নিজস্ব প্রতিবেদক :
বোয়ালখালীতে হঠাৎ বেড়ে গেছে চুরির ঘটনা। গত এক মাসে ঘটেছে বেশ কয়েকটি দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা। একের পর এক চুরি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

এর জন্য সড়কের বেহাল দশাকে দায়ী করছেন বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আবদুল করিম। তিনি বৈরী আবহাওয়া ও উপজেলার প্রতিটি সড়কের নাজুক পরিস্থিতির কারণে পুলিশ রাতে টহলে বের হয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত যেতে পারছে না বলে জানিয়েছেন।

গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের আকুবদণ্ডী গ্রামের জমিলার বাড়ী মো. ইউনুসের ঘরে হানা দেয় চোরের দল।

চোরের দল ঘরে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় পরিবারের সদস্যরা জেগে গেলে ২জনকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মুহাম্মদ মামুন উদ্দিন।

তিনি জানান, ৪-৫ জনের সংঘবদ্ধ চোরের দল ইউনুসের ঘরে চুরির উদ্দেশ্য হানা দেয়। ঘরের ২ জন জন প্রবেশ করলে পরিবারের সদস্যরা তাদের ধরে ফেলে। এসময় চোরের দল ইউনুসের স্ত্রী ও মো. ইসমাঈলকে দা দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। তবে ঘরের কোনো মালামাল নিয়ে যেতে পারেনি। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। চোরের দল একটি রাম দা ও একটি গেঞ্জি ফেলে গেছে। এ বিষয়ে বোয়ালখালী থানায় অভিযোগ দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।

বোয়ালখালী পৌরসভার পূর্ব গোমদণ্ডী দত্তপাড়ায় মো. মাহফুজের ঘরেরও ঘটেছে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা। খোয়া গেছে মূল্যবান সামগ্রী।

বৃহস্পতিবার মাহফুজের মা নগরীর বাসা থেকে চিকিৎসা শেষে ঘরে এসে এঘটনা দেখতে পান। তিনি চিকিৎসার জন্য ঘরে তালাবদ্ধ করে মেয়ের বাসায় গিয়েছিলেন।

তিনি জানান, চোরের দল ঘরের আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার, মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে। ঘরের প্রতিটি কক্ষের মালামাল তছনছ করে করে ফেলেছে। চোরের দল একটি কালো রঙের শার্ট ফেলে গেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় কমিশনার সুনীল চন্দ্র ঘোষ ও বোয়ালখালী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

এর দুই সপ্তাহ আগে উপজেলার মধ্যম শাকপুরা গ্রামের নারায়ণ চৌধুরীর ঘরের ভেন্টিলেটর ভেঙে দুর্ধর্ষ চুরি ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের সদস্যরা সকালে ঘুম থেকে জেগে আলমিরা খোলা ও জিনিসপত্র এলোমেলো দেখতে পান।

নারায়ণ চৌধুরীর স্ত্রী আন্না চৌধুরী বলেন, ঘরের একটি কক্ষের ভেন্টিলেটর ভেঙে চোরের দল প্রবেশ করলেও কেউ টের পায়নি। চোরের দল আলমারিতে রক্ষিত স্বর্ণালংকার, কাপড় চোপড় নিয়ে গেছে। তবে মেয়ের সাজগোজের ইমিটেশনের গহনা ফেলে গেছে বাড়ির পেছনের জমিতে।

পৌর সদরের সর্দারপাড়ার রিকশা চালক ঝুমুর দাস জানান, গত দুইদিন আগে ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে পৌরসভার মোল্লা পুকুর পাড় এলাকায় একদল দুষ্কৃতকারী সর্দার পাড়ার এক বৃদ্ধ মহিলাকে লাঞ্ছিত করে সড়ক থেকে জমিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়। সম্ভবত দুষ্কৃতকারীরা ছিনতাইয়ের লক্ষ্যে ওই এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলো। স্ট্রোকজনিত কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে ওই মহিলা ভোরে হাঁটতে বের হওয়ায় তাদের কবলে পড়েন।

এছাড়া কানুনগোপাড়া এলাকার একটি মোবাইল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২শত মোবাইল দোকানের তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে গত সপ্তাহে। এ নিয়েও থানা অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানে স্বত্বাধিকারী। এরপর দিন ওই এলাকার আরো একটি দোকানের মালমাল চুরি হয়েছিলো বলে জানা গেছে।

একের পর এক চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পুলিশি টহল জোরদারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এব্যাপারে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আবদুল করিম বলেন, ‘একে তো বৃষ্টি তার ওপর উপজেলার একটি সড়কও ভালো নেই। পুলিশ রাতে টহলে ঠিক মতো মুভ করতে পারছে না। টহল পুলিশ যদি রাতে কড়লডেঙ্গা থাকে সেখান থেকে শাকপুরা পৌঁছাতে সকাল হয়ে যাবে। এ অবস্থায় এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।’

পুলিশি টহল ঢিমেতালে হওয়ায় ও অপরাধীদের আইনের আওতায় না আনায় একের পর এক অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here