কল্পনা দত্ত
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ২৭ জুলাই ১৯১৩ শ্রীপুর, বোয়ালখালী উপজেলা, চট্টগ্রাম, অধুনাবাংলাদেশ |
মৃত্যু | ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ (৮১বছর) নয়া দিল্লী, ভারত |
জাতীয়তা | বাঙালি, ভারতীয় |
রাজনৈতিকদল | ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি |
জীবিকা | স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিপ্লবী |
ধর্ম | হিন্দু |
কল্পনা দত্ত (জন্ম: ২৭ জুলাই, ১৯১৩ – মৃত্যু: ৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৫) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব[১]। তিনি চট্টগ্রাম বিপ্লবের একজন অন্যতম বিপ্লবী নেত্রী।অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলা -এর শ্রীপুর গ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুনকলেজ– এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন।পুর্নেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্য সেনের সাথেপরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি,চট্টগ্রাম শাখা-য় যোগদান করেন। তার বিপ্লবীমনভাবের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘অগ্নিকন্যা’ বলেছেন।
শিক্ষা জীবন
চট্টগ্রাম থেকে ১৯২৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর কল্পনা দত্ত কলকাতা আসেন এবং বেথুন কলেজ-এবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বেথুন কলেজে পড়তে পড়তে তিনি নানা ধরনের বিপ্লবী কর্মকান্ডে জরিয়ে পরেন।শহীদ ক্ষুদিরাম এবং বিপ্লবী কানাই লাল দত্তের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বেথুন কলেজ-এ গড়ে ওঠা ছাত্রী সংঘ-এ যোগদান করেন।
চট্টগ্রামে প্রত্যাবর্তন
১৯৩০ সালে কল্পনা দত্ত আবার চট্টগ্রামে ফিরে যান। এই সময় পুর্নেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে তিনি মাস্টার দা সূর্যসেনের সাথে পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা-য় যোগদান করেন। তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নেতৃবৃন্দ গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখ বিচারাধীনবন্দী। সেই সময় মহিলাদের বিপ্লবী দলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু মাস্টার দা এই সমস্তনিয়ম নীতি শিথিল করে কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার-কে তাঁর দলে গ্রহন করেন।
বিপ্লবী কল্পনা
কলকাতা থেকে ফেরার সময় তিনি গোপনে কিছু বিষ্ফোরক নিয়ে আসেন, এছাড়াও গোপনে গান কটনও তৈরীকরেছিলেন। এই সময় বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের বিচার ও সাজা রুখতে তিনি বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।তিনি কোর্ট এবং জেলে ডিনামাইট দ্বারা বিষ্ফোরনের পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ পালাতে সক্ষম হন।
কিন্তু তাঁর পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে তাঁর বিপ্লবী কর্মকান্ডের উপর কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে। যাই হোক এই সময় তিনি প্রায়ই মাস্টার দার সাথে তাঁর গ্রামে ঘুরে গ্রামের মানুষের সুখ দুঃখের খবর নিতেন। এরই সাথেসাথে তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রত্যহ গুলি চালনার প্রশিক্ষন নিতেন।
ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ
১৯৩১ সালে সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে চট্টগ্রামের ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্বদেন। নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে পুরূষের ছদ্মবেশে একটি সমীক্ষা করতে গিয়ে তিনি ধরা পরেন ওগ্রেফতার হন। জেলে বসে তিনি অপারেশন পাহারতলী এবং বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মহত্যার খবরশোনেন।
গ্রেফতার ও নির্বাসন
জামিনে মুক্তি পেয়ে মাস্টার দার নির্দেশে তিনি কিছু দিন আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৩৩ সালের ১৭ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাদের গোপন ডেরা ঘিরে ফেলে। কল্পনা এবং মনিন্দ্র দত্ত পালাতে সক্ষম হলেও মাস্টার দাবন্দী হন। কিছুদিন পর কল্পনা এবং তাঁর কিছু সহযোদ্ধা পুলিশের হাতে ধরা পরেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় মাস্টার দা ও তারকেশ্বর দস্তিদারকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। কল্পনা দত্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিতহন।
পরবর্তী জীবন
১৯৩৯ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তারপর তিনিভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান।১৯৪৩ সালে C.P.I নেতাপি.সি.যোশীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। এর পর তিনি চট্টগ্রামে ফিরে যান এবং দলের মহিলা ও কৃষক সংগঠনকেচাঙ্গা করেন। ১৯৪৬ সালে C.P.I প্রার্থী হয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন।কিন্তু জয়ী হতে পারেন নি। স্বাধীনতার পর তিনি ভারতে চলে আসেন। ১৯৯৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারী নয়া দিল্লী তেতিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
বলিউডে, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন নিয়ে খেলে হাম জি জান সে শীর্ষক একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে, যারঅন্যতম প্রধান চরিত্র কল্পনা দত্ত। এই ছবিতে তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী দীপিকাপাডুকোন।