন। হরিকিশোর নিজের নামের সঙ্গে সাদৃশ্য করে এবং বংশের পদবি ঠিক রেখে তার নতুন নামকরণ করেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। উপেন্দ্রকিশোর ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৮৮০ সালে বৃত্তিসহ
এন্ট্রান্স পাস করেন। স্কুলজীবনেই তিনি ছবি আঁকায় বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট থেকে ১৮৮৪ সালে তিনি বিএ পাস করেন। ২৩ বছর বয়সে দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বাংলা শিশুসাহিত্য রচনার পথিকৃৎ তিনি। গল্প, নাটক,
বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ, কবিতা, গান, মনোরম ছবি—সবই তিনি ছোটদের উপহার দিয়েছেন। তার সম্পাদনায় শিশুতোষ পত্রিকা ‘সন্দেশ’ ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয়। স্বরচিত বইগুলোতে নিজের আঁকা ছবি ছিল তার বইয়ের অন্যতম আকর্ষণ। ‘বলরামের দেহত্যাগ’ তার আঁকা বিখ্যাত চিত্র। নানা রঙের হাফটোন ছবি ছাপার প্রযুক্তিতে যে উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, তার পেছনে উপেন্দ্রকিশোরের অবদান রয়েছে। গবেষণা করে তিনি নানা রকম ডায়াফ্রাম, রি-স্ক্রিন ও অ্যাডজাস্টার যন্ত্র নির্মাণ করেন। ডায়োটাইপ ও রে-প্রিন্ট পদ্ধতি তার উদ্ভাবিত। তার উল্লেখযোগ্য বই ‘ছোটদের রামায়ণ’, ‘সেকালের কথা’, ‘ছোটদের মহাভারত’, ‘মহাভারতের গল্প’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’, ‘গল্পমালা’,
‘ছড়া-কবিতা-গান’ প্রভৃতি। ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর ৫২ বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর মারা যান।