নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বোয়ালখালীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। এসময় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানান, ‘এলাকায় মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একইসাথে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, ডাকাতি, যানবাহনে টোকেন বাণিজ্য ও বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বখাটেদের উৎপাত। এতে এলাকাবাসীর শান্তি নষ্ট হচ্ছে’।
গত ১৭ আগস্ট সকালে করলডেঙ্গা এলাকায় নিজ বাড়ির কাছে পুকুর পাড় থেকে আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার হারাধন চৌধুরীর (৫৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয়দের দাবি, হারাধন চৌধুরী মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। রাতে তিনি বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। সকালে পুকুর পাড়ে মরদেহ পাওয়া যায়। একই দাবি করেন তার মেয়ে পুষ্পিতা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক মামলার কারণে বাবা প্রায় সময়ই চিন্তিত থাকতেন। মাদক ব্যবসা বন্ধে তিনি জনসচেতনতা সৃষ্টি করছিলেন’।
শ্বশুর বাড়িতে ২ বছরের সন্তান তৃষার ভরণপোষণের খরচ চাইতে গেলে স্বামী ইয়াছিন (২৬) ও ভাসুর মনসুর (৩০) কাঠের টুকরো দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন গৃহবধূ তানজিনা সুলতানা মর্জিনা (২৩)-কে। গত ২ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে বোয়ালখালী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড রায়খালী মিয়ার পুকুর পাড়ের আঙ্গুরার বাপের বাড়িতে এ ঘটনায় ভেঙে যায় ওই গৃহবধূর হাত-পা। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হলে নির্যাতিতাকে দেওয়া হয় থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ।
এর পরের ঘটনা ৯ সেপ্টেম্বরের। উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের পশ্চিম খরণদ্বীপ ১ নম্বর ওয়ার্ডে চলছিল ভাইঝির বিয়ের অনুষ্ঠান। কনের ভাইয়ের পরিচয়ে ওই বিয়েতে যোগ দেয় পটিয়ার রায়হান (২৮) ও চরণদ্বীপের ইমন (২৭) সহ ৪-৫ জন। সেদিন বিকাল চারটার দিকে বর খাবার খেতে স্টেজ থেকে নামলে সেখানে উঠে নানারকম অঙ্গভঙ্গি ও নারীদের কটূক্তি করতে থাকে তারা। এতে বাধা দেন কনের চাচা মো. আলমগীর (৩৪)। তিনি স্টেজ থেকে নেমে অতিথিদের জন্য নিচে রাখা আসনে তাদের বসতে বলেন। এই অপরাধে স্টেজ থেকে নেমেই আলমগীরকে বাইরে এনে বেধড়ক পেটানো হয়।
দুইদিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় সারোয়াতলী ইউনিয়নের ধনার দোকান এলাকার একটি বিল থেকে উদ্ধার করা সরকার কমল দাশের (৬৬) মরদেহ। তিনি বিভিন্ন এলাকায় পুঁথিপাঠ ও কবি গান করতেন, স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘কবিয়াল সরকার কমল’ নামে। বাড়ি ইমামুল্ল্যার চরে।
এ ঘটনায় তাঁর ছেলে অন্তর দাশ বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে বোয়ালখালী থানায় মামলা করেন। এদের মধ্যে সারোয়াতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা তপন চৌধুরী (৩৮) ও রাজীব চৌধুরীকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান বোয়ালখালী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, গ্রেফতার দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কমল দাশকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
মামলায় গ্রেফতার দু’জন ছাড়াও উজ্জ্বল দাশ ও কাজল দাশ নামে পোপাদিয়া ইউনিয়নের ২ আসামি পলাতক। কমল দাশের মেয়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হিসেবে উজ্জ্বলকে তিনি ‘বেয়াই’ হিসেবে সম্বোধন করতেন বলে জানান নিহতের ছেলে অন্তর দাশ।
সর্বশেষ পোপাদিয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী নুরুল আজিম আরেকটি বিয়ে করায় কর্ণফুলী নদীতে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৪ সন্তানের জননী রোকসানা আকতার (৩৫)। ২৯ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কালুরঘাট সেতুর মাঝখান থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি। এ সময় নৌকার মাঝিরা তাঁকে উদ্ধার করলে প্রাণে বেঁচে যান।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান বলেন, অপরাধীরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক শক্তি দিয়ে ভুক্তভোগীকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। ফলে তৈরি হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি। আর্থিক টানাপোড়েন, পরকীয়া, সন্দেহ, মাদক, যৌতুকসহ নানা ধরনের পারিবারিক কলহ বাড়ছে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের যে বন্ধন, তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের সীমারেখা কমিয়ে আনতে পারলে পারিবারিক সহিংসতাও অনেকাংশে কমবে। সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্র থেকে নিলেই হবে না, পরিবার থেকেও এর দায়িত্ব নিতে হবে।