ডা. এড্রিক বেকারের সঙ্গে বাংলাদেশের লোকসেবী চিকিৎসকরাও সমান তালে কাজ করতেন। ফাইল ছবি

টাঙ্গাইলের মধুপুরের এড্রিক বেকারের বহুল আলোচিত মানবতার হাসপাতালে বিনা বেতনে দীর্ঘ ৪ বছর সেবা দেন বাংলাদেশেরই একজন ডাক্তার। নাম ডা. রাকিবুল ইসলাম রাকিব। বিস্ময়ের ব্যাপার হল এই স্বদেশী লোকসেবীর নাম কোন মিডিয়া কিংবা ইত্যাদিতে আসে নি। এই বাংলাদেশী লোকসেবীর নাম রয়ে গেছে মিডিয়ার প্রচারের অন্তরালে । বাংলাদেশের লোকসেবী চিকিৎসকরা এভাবেই বার বার বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের প্রাপ্য সম্মান থেকে। এসব তথ্য জানান ডা. নাজমুল । দু:খভরা চিত্তে তিনি জানান,
২০১৫ সালের এড্রিক বেকার মারা যাবার পর ২০১৯ সালে জেসন আসে। মাঝখানে এই ৪ বছর কোন দেশের ডাক্তার গণ চালিয়েছেন ? সেখানে বিনা বেতনে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন ডা. রাকিবুল ইসলাম রাকিব । লিখতে গেলে কয়েকশ পাতা হয়ে যাবে।

ডা. নাজমুলের লেখার বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান, ডা. বেলায়েত হোনে ঢালী।
তার সৌজন্যে পাওয়া ডা. নাজমুলের লেখা এখানে প্রকাশ হল।
বাংলাদেশি কোন ডাক্তার দায়িত্ব নিবে কিভাবে?

ডা. এড্রিক বেকার তার জীবদ্দশায় এর দায়িত্ব ডা. জেসন মরগানকে দিয়ে যায় । ডা. জেসনের আসার কথা ছিল ২০১৫ সালে । সেসময় বাংলাদেশে বেশ কিছু বিদেশি নাগরিক হত্যা হয়। তাই তার আসা বিলম্ব হয় । আমি থাকা অবস্থায় নিউজিল্যান্ডের একজন নার্স চলে যান । পরিবার থেকে তাদের চাপ দিচ্ছিল যে বাংলাদেশে তোমাদের গলা কেটে মেরে ফেলে হবে । মধুপুরের সেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিদেশিদের বাংলাদেশে এসে সেবা মুলক কাজের আমার পোস্ট দেখে ইত্তেফাক পত্রিকার বারেক কায়সার ভাই তাদের নিয়ে একটা প্রতিবেদন করতে চায়। আমাকে ফোন করেন বারেক ভাই । এর জন্য তাদের অনুমতি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি । নিউজিল্যান্ডের সেই নার্স দম্পতির অনুমতি চাইতে গেলে তাদের মধ্যে একটা ভীতি দেখতে পাই এবং সেই রাতের মধ্যেই তারা ( নিউজিল্যান্ডের নার্স) আমাকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করে দেয় । একদিনেই ফ্রেন্ড, একদিনেই আনফ্রেন্ড। ২০১৫ সালের এড্রিক বেকার মারা যাবার পর ২০১৯ সালে জেসন আসে। মাঝখানে এই ৪ বছর কোন দেশের ডাক্তার গণ চালিয়েছেন ? সেখানে বিনা বেতনে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন ডা. রাকিবুর ইসলাম রাকিব ভাই । লিখতে গেলে কয়েকশ পাতা হয়ে যাবে।

ইত্যাদি যা দেখিয়েছে তা অতিরঞ্জিত । দেশকে এভাবে ছোট না করলেও পারত ।

_________
ডা. মু. রিয়াদ ভূঁঞা রাজীব এক লেখায় জানান আরও কিছু তথ্য। তিনি জানান,
২০১৬ সালের মে মাসে আমি কাইলাকুড়ি গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর পরিবেশ। বাংলাদেশে মাটির ঘরের এরকম হাসপাতাল আর আছে কিনা সন্দেহ আছে। সেখানে যারা কাজ করে মোটামুটি তাদের সবার সাথেই আমার দেখা হয়। মূলত ডায়াবেটিস সহ আরো কিছু অন্য রোগের অল্পসংখ্যক রোগীদের সেখানে রেখে ট্রিটমেন্ট করানোর ব্যবস্থা আাছে। আগেই বলে রাখি ইত্যাদি বা অন্য মিডিয়ার মাধ্যমে ঐ হাসপাতালের নাম আমি জানিনি। কৌতুহল বা জানার আগ্রহ নিয়ে ওখানে আমি যাইনি, গিয়েছিলাম ১১ বছর বয়সী ডায়াবেটিসের রোগী নিয়ে। ওখানে মূলত গরীব রোগীদের চিকিৎসা করা হয়।

সপ্তাহে একবার গণস্বাস্থ্য মেডিকেলের দুজন ডাক্তার সেখানে আসে। বাকী বা পুরো সময়টা মেডিক্যাল এসিস্টেন্ট দিয়ে সব কাজ চালানো হয়। আজ দেখলাম এমেরিকান ডাক্তার দম্পতি হাসপাতাল চালাচ্ছেন।

২০১৩ সালে ইত্যাদির প্রচারেরও আগে ডা. মোস্তাফিজ নামের একটা ভদ্রলোক প্রথম আলোর মাধ্যমে জানতে পেরে আগ্রহী হয়ে ডা. এড্রিক বেকারের সাথে ঢাকায় দেখা করেন। তিনি তখনো ডিপ্লোমা প্যারা মেডিকসরা দ্বারা ঐ হাসপাতাল চালাচ্ছিলেন, কিন্তু এড্রিক সাহেব কোন গ্রাজুয়েট ডাক্তার কে দায়িত্ব দিতে চান নাই।

আরেক ডা. মো. শাহ আলম। সৌদি আরবের মদিনা হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ছিলেন। ভালোবেসে দেশের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য বিলাসী জীবন ছেড়ে ফিরে আসেন জন্মভূমি বাংলাদেশে। চট্টগ্রামের কুমিরাতে নিজ এলাকায় চালু করেন বেবী কেয়ার নামে স্বল্প খরচের একটি হাসপাতাল। নিজ এলাকায় হাসপাতাল খুললেও প্রতিদিন নগরীর চান্দগাঁও বাসা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এ হাসপাতালের দেখভাল করতেন। কিছুদিন আগে এই ভদ্রলোক খুন হন। তখন কেউ লজ্জায় ভাসে নি।

আরেকজন ডাক্তার অধ্যাপক মনসুর খলীল। জীবনের পুরো সময়টা মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ও দরিদ্র মানুষের পেছনে দিয়ে গেলেন। সরকারি চাকুরী করতেন। মারা যাওয়ার পর ব্যাংকে পাওয়া গিয়েছিল মাত্র দু হাজার টাকা। এই খবর কোন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল বলেও আমি শুনিনি । তখনো কেউ লজ্জায় ভাসে নি।

কিন্তু তবু আজ বাংলাদেশের ডাক্তারদের কারনে ফেসবুকে পুরো দেশ লজ্জায় ভেসে যাচ্ছে।

সাদা চামড়া বা অবাঙালি না হলে আমাদের আবেগটা ঠিক আসে না!

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here