পাহাড়তলীকে করোনার ক্লাস্টার চিহ্নিত করে সংবাদ প্রকাশের এখনও ২৪ ঘণ্টা পার হয়নি। এর আগে সংবাদ এলো ওই থানার সাগারিকা এলাকাতেই গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক নারীসহ চারজন। এছাড়া করোনায় বড়ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা এলাকার আলী নগরের ইছামতি গ্রামে। ওই গ্রামের পাঁচ বাসিন্দা আজ করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)-এ নতুন ১১৮ নমুনা পরীক্ষায় আরও ১২ জনকে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১১ জনই চট্টগ্রামের, অপরজন নোয়াখালীর বাসিন্দা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির।

তিনি বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার বিআইটিআইডিতে আরও ১১৮টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন আরও ১২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও অপরজন নোয়াখালীর। চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানা সাগরিকার ৪ জন, সাতকানিয়ার ইছামতি গ্রামের ৫ জন, বোয়ালখালী উপজেলার ১ জন, কাতালগঞ্জ এলাকার ১ জন’।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ছিল সাতকানিয়ায়। বর্তমানে উপজেলাটির বাসিন্দারা করোনা আতঙ্কে দিন পার করছেন। সোমবার (১৩ এপ্রিল) করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে উপজেলার ইউএনও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ৮ জনের। তবে এদের মধ্যে কার কার করোনা শনাক্ত হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

ট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ ওসামনীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও চিকিৎসা সেবা সংশ্লিষ্টরা কেউ করোনায় আক্রান্ত কিনা- তা নিশ্চিত হতে সোমবার (১৩ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-ই-আলমসহ ৮ কর্মকর্তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) এ পাঠানো হয়’।

সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ইছামতি গ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি চট্টগ্রাম নগরের ফকিরহাটে ব্যবসা করতেন। ১৭ দিন আগে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি নিজ বাড়ি সাতকানিয়ার ইছামতি নগরের ইছামতি গ্রামে চলে যান। পরে সেখান অবস্থার অবনতি হলে ১ এপ্রিল রাতে উপজেলার কেরাণীহাটে বেসরকারি আশ শেফা হাসপাতালে ভর্তি হন।

২ এপ্রিল করোনা সন্দেহে রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) রেফার করেন চিকিৎসক। পরে চমেকে আনার পথেই ওইদিনই রোগীর মৃত্যু হয়। পরে শনিবার নমুনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে।

এ ঘটনায় ওই মরদেহ যারা গোসল করিয়েছেন, কবর দিয়েছেন, তাকে ধরে কান্নাকাটি করেছেন, দাফন কাজে অংশ নিয়েছেন, জানাজার ইমাম ও জানাজায় উপস্থিত লোকজন সবার তালিকা করা হয়। তালিকায় পশ্চিম ঢেমশা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৯০টি পরিবারের তিন হাজার ৭১২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু চারদিনের ব্যবধানেই সেখানে আরও পাঁচ করোনা রোগী পাওয়া গেল।

এদিকে গত সাতদিনে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জনই নগরের পাহাড়তলী থানা এলাকা আশপাশের বাসিন্দা। অবস্থান যাচাই করে দেখা গেছে, এদের দশজনই নগরের এ কারণে চীনের উহান ও বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের মতোই বন্দরনগরীর প্রবেশমুখের ওই এলাকাটিকে চট্টগ্রামে করোনার ‘ক্লাস্টার জোন’ মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, নগর ও জেলায় শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার ১৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি এ নতুন ১১৮ নমুনা পরীক্ষায় আরও ১২ জনকে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে ১১ জনই চট্টগ্রামের চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া দুই করোনা রোগীর একজন নগরের পাহাড়তলী থানার সড়াইপাড়া ও অপরজন ওই থানার কাট্টলী এলাকার এলাকার বাসিন্দা। এদের মধ্যে পাহাড়তলীর সাগরিকার বাসিন্দা ৪ জন। এর আগে সাগরিকা ও আশপাশের এলাকায় ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

বুধবার (৭ এপ্রিল) চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হন তিনজন। তাদের একজন ছিলেন পাহাড়তলী থানার সাগরিকা এলাকার বাসিন্দা। বাকি দুইজনের একজন পাহাড়লীর উত্তর পাশের উপজেলা সীতাকুণ্ড ও দক্ষিণ পাশের থানা হালিশহর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। পরে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া তিনজনের মধ্যে একজন পাহাড়তলী থানার সাগরিকা বাসিন্দা ও অপরজন উত্তর কাট্টলী এলাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মচারী বলে জানায় চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ।

শুক্রবার (১০ এপ্রিল) বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় আরও দুইজনকে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়, তাদের একজন ছিলেন পাহাড়তলীর পাশের থানা আকবর শাহ থানার ইস্পাহানী গেট ঝোলারহাট কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা। পরে শনিবার (১১ এপ্রিল) চট্টগ্রামে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট এলাকার দুলালাবাদ এলাকার বাসিন্দা। ৫০ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি কয়েক দিন আগে স্থানীয় কাঁচাবাজারে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রোববার (১২ এপ্রিল) চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ পাঁচজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এদিন পাহাড়লীর পাশের উপজেলা সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় আরও এক করোনা রোগী শনাক্ত হন। অর্থাৎ, ৭ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল এই ৭ দিনে দশজন নারী-পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যারা নগরের পাহাড়তলী ও আশপাশের এলাকায় বসবাস করেন। তাদের মধ্যে এক নারী আজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমরাও আপনাদের মতোই হিসেব করছি। মূলত শহরের প্রবেশপথ ও আশপাশের এলাকায় করোনা আক্রান্তের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। আশঙ্কা করছি এটি চট্টগ্রামে করোনার ক্লাস্টার হয়ে উঠছে। আমাদের কাছে এসব তথ্য ও ম্যাপ আছে, দু এক দিনের মধ্যেই হয়তো এটিকে ক্লাস্টার হিসেবে ঘোষণা করতে হবে’।

সাগরিকা এলাকায় করোনা সংক্রমণে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘পাহাড়তলী-কাট্টলী-সাগরিকা এলাকায় করোনা ক্লাস্টার গ্রো করছে বলে ধারণা করছি। তবে সেটা আরও কয়েক দিন দেখতে হবে। যদি এটা হয়ও এর প্রভাব জানতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।

যে সবজি বিক্রেতা আক্রান্ত তিনি ভ্যানগাড়িতে করে সবজি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিলেন। তিনি কিভাবে আক্রান্ত হলেন তার কোনো লিংক পাওয়া যায়নি। আমাদের ধারণা, ওই এলাকায় (পাহাড়তলি-কাট্টলী) মানুষের জটলা থেকে ট্রান্সমিশন হয়ে থাকতে পারে। আরো তিন দিন দেখে প্রয়োজনে ওই এলাকা কর্ডন করে বন্ধ করে দেওয়া হবে’।

খবর জাগো নিউজের

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here