টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। ইতোমধ্যে মাঠের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। রবিবার আখেরি মোনাজের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের অনুসারীরা অংশ নেবেন।
কনকনে শীত উপেক্ষা করে গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে ময়দানে আসতে শুরু করছেন মুসল্লিরা। যার যার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন তারা। বিভিন্ন যানবাহনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে দলে দলে মুসল্লিরা অবস্থান নিচ্ছেন ময়দানে। রান্না-বান্নার জিনিসপত্র রয়েছে তাদের সঙ্গে। দ্বিতীয় পর্বেও দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিশ্ব মাওলানাদের বয়ান শুনতে ও ইবাদত করতে এখানে জড়ো হচ্ছেন। তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের সমন্বয়কারী হাজি মনির হোসেন জানান, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের কার্যক্রম চালানোর জন্য ময়দানের দায়িত্বও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। স্থানীয় প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও তাবলিগের সাথিরা ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানের ভেতর এবং বাইরের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনে নেতৃত্বে রয়েছেন সা’দপন্থি মুরুব্বি ওয়াসেকুল ইসলাম ও শাহাবউদ্দিন নাসিম। তিন দিনের এ বিশ্ব ইজতেমায় আমল, আখলাক, দুনিয়া ও আখেরাতে সুখ-শান্তির লক্ষ্যে দিন-রাত বয়ান চলবে প্রথম পর্বের মতোই।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকে থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট হাজার সদস্য। পুরো ইজতেমা ময়দান জুড়ে সিসিটিভি, ওয়াচ টাওয়ার ও মেটাল ডিটেক্টরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নিরাপত্তা বলয় থাকবে ইজতেমা মাঠ ও মাঠের বাইরে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার রাতে মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ইজতেমায় আসা লোকজনের সুবিধার জন্য ১৩টি উৎপাদক নলকূপের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি গ্যালন খাবার, ওজু ও গোসলের পানি সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া আট হাজারের বেশি লোক একসঙ্গে টয়লেট ব্যবহার করতে পারবে।এদিকে ইজতেমায় আগতদের সুবিধার জন্য ময়দানের পাশে স্থাপন করা হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। এসব মেডিকেল ক্যাম্প থেকে ইজতেমায় আগত মুসুল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এর পর শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বাদ ফজর আম বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশিদ।
পরে বাংলায় বয়ান তরজমা করেন বাংলাদেশি মাওলানা আবদুল মতিন। রবিবার (১২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। উল্লেখ্য, গত চার বছর ধরে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩২ জেলা করে দুই পর্বে তবলিগ জামাতের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।
গত বছর ইজতেমার একক নিয়ন্ত্রণ নিতে ইজতেমা ময়দানে দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কয়েকজন মুসল্লি হতাহত হন। এর পর থেকে যোবায়েরপন্থি এবং সা’দপন্থি নামে তাবলিগ জামাতের ইজতেমায় দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়। ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর এই ময়দানে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।