অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন:
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গমাতা হিসেবে যিনি আমাদের শ্রদ্ধার আসনে আসিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী। জীবন মরণের সাথী। জননেত্রী শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা, শেখ রাসেলের প্রিয় মা। সবকিছু ছাপিয়ে বড় পরিচয় তিনি আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে নির্ভরতার সারথি। বাংলাদেশ ও বাঙালির অতি আপনজন।
১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট জন্ম। এক আগস্টে জন্ম অন্য এক আগস্টেই প্রয়াণ। জন্মের আবহটাও যেন বেদনায় নীল।
লেখার শুরুতেই আমি পাঠকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে বাঙালি জাতির ইতিহাস বিনির্মাণে বেগম মুজিবের অবদান লেখার মতো নিজস্ব স্মৃতি ও যোগ্যতা কোনোটাই আমার নেই। ইতিহাসের একজন পাঠক হিসেবে ৯০তম জন্মদিনের লগ্নে বাংলা ও বাঙালির অকৃত্রিম বন্ধু, সুহৃদ, দুঃসময়ের সহযাত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আমার এ লেখা। আমাদের প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মীদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কাজ করার যেমন সুযোগ হয়নি; তেমনি সুযোগ হয়নি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের মতো আত্মত্যাগী মহীয়সী নারীকে কাছ থেকে দেখার। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানার স্মৃতিচারণ, বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের কাজ থেকেই এ লেখার সকল উপাদান আহরণ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক এক লেখায় একজন নারী কীভাবে সংসার, স্বামী-সন্তান নিয়ে আত্মসর্বস্ব না থেকে বাঙালির প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু হতে অসামান্য অবদার রেখেছেন, তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু- কন্যা সেই লেখার শেষদিকে বলেছেন, “যে ঘটনা ঘটেছে, যে কাহিনি পর্দার আড়ালে রয়েছে তার কতটুকু আর লিখে প্রকাশ করা যায়। লেখার মধ্য দিয়ে কতটুকুই বা বোঝা যায়? এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের কাছে একটি আবেদন রইলÑ তারা যেন একবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এই না-বলা ইতিহাস, না-জানা কথা।”
জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জাতিকে সেই দায়িত্ব থেকে অনেকটাই মুক্তি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের মাধ্যমে। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে বেগম মুজিবের প্রভাব ও অবদান বর্তমান প্রজন্ম নতুন করে জানতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা আত্মজীবনী যতটুকু পাঠকের হাতে পৌঁছেছে সেইটুকু বিশ্লেষণ করলেই মহিয়সী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে অনুধাবন করা যাবে। খুঁজে পাওয়া যাবে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির অসংখ্য নিদর্শন।
মানুষের ভালোবাসার কাঙ্গাল ছিলেন বঙ্গবন্ধু। নেতা-কর্মীদের প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর কর্মীবান্ধব গুণাবলির শতভাগই আমরা বেগম মুজিবের মধ্যে দেখতে পাই। দলীয় কর্মীদের সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন তিনি। হোক সে রাজনৈতিক কর্মী অথবা সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষ, তার কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে কেউ কখনও খালি হাতে ফিরে যেত না।
বঙ্গবন্ধুর ছাত্র-রাজনীতি থেকে শুরু করে শাহাদাতবরণ পর্যন্ত ছায়ার মতো সকল রাজনৈতিক কর্মকা-ে পাশে ছিলেন বেগম মুজিব। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময় দেশ গড়ার সংগ্রামে বেগম মুজিব অনেক কষ্ট করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ছাত্র-রাজনীতি করার সময়ও বেগম মুজিব তার পিতৃসম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়মিত সহযোগিতা করতেন। রাজনৈতিক কাজে টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতার এই মনোভাব তার আমৃত্যু ছিল। দেশমাতৃকার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি তার গহনা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।
আওয়ামী লীগের এক প্রকাশনায় বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ রেহানা স্মৃতিচারণমূলক লেখায় উল্লেখ করেছেন, “আব্বার রাজনৈতিক কর্মকা-ের প্রতি মায়ের অসম্ভব রকম সহযোগিতা ছিল… আমার মায়ের ধৈর্য, নীতিবোধ, পারিবারিক সংস্কার, ভালোবাসা ও মমত্ববোধ এক ভিন্ন মাত্রা। যার কোনো তুলনা খুঁজে পাওয়া ভার। মহান ব্যক্তিত্বদের পেছনে এমনিভাবে মহীয়সীদের অবদান রয়ে যায়।”
আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস জেলের অভ্যন্তরে কাটাতে হয়েছে। এ-সময় আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মী, বিশেষ করে ছাত্রনেতাদের নির্ভরতার কেন্দ্র বা আশ্রয়স্থল ছিলেন বেগম মুজিব। রাজনৈতিক কর্মীদের তিনি মনে-প্রাণে ভালোবাসতেন। পরম মমতার বন্ধনে আবদ্ধ করতেন। বিশিষ্ট কলামিস্ট ভাষাসৈনিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বেগম মুজিব সম্পর্কে লিখেছেনÑ “মাথায় গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে বহুদিনের আত্মগোপনকারী ছাত্রনেতা কিংবা রাজনৈতিক কর্মী অভুক্ত অস্নাত অবস্থায় মাঝরাতে এসে ঢুকেছেন বত্রিশের বাড়িতে, তাকে সেই রাতে নিজের হাতে রেঁধে মায়ের স্নেহে, বোনের মমতায় পাশে বসে খাওয়াচ্ছেন বেগম মুজিব। এই দৃশ্য একবার নয় কতবার দেখেছি।”
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের অনেক জটিল পরিস্থিতিতে বেগম মুজিব সৎ পরামর্শ দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করেছেন। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময় বেগম মুজিব নিজে অসুস্থ থাকা অবস্থায়ও স্বামীকে দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকায় যেতে বারণ করেন নি। সেই সময় বেগম মুজিব স্বামীকে চিঠিতে লিখেছেনÑ “আপনি শুধু আমার স্বামী হবার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্য জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিন্তমনে সেই কাজে যান। আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আল্লাহর উপর আমার ভার ছেড়ে দিন।” কতইবা বয়স ছিল বেগম মুজিবের। ১৯৩০ সালে জন্মের হিসাবে বড়জোর ১৬ বছর। এই বয়সের একজন তরুণী নিজের সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে দেশের প্রয়োজনকেই সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। দেশের জন্য ত্যাগের এই উদাহরণ বর্তমান সময়ে কল্পনাতীত।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬-দফা আন্দোলনের কঠিন সময়ও বেগম মুজিব শাসকগোষ্ঠীর রক্ষচক্ষু ও সকল প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে সাহসী ও দৃঢ়চেতা মনোভাব নিয়ে স্বামীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। দলের তরুণ কর্মী, ছাত্র, যুবকদের সাথে বেগম মুজিব সব সময়ই যোগাযোগ রাখতেন। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়াতেন। আন্দোলনের ক্ষেত্রে তরুণ যুবকদের আপসহীন মনোভাব বেগম মুজিব ভালোভাবে জানতেন বলেই স্বামীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা দিতেন। বেগম মুজিব বিশ্বাস করতেন আন্দোলন প্রশ্নে বয়স্কদের মধ্যে কিছুটা দোদুল্যমানতা থাকতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের হাজার হাজার তরুণ-যুবা স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ থেকে কখনোই পিছপা হবে না।
ঊনসত্তরের অগ্নিগর্ভা দিনগুলোতে বেগম মুজিবের সময়োচিত সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিব তখন জেলে। দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেনারেল আইয়ুব খান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান। শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে প্রস্তাবিত গোলটেবিলে যাবার প্রস্তাব করা হলো। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি অনেকেই প্রস্তাবে সম্মত হলো। এ-সময় গণদাবি ছিল ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের। বেগম মুজিব প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে ছিলেন। প্যারোলে মুক্তিতে রাজি হলে সম্পর্ক ছিন্নের কঠিন বার্তাও ক্যান্টনমেন্টে বন্দী মুজিবের কাছে পাঠিয়ে দেন। স্বামীর মতোই তিনিও ছিলেন নীতির প্রশ্নে আপসহীন। রাজপথে প্রচ- আন্দোলনের চাপেই স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
শিক্ষাবিদ ড. নীলিমা ইব্রাহিম যথার্থই বলেছেন, “বাংলার জনগণের চাওয়া-পাওয়া ও বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত ছিলেন বলেই তিনি তার উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিতে তার কর্মকৌশল ও কর্মপ্রক্রিয়া সহজেই নির্ধারণ ও বলে দিতে পারতেন।”
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের অগ্নিঝরা ভাষণের প্রেরণাদাত্রী ছিলেন বেগম মুজিব। তিনি তার স্বামী বঙ্গবন্ধু মুজিবকে মন ও বিবেকের ওপর ভর করে বক্তৃতা করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে বেগম মুজিবের মতো প্রজ্ঞাবান নারী থাকার কারণেই হয়তো “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” নামক মহাকাব্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বেগম মুজিবের স্মরণশক্তি ছিলে অত্যন্ত প্রখর। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তিনি সঠিকভাবে মনে রাখতে পারতেন। এ-কারণে বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিবকে তার ‘সারাজীবনের জীবন্ত ডায়েরি’ বলতেন। বন্দী থাকার সময় জেলখানা থেকে বঙ্গবন্ধুর সকল নির্দেশনা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কাছে তিনি নিয়ে আসতেন। আবার আন্দোলনের সকল ঘটনা জেলগেটে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ জেলজীবনে নেতা-কর্মীদের সাথে সেতুবন্ধন ছিলেন বেগম মুজিব। যে সংগঠন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণ করেছে সেই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, যা হয়তো ইতিহাসে অনুল্লেখই থাকবে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাসহ সকল নীতি-নির্ধারণী বৈঠক ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতেই হতো। বেগম মুজিব কখনোই এটাকে ঝামেলা মনে করেন নি। বরং আনন্দচিত্তে নিজ হাতে রান্না করে সকলের খাবার পরিবেশন করতেন। কর্তব্যনিষ্ঠা, দূরদর্শিতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের অসামান্য গুণাবলির জন্য বেগম মুজিবের নাম বাঙালি হৃদয় থেকে কেউ কখনও মুছে ফেলতে পারবে না। বাঙালির ইতিহাসের ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন তিনি।
বেগম মুজিবের যত্নশীল অতিথি আপ্যায়নের কথা বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. মশিউর রহমানের এক লেখায় তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। পাঠকের জ্ঞাতার্থে ড. মশিউর রহমানের জবানীতে তা উল্লেখ করছি, “বেগম মুজিবের সাথে টুঙ্গিপাড়ায় গেলে বিশিষ্ট অতিথির আপ্যায়ন পাওয়া ছিল সাধারণ নিয়ম। সময়মতো খাওয়া হয়েছে কি না, খাওয়া ঠিক ছিল কি না, তিনি তার খবর নিতেন। আমি আমার এক বিব্রতকর অভিজ্ঞতার কথা বলছি। বঙ্গবন্ধু তখন বাইরে। বঙ্গবন্ধুর বাবার শরীর খারাপ। বেগম মুজিব বাড়িতে গেলেন। আমি যাবার ব্যবস্থা তদারকির জন্য সাথে। খাবারের সময় নিজে এলেন, হাতে পাখা।… আমি কয়েকবার জানাই আমার খাবার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, অন্যরা দেখাশোনা করছে, তার থাকার দরকার নাই। খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বসে থাকলেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর কর্মকর্তা নই, তার বাড়ির অতিথি।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের রক্তের উত্তরাধিকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা। যিনি আজ চতুর্থবারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পিতামাতার মতো সহজ সারল্যে ভরা তার জীবনাচার। বঙ্গবন্ধু দলীয় নেতা-কর্মীদের তথা দেশের মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে ছিল তার নিবিড় সম্পর্ক। এ মহৎগুণের কারণে তিনি সকলের প্রিয় ‘মুজিব ভাই’ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ হতে পেরেছেন। বেগম মুজিবও ছিলেন নেতা-কর্মীদের পরম আপনজন। পিতামাতার কাছ থেকে অর্জিত দেশসেবার অসামান্য গুণাবলির কারণেই বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের অতিপ্রিয় ‘নেত্রী’ বা ‘আপা’। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের মতো মহীয়সী মায়ের রক্ত শেখ হাসিনার ধমনিতে প্রবাহিত বলেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল শেখ হাসিনা। সকল দুঃখ-কষ্ট-বেদনার মাঝে পিতামাতার ঐশ্বরিক অভয়বাণীই শেখ হাসিনার এগিয়ে চলার অবলম্বন।
বেগম মুজিবকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটি সকলেরই পাঠ করা উচিত। গ্রন্থ দুটির সূত্র ধরে গবেষণা করলে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য জানা যাবে, যা আমাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে, জাতিকে ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করবে।
জন্মদিনের এই শুভক্ষণে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সৌজন্যেঃ উত্তরণ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুখপত্র)